1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি হচ্ছে নতুন ক্রিস্টাল, ব্যাটারি আর গাড়ির ছাঁচ

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এপর্যন্ত ৭০০ ধরনের ক্রিস্টাল বা স্ফটিক গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে - নিউ সায়েন্টিস্ট

একসময় অভিযাত্রীরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তেন আবিষ্কারের জন্য। বর্তমানে মহাকাশের নতুন নতুন তথ্য ও মহাকর্ষীয় বস্তু আবিষ্কারের জন্য পাঠানো হয় বিভিন্ন ধরনের খেয়াযান ও রোবট। এবার আবিষ্কারের দুনিয়াতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গুগল ডিপমাইন্ড এআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন বস্তু আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন রসায়নবিদেরা। সাধারণভাবে আমরা প্রায় ৪৮ হাজার ক্রিস্টাল বা স্ফটিক কাঠামোর কথা জানি। এই তথ্য বিভিন্ন বস্তুর বৈশিষ্ট্য জানতে সহায়তা করে। এখন ডিপমাইন্ডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নেটওয়ার্ক লাখ লাখ সম্ভাব্য বস্তু তৈরির সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে।

নতুন বস্তু তৈরিতে গুগল ডিপমাইন্ডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নেটওয়ার্ক বিপ্লব ঘটাতে পারে। শক্তিশালী ব্যাটারি, সৌর প্যানেল, কম্পিউটারের প্রসেসরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নতুন মাধ্যম হতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।

এ বিষয়ে ডিপমাইন্ডের গবেষক একিন ডগাস কিউবুক বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যেকোনো সময় যে কেউ তাদের প্রযুক্তি উন্নয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে। নতুন বস্তু নকশায় যে এআই মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে তার নাম গ্রাফ নেটওয়ার্কস ফর ম্যাটেরিয়ালস এক্সপ্লোরেশন। সংক্ষেপে যা জিনোম নামে পরিচিত। অজৈব স্ফটিক কাঠামোর পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কাজ করতে পারে এই জিনোম। আমরা জানি বরফের স্ফটিক গঠনের কারণে তুষারকণার ছয় মাত্রিক প্রতিসাম্য দেখা যায়। ৬ মাত্রার প্রতিসাম্য মানে কোন বস্তুকে ছয়বার কিংবা ৬০ ডিগ্রি ও ১২০ ডিগ্রি করে ঘোরালেও একই মনে হয়। জৈব স্ফটিকে কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধন রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪৮ হাজার সম্ভাব্য অজৈব স্ফটিক সম্পর্কে জেনেছি। নতুন এআই মডেলের মাধ্যমে এখন নতুন ২০ লাখেরও বেশি স্ফটিকের খোঁজ পাওয়া গেছে। নতুন কাঠামো কিছু দুর্বল হলেও স্থিতিশীল কাঠামোর খোঁজ মিলছে। এপর্যন্ত ৭০০ ধরনের স্ফটিক গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে।

জিনোম একটি গ্রাফ নিউরাল নেটওয়ার্ক। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেটওয়ার্ক বস্তুর মধ্যে সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করতে পারে। ফলে, নেটওয়ার্কটি পরমাণু ও তাদের রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বলে। এ জন্য গবেষকেরা পরিচিত অজৈব স্ফটিকের বিভিন্ন তথ্য ও তথ্যভান্ডার বিষয়ে এআই নেটওয়ার্ককে প্রশিক্ষণ দেন। সেই প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন উপাদান পরিবর্তন করে কিংবা পরিচিত স্ফটিকের প্রতিসাম্য তৈরি করে নতুন সম্ভাব্য বস্তু ও স্ফটিক তৈরি করতে পারে মডেলটি। নতুন তৈরি স্ফটিক কতটা স্থিতিশীল তার সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে এটি।

গবেষকেরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স সিমুলেশন ব্যবহার করে নতুন বস্তুর স্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে পাওয়া সম্ভাব্য ২০ লাখের বেশি বস্তুর মধ্যে ৪ লাখ হচ্ছে ক্রিস্টাল। এসব ক্রিস্টাল বেশ স্থিতিশীল। কিছু কম স্থিতিশীল স্ফটিক সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছে এআই মডেল। কম স্থিতিশীল স্ফটিক মেটাস্টেবল স্ফটিক হিসাবে পরিচিত। মডেল তৈরির পরে প্রায় ৭০০ টিরও বেশি স্ফটিক তৈরির সম্ভাবনা দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি হিরার মতো লিথিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম স্ফটিক রয়েছে।

নেচার জার্নালে এআইয়ের মাধ্যমে বস্তু তৈরির কৌশল নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ডিপমাইন্ডের তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলের বিজ্ঞানী ইয়ান জেংয়ের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে স্ফটিক সংশ্লেষণ করা হয় বিশেষ একটি রোবোটিক ল্যাবে। গবেষকের ৬০টি স্ফটিক কাঠামো তৈরির সম্ভাবনার কথা জানালেও গবেষণাগারে ৪১টি স্ফটিক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তবে নতুন স্ফটিক বা বস্তু কাঠামোর তৈরির তথ্য ৭০ শতাংশই সঠিক বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্রেম ডে বলেন, ‘এআই মডেল নতুন বস্তু বা উপকরণ আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করবে। নতুন উপকরণ দিয়ে গাড়ির জন্য আরও ভালো কাঠামো, সলিড স্টেট ব্যাটারি ও সৌর প্যানেলের জন্য আরও কার্যকর বস্তু তৈরির সুযোগ পাওয়া যাবে।’ এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডি কুপার বলেন, ‘এআই মডেল নতুন উপকরণ আবিষ্কারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। উপাদান তৈরির বিষয়টি শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, নতুন বস্তুর শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতা সম্পর্কেও জানা গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুর রাসায়নিক কাঠামো বিশ্লেষণ ও গণনা বেশ ব্যয়বহুল। কাঠামো দেখে তথ্য বের করা কঠিন। এখন অনুমান করে নতুন বস্তু তৈরির সুযোগ বাড়ল। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় স্ফটিক বা বস্তুর সন্ধানে নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে।’

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category