1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

এক মুঠো রোদ্দুর – মায়িশা মালিহা অর্থী

  • Update Time : বুধবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
ফাইল ছবি

কোনো এক রমজানের সকালে ঐশি ফেসবুকে স্ক্রোলিং করছে। হুট করে একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে। ঐশী সাধারণত কোন আইডি থেকে মেসেজ আসলে সিন করতে অনেক সময় নেয়। কিন্ত এবার তার ব্যতিক্রম হলো। কেন জানি ঐশী খুব দ্রুত মেসেজটি সিন করল। মেসেজের মালিক মাশরুর রাফিন আলো। ঐশীর মনে পড়ল এই আইডি তার পরিচিত। কিন্তু তেমন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। মাস পাচেঁক আগে কথা হয়েছিল কয়েকদিন। এর পর আর কোনো যোগাযোগ হয় না তার সাথে। ঐশি প্রায় ভুলেই যাই তাকে। হুট করে সেই বন্ধুর মেসেজ দেখে একটু অবাকি হয় সে। যদিও ঐশির তাকে চেনার কথা ছিলো না। ঐশি অনেক মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। সে সবসময় ক্রিয়েটিভ মানুষ খোঁজে তাদের সাথে মিশতে ভালোবাসে।

ম্যাসেঞ্জারে অনেকের সাথেই চ্যাট করলেও কার নাম কি? সেটা সে কখনো খেয়াল করেনা। কিন্তু কোনো এক কারণে মাত্র তিন চারদিন কথা হলেও সেই ফ্রেন্ডের নাম সে খেয়াল করেছিলো। তার নাম আলো। তাই ঐশি আলোকে চিনতে পারে। আর মেসেজ মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞেস করে এ যে এতদিন পর কি ভেবে আমাকে নক করেছো? আমার আইডি কই পেলে? আমার ফ্রেন্ড লিস্টে তো তোমার আর দেখিনি?

আলো বলে বিজি ছিলাম তাই কথা হয়নি। আর পুরোনো চ্যাট লিস্ট দেখতে দেখতে তোমার আইডি পেয়েছি। তখন ঐশি বলে তুমি আমায় ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করেছিলে নাকি?

আলো বলে Sorry friend অন্য একজনকে আনফ্রেন্ড করতে গিয়ে তোমায় আনফ্রেন্ড করে ফেলেছি। আর কখনো এমন করবো না। ঐশি আর কথা বাড়ায় না সে যেহেতু সবার সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলো তাই আবার আলোর সাথে মিশতে শুরু করে। তারপর আসতে আসতে মিশতে মিশতে তারা দুজন একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ওঠে।

এছাড়া ঐশির আরো অনেক ভালো ফ্রেন্ড ছিলো তাদের মধ্যে সে সবশেষ বেশি মিশতো নীলের সাথে। নীল স্বাভয়কিক মানুষের চেয়ে একটু আলাদা ছিলো। সে সহজে কারো সাথে মিশতে পারতো না তাই ও সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতো পশুপাখির সাথে । আর সবচেয়ে বেশি মিশতো কুকুরের সাথে । কারণ তার ধারণা কুকুরে সাথে মিশলে মানুষের মধ্যকার কুকুর টাকে সহজে চেনা যায়।ঐশির মাধ্যমেই আলো আর নীলের মধ্যেও অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এর মাঝে হঠাৎ ঐশি জানতে পারে আলো তাকে ভালোবাসে আর সে আলো চেনার আরো দুই বছর আগে থেকেই সে ঐশিকে চেনে।

ঐশি অবাক হয়ে যায় আর একের পর এক প্রশ্নমালা তার মাথায় ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে সে আলোকে অনেক প্রশ্ন করতে থাকে। কিভবে আমায় চেনো? তোমার পরিচয় কি? তুমি কে? তখন আলো বলে আমি একজন সাইবার সিকিউরিটি অফিসার। তুমি প্রয় দুই বছর ধরে একটা সাইবার প্রবলেমের মধ্যে রয়েছো। তোমার প্রটেক্ট করার দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। ঐশি ভয় পেতে থাকে আর জিজ্ঞেস করে তাহলে আমি এতদিন যা জানতাম সব কি মিথ্যে? কারণ ঐশি আগে জানতো আলো একজন রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার। আলো বলে তুমি যেগুলো জানতে সেগুলো সব সত্যি আর এখন যা জানলে ওগুলোও সব সত্য। আর আমি তোমায় ভালোবাসি ঐশি। দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিয়ো না।

তখন ঐশি বলে তুমি আমাকে কিভাবে ভালোবাসতে পারো আমার সম্পর্কে তো তুমি কিছুই জানো না। তখন আলো বলে আমি প্রয় এক বছরের বেশি তোমায় নিয়ে রিসার্চ করছি আমি জানি তুমি কেমন । তোমার ওপর রিসার্চ করতে করতে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি যদি আমায় একসেপ্ট না করো তাহলে আমার জীবনে কখনো কেউ আসবে না। ঐশি আলোকে বার বার বুঝতে থাকে কিন্তু আলো বুঝতে নারাজ তার ঐশিকেই চাই। তখন ঐশি বারবার বলতে থাকে দেখো তুমি যেমন ভাবছো আমি মোটেই তেমন না।

আমি অনেক রাগী স্বাভাবের, রেগে গেলে আমি কখন কি বলি আমার জনা নেই। আর স্বাধীনচেতা আমি নিজের মতো চলবো তোমার কথা শুনবো না এটা তোমার কি আদোও ভালোলাগবে?আমার সাথে থাকলে আগুনের মতো জ্বলতে হবে তুমি সেটা পারবে না। তখন আলো বলে আমি তোমার জন্য আগুনেও জ্বলতে রাজি, আমি সব সহ্য করবো কিন্তু যেকোনো মুল্যে আমার তোমাকেই চাই! ঐশি বলে আমরা এখন শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েই থাকতে পারি বাকিটা পরে দেখা যাবে আলোও সেটা মেনে নেয়।এবার নীলের কথা বলি সে তো ততদিনে দুজনেরি মিউচুয়াল ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিলো। সে সবসময় চাই আলো ঐশি একসাথে থাকুক একে আপরকে ভালোবাসুক এই কারণে ঐশির অজান্তেই সে আলোকে হেল্প করো ঐশির মাথায় কি চলছে, সে আলোকে নিয়ে কি ভাবছে এগুলো জানতে। আলো ঐশি কখনো ঝামেলা করলে তাদের মধ্যে ঝামেলাও মিটাতো নীল। কিন্তু আগেই বলেছি নীল বেশি ভাগ সময়ি তার পশুপাখিদের সাথে কাটাতো তাই সে সবসময় আলো আর ঐশির সাথে থাকতো না। আলো আর ঐশি জীবন চলছিলো হাসি, আনন্দ, খুনশুটি নিয়ে। আলো সবসময় বলতো হয়তো আমি তোমার জন্য পারফেক্ট জীবন সঙ্গী না কিন্তু সবসময় তোমার রক্ষাকর্তা হয়ে থাকবো। এর মাঝে সময়ের স্বার্থপর করাল গ্রুস নেমে এলো তাদের সন্দর বন্ধুত্বের মাঝে।

আলোর কাজের প্রেসার বাড়তে লাগলো ঐশিও অস্তির হয়ে উঠতে লাগলো। আলো যখন ফ্রি সময় পেত তখনি ঐশির সাথে কথা বলতো আবার দুজনে ঝগড়াও করতো নিজেদের মাঝে। একদিন আলো ঐশিকে বললো সময় খুব স্বার্থপর তাইনা? ঐশি উত্তর দিলো হ্যাঁ। আমি কাজের প্রেসারে তোমার আর আগের মতো সময় দিতে পারি না তুমি হয়তো আমায় ভুল বুঝতেছো (আলো)। আমি তোমায় ভুল বুঝিনি আমি জানি তুমি বিজি থাকো আর আমি তোমায় বিশ্বাস করি। (ঐশি) আলো তখন বলে তাহলে সব ঠিক আছে। আবার আগের মতোই চলতে লাগলো আলো সময় বের করে ঐশির সাথে টাই স্পেন্ড করতো, গল্প করতো। ঐশিকে হ্যাপি রাখার চেষ্টা করতো।কিন্ত এর মাঝে তারা আবার তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু করে যদিও তখন সব ঠিক হয়ে যেতো কিন্তু ঐশি রাগের মাথায় আলোকে আঘাত করে কথা বলে ফেলে।

আলোর অতীন নিয়ে সে একটা কথা বলে। আর আলো এতল খুব কষ্ট পায় কারণ সে সবচেয়ে ঘৃণা করতো তার অতীতকে। এর পর ঐশি সেটা বুঝতে পেরে অনেক কান্নাকাটি করে আলোর কাছে ক্ষমা চায় কিন্তু আলো বলে এটা ক্ষমার অযোগ্য।

কিন্তু ঐশি তো জেদি সে জেদ করতেই থাকে। এক পর্যায়ে আলো বলো আমার একটা শর্ত আছে? (আলো) কি শর্ত ?

ঐশি = তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসো??

আলো = অনেক বেশি।

ঐশি = তাহলে একটা প্রমিস দিতে হবে দিবা?

আলো = বলো

ঐশি = আগে বলো দিবা??

*তুমি যদি বলো তোমায় ছাড়া থাকতে আর নিজের ক্ষতি না করতে তাহলে পারবো না। বাকি সব প্রমিস করতে পারবো। *আমার প্রমিস হলো আমার জন্য তুমি অপেক্ষা করবা যতদিন না আমি আবার আগের আলো হই।

প্রমিস?

ততদিন অনেক ভালো থাকবা কথা দাও। ভেবে নাও তোমার আলোকে হইতো আল্লাহ ফিরাই দিবে ততদিন অপেক্ষা করবা। আমার জন্য হলেও নিজেকে ভালো রাখবা।

*আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি তোমায় ছাড়া এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারি না আর তুমি বলছো ভালো থাকতে?

*ভালোবাসার জন্য এটুকু করতে পারবে না?

*জীবন দিতে পারবো দূরত্ব মানতে পারবো না।

* এই তোমার ভালোবাসা? তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না?

* পারবো যদি তুমি ফিরে না আসো?

*আসবো। বেঁচে থাকলে অবশ্যই আসবো।

*তোমার কিছু হয়েছে?

* এতো কিছু তোমায় জানতে হবে না। শুধু প্রমিস করো আমার জন্য জন্য অপেক্ষা করবে। নাহলে আমি কিন্তু উল্টো পাল্টা কিছু করে বসবো।

*প্লিজ নিজের কিছু করনো না। প্রমিস! আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।

(ঐশি) = এই নাহলে আমার কিউট।(আলো) এভাবেই হয়তো তাদের মাঝে কিছু সময়ের জন্য দূরত্ব চলে আসে। ওদের দুজনের মাঝে এত কিছু হয়েছে নীল সেটা জানতো না। নীল বারবার করে ঐশিকে জিজ্ঞেস করতে থাকে তোমাদের মাঝে কি হয়েছে। তারপর ঐশি নীলকে বুঝিয়ে বলে আর নীলের কাছে প্রমিস করে সে আলোর হাত ধরেই তার সামনে দাড়াবে।

এরপর সময় ধীরে ধীরে বয়ে যাচ্ছে। ঐশি অপেক্ষা করছে আলোর জন্য কবে আলো ঐশির কাছে ফিরবে। আর নীল পথ চেয়ে বসে আছে কবে ঐশি আলোর হাত ধরে তার সামনে দাড়াবে। জানিনা তাদের তিন জনের অপেক্ষা কখন শেষ হবে? বা আদোও হবে কিনা? নাকি অপেক্ষা, ভালোবাসা, মায়া, খুনশুটি, বন্ধুত্ব মিশে যাবে ধুলি হয়ে পৃথিবীর বুকে।

উৎসর্গ, আমার থেকে দূরে সরে যাওয়া সে সকল বন্ধুদের। ভালো থেকো তোমরা। বন্ধুত্ব শুধু একটা শব্দ নয়, শুধু একটা সম্পর্ক নয়, একটা নীরব পৃথিবী। আমি ছিলাম আমি আছি আমি থাকবো। দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায় নাকি অভিমানের দেয়াল তৈরি করে, সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম তোমাদের কাছে!

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category