1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

আঁধার চিরে স্বপ্ন জয়ের পথে প্রণয়

  • Update Time : বুধবার, এপ্রিল ৭, ২০২১

ভোর ৭টায় ক্রাশার মেশিনও যাই, এর লাগি রাইত সকাল সকাল ঘুমাই যাই ভাই, কালকে রাইত ১০টায় যখন আমার ছেলেডায় কইছে মা আমি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছি, আমি পুয়াডারে ধইরা জোরে চিৎকার দিয়া কান্দি, আমার পুয়াডায়ও কান্দে, তার বাপে বুঝায় কাইন্দো না- ওপরওয়ালায় চাইবা আমরার বায়দি, সকাল ৭টায় আমি কামও গেছি, তার বাপ খুশিতে আজকে মাছ ধরাত গেছইন না।

আমার পুয়াডার লাগি আপনারা আশীর্বাদ কইরইন বাবা।’ নিজের ছেলের এমবিবিএস ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আনন্দের কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন পাথর শ্রমিক মনি বর্মণ।

দুই ছেলে ও এক মেয়ের মা মনি বর্মণ। পাথর শ্রমিক স্ব্বামী নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ হাওরে মাছ ধরার কাজ করেন। দু’জনের হাড়ভাঙা শ্রমে চলে চারজনের সংসার। চলে ছেলের পড়াশোনার খরচও। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে প্রণয় বর্মণ এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৩৬ নম্বরে স্থান পাওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ খবর যেন আঁধার চিরে আলোর ঝলকানির মতো।

শিক্ষার্থী প্রণয় বর্মণ জানালেন, রাত ১০টায় মাকে মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর জানালে বিছানা থেকে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অন্যান্য দিন রাত ১০টায় শুয়ে পড়েন তার মা। কিন্তু রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত জেগেছিলেন। প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে ছেলের সাফল্যের কথা জানিয়েছেন।

প্রণয় জানালেন, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর বাবা-মা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারদেনা করে তাকে সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি করান। ওখানে পড়াশোনার সময় তিনি টিউশনি করতে চেয়েছেন, কিন্তু তার বাবা-মা তাকে টিউশনি করতে দেননি। অনেক পরিশ্রম করে মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। খুবই কম খরচ করে সিলেট শহরের মেজরটিলার একটি মেসে থেকেছেন তিনি। নিজের অবস্থার কথা জানানোয়, প্রাইভেট পড়ার সময় কলেজের কোনো শিক্ষকই তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি।

এখন কীভাবে পড়াশোনার খরচ চালাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রণয় বলেন, কোনোভাবে ভর্তি হতে পারলে, টিউশনি করেই খরচ চালাব আমি। আমি বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

সোমবার সন্ধ্যায় মনি বর্মণ এ প্রতিবেদককে বলেন, সেই ভোর বেলা উঠে রান্নাবান্না করে পাথর টানার কাজে গিয়েছি। এখন বাড়ি ফিরেছি। চাল কিনে আনব, এরপর দুই ছেলে ও তাদের বাবার জন্য রান্নাবান্না করব।

এভাবে প্রতিদিনই সংগ্রাম করছেন জানিয়ে বললেন, ক্রাশার মেশিনে কাজ করার সময় একবার মাথায়, একবার নাকে পাথরের আঘাত পেয়েছি। ক্রাশার মেশিনের মালিক এবং অন্যরা ওষুধের টাকা দিয়েছেন। আমার ছেলে ডাক্তার হবে, তা দেখানোর জন্যই ওপরওয়ালা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি কষ্ট সহ্য করব তার সাফল্য দেখার জন্যই।’

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category