বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে পরিণত করতে ও এগিয়ে নিতে হুমায়ূন আহমেদের অবদান অপরিসীম। এককভাবে বইয়ের বাজার সৃষ্টি করে ও প্রকাশনা শিল্পে অর্থপ্রবাহ তৈরির মধ্য দিয়ে এ শিল্পে গতিশীলতা নিয়ে আসেন তিনি। বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি ছিলেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। লাইন ধরে তার ভক্ত-অনুরাগীরা প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফসহ বই সংগ্রহ করতে একরকম যুদ্ধই করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পরও বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই দেদার বিক্রি হয়।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিক। তার লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, লীলাবতী, কবি, সাজঘর, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, শ্রাবণমেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাব যাব, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি। তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের পটভূমিতে লেখা এ উপন্যাসটিও আকাশচুম্বী পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া তিনি রচনা ও পরিচালনা করেছেন বহু একক ও ধারাবাহিক নাটক এবং চলচ্চিত্র।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুতে পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিউইয়র্ক থেকে ২৩ জুলাই দেশে নিয়ে আসা হয় তার মরদেহ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্ব শেষে পরদিন তাকে সমাহিত করা হয় তারই হাতে গড়ে ওঠা নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রায় সব পুরস্কারেই ভূষিত হয়েছেন। একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও তার অর্জিত পুরস্কারগুলোর মধ্যে লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের এনএইচকে টেলিভিশন তাকে নিয়ে ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’ শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ ও প্রচার করে।
নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপন করতে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতের শুক্রবার রাতেই নুহাশ পল্লীতে চলে আসার কথা রয়েছে। সেখানে তার জন্মদিনের কেক কাটা হবে। এ ছাড়া আজ শনিবার পরিবারের পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।