1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

বিজ্ঞান ও কোরআন-হাদিসের আলোকে বজ্রপাত প্রসঙ্গ

  • Update Time : মঙ্গলবার, মে ৪, ২০২১

তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ:  হাফিজুর রহমান সোয়েব

বজ্রপাত কী?

Lightning বা বজ্রপাত বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বুঝায়।

বজ্রপাতের মূল কারণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাঃ

বায়ুমন্ডলের নিচের তুলনায় উপরের অংশের তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, নিচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট পানির কনা থাকে। আর উপরে উঠতে উঠতে পানির পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে পানির পরিমান যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশি হয়, তখন পানির অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পাড়ে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের এর সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি বা ব্রজপাত দেখতে পাই।

বজ্রপাতের  মূল কারণ সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যাখ্যাঃ 

বজ্রপাতের মূল কারণ কী তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহ তাআলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এমনটি করেন না

আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন,

وَيُسَبِّحُ الرَّعدُ بِحَمدِهِ وَالمَلائِكَةُ مِن خيفَتِهِ وَيُرسِلُ الصَّواعِقَ فَيُصيبُ بِها مَن يَشاءُ وَهُم يُجادِلونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَديدُ المِحالِ

বাংলা অনুবাদ:  বজ্রধ্বনি তাঁহার সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘােষণা করে, ফিরিশতাগণও করে তাহার ভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা উহা দ্বারা আঘাত করেন। আর উহারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।

বজ্রপাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ أَرْطَاةَ، عَنْ أَبِي مَطَرٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا سَمِعَ صَوْتَ الرَّعْدِ وَالصَّوَاعِقِ قَالَ ‏ “‏ اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

বাংলা অনুবাদ:  আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন শুনলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার গযব দিয়ে আমাদেরকে মেরে ফেলো না, তোমার শাস্তি দিয়ে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করো না, বরং তার আগেই আমাদেরকে মাফ করে দাও”।

বিশ্লেষণঃ

খোদাদ্রোহিতা, জিনা, ব্যভিচার, পরকীয়া, অন্যায়-অত্যাচার দুনিয়ায় যত বাড়বে, ততই দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বাড়বে। কিন্তু কী করব? আমরা তো অতি আধুনিক হতে গিয়ে আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষ করা শিখে গেছি। নিজেদের জ্ঞানী হিসেবে জাহির করার জন্য রাসুলের বিরোধিতা করতে আমরা ভীষণ পছন্দ করি। (নাউজুবিল্লাহ্!) এককথায় বলতে গেলে ধর্মকে কটাক্ষ করাটা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, এখন খোদাদ্রোহিতার ট্রেন্ড পার করছি আমরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার দাবিদাররাও এই ঘৃণ্য কাজে আত্মনিয়োগ করে ফেলেছেন। একাধিক জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে খবরের কাগজে পাওয়া যায়। পরিশেষে বলা যায় মানুষের কাজকর্মই বজ্রপাতের মূল কারণ।

বজ্রপাত থেকে বাচাঁর উপায়ঃ

দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিন ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো একটি পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে।

উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুন। কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেবেন না। খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।

জানালা থেকে দূরে থাকুন, বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।

ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়।

বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান, বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।

গাড়ির ভেতর থাকলে, বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির কাচেও হাত দেবেন না।

খোলা ও উঁচু জায়গা থেকে সাবধান এমন কোনো স্থানে যাবেন না, যে স্থানে আপনিই উঁচু। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যান। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যান।

পানি থেকে সরুন, বজ্রপাতের সময় আপনি যদি ছোট কোনো পুকুরে সাঁতার কাটেন বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে সরে পড়ুন। পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী।

পরস্পর দূরে থাকুন, কয়েকজন মিলে খোলা কোনো স্থানে থাকাকালীন যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।

নিচু হয়ে বসুন যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ জানুন। আপনার উপরে বা আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে দ্রুত বজ্রপাত হওয়ার প্রস্তুতি নিন।

রবারের বুট পরুন বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।

বাড়ি সুরক্ষিত করুন আপনার বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। এজন্য আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

বজ্রপাতে আহত হলে বজ্রপাতের সময় আশপাশের মানুষের খবর রাখুন। কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখুন।

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category