1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

বাংলা ভাষায় কার অবদান বেশি ? হিন্দু না মুসলমানের ??

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
আমরা যে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, লিখতে পারছি, এর পেছনে কার অবদান বেশি ? হিন্দুদের না মুসলমানদের ?? এই প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আসলে প্রাচীন আমলে বাংলাভাষা ছিলো আঞ্চলিক ভাষার মত, ভাষাটি এত বেশি সমৃদ্ধ ছিলো না যে একটি বিরাট জাতি তা সাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারে। প্রাচীন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার খুব একটা নিদর্শনও পাওয়া যায় না (শুধু চর্যাপদ ছাড়া)। এরপর মধ্যযুগে বাংলাভাষা কৈশরে উপনিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক, সেই ক্ষুদ্র বয়সে হিন্দুরা বাংলাভাষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। হিন্দু সেন রাজত্বের আমলে ব্রাহ্মণরা বলা শুরু করল “সংস্কৃত হচ্ছে দেবভাষা আর বাংলা হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট ভাষা। বাংলা ভাষা মর্যাদায় অনেক নিচু।”
এ সম্পর্কে ইতিহাস বলে- “ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী সেন রাজারা বাংলা ভাষা চর্চা নিষিদ্ধ করেছিল। আর হিন্দু পুরোহিতরা এ কথা বলে বেড়াতো যে, যে ব্যক্তি বাংলা ভাষায় কথা বলবে সে নরকে যাবে। [ সুত্র : খন্দকার কামরুল হুদা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শেখ মুজিব, ১৯৯৫ পৃ. ৩২] “
ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছে। তার ভাষায়, ‘ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গ ভাষাকে হিন্দু পন্ডিত মন্ডলী ‘দূর দূর’ করিয়া তাড়াইয়া দিতেন। (সওগাত, চৈত্র, ১৩৩৫)
অপরদিকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলা দেশে মুসলিম রাজত্ব কায়েমের ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজন্ম ঘটে। মুসলমান শাসক হুসেন শাহ, গৌড়ের সামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ এবং অপরাপর মুসলমান সম্রাটেরা বাংলাদেশে বাংলা ভাষাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের সাহিত্যে এক নতুন যুগ সৃষ্টি করেছিলেন। আর সে কারণেই দিনেশ চন্দ্র সেন মন্তব্য করে, “মুসলমান সম্রাটগণ বর্তমান বঙ্গ – সাহিত্যের জন্মদাতা এইরূপ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। বঙ্গ সাহিত্য মুসলমানদেরই সৃষ্ট, বঙ্গভাষা বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা। [ সুত্র : দীনেশ চন্দ্র সেন – প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান, (১৯৪০) কলকাতা।]”
দীনেশ চন্দ্র সেন আরো বলে- ‘কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া হীরা যেমন জহুরির আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভেতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবুরির অপেক্ষা করিয়া থাকে, বাংলা ভাষা তেমনই কোনো শুভদিন শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলিম বিজয় বাংলা ভাষার সেই শুভদিন শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল।’ [দ্রষ্টব্য : বাংলা ভাষার ওপর মুসলমানের প্রভাব : শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন]।
বিশিষ্ট গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান“বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতির ইতিহাস” গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন, “যদি বাংলায় মুসলিম বিজয় ত্বরান্বিত না হতো এবং এদেশে আরো কয়েক শতকের জন্য পূ্র্বের শাসন অব্যাহত থাকতো, তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত এবং অবহেলিত ও বিস্মৃত-প্রায় হয়ে অতীতের গর্ভে নিমজ্জিত হতো।
“বাংলা হলো মুসলমানদের প্রানের ভাষা – আর এ কারণেই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৯০৩ সালে “আল ইসলাম” পত্রিকায় সর্বপ্রথম বাংলাকে মুসলমানদের মাতৃভাষা রূপে তুলে ধরেন। [ সুত্র : ড. ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক ইত্তেফাক, সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩]” আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৩২৫ বঙ্গাব্দে – ‘আল-ইসলামে’ প্রকাশ্যে নির্ভীকচিত্তে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দেন যে, ‘বাঙলা বাঙালী মুসলিমের কেবল মাতৃভাষাই নয়, জাতীয় ভাষাও।’
উপরের আলোচনা দ্বারা এটি স্পষ্ট- হিন্দুরা চেয়েছিলো বাংলা ভাষাকে জন্মলগ্নেই গলা টিপে হত্যা করতে, সেখানে মুসলমানরা বাংলাভাষাকে দিয়েছিলো পুনর্জন্ম। সে হিসেবে বাংলা ভাষায় কার অবদান বেশি, হিন্দু না মুসলমানের, এ ধরনের প্রশ্ন করা অবান্তরই বলা চলে।

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category