March 29, 2024, 6:09 am
প্রোটনের আবিষ্কারক
কবি নজরুল বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর…’। মানুষ বলুন আর প্রাণী বলুন সমলিঙ্গ দিয়ে পৃথিবীকে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরিয়ে তোলা যেত না। জীবের, প্রাণীদের লিঙ্গের রকমফের থাকে। তাই বলে জড় পদর্থেরও। দুশো বছর আগেই ফ্যারাডে বলেছিলেন আয়নের কথা। তখন ইলেকট্রন নামের মূল কণিকার খবর জানতেন না বিজ্ঞানীরা। জানতেন আধান বা চার্জের কথা। জানতেন, পরমাণুর কথাও। কিন্তু কোনো প্রমাণ ছিল না তাঁদের হাতে। তবুও এক জাতের পদার্থের সাথে আরেক জাতের পদার্থ একটা বিশেষ অনুপাতে মিশিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে জানতেন বিজ্ঞানীরা। তাই তাদের জানতে হয়েছিল আধানযুক্ত পরমাণুর কথা। ফ্যারাডে বলেছিলেন পরমাণু থেকে একটি ঋণাত্মক আধান সরিয়ে নিলে সেটা ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। আবার পরমাণুতে একটি ঋণাত্মক আয়ন যোগ করলে ঋণাত্মক আয়ন পাওয়া যায়।
ইলেকট্রন আবিষ্কারের পর যখন জে জে টমসন[1] এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামালেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, ক্যাথোড দণ্ড থেকে যে ইলেকট্রন কণাগুলি ক্যাথোড রশ্মি আকারে নির্গত হয়, সেগুলি পরমাণুর ভেতর থেকে আসে। কিন্তু একটা স্বতন্ত্র হাইড্রোজেন পরমাণু চার্জ নিরপেক্ষ। শুধু হাইড্রোজেন পরমাণু কেন তখন যত রকম পদার্থের কথা জানতেন বিজ্ঞানীরা সবগুলো চার্জ নিরপেক্ষ। এইযে পরমাণুদের চার্জ নিরপেক্ষতা, সেটা কীভাবে সম্ভব, যদি না এর ভেতরে কোন ধনাত্মক কণা থাকে? টমসন ঠিকই অনুমান করেছিলেন। পরমাণুর ভেতর থাকে ধনাত্মক কণাও এবং এদের পরিমাণ ইলেকট্রনের সমান। অর্থাৎ ঠিক যে পরিমাণ ইলেকট্রন একটা পরমাণুতে থাকে, ধনাত্মক কণাও থাকে সমপরিমাণে। এ কথা ভেবেই পরমাণুর পুডিং-কিসমিস মডেল দাঁড় করিয়েছিলেন টমসন।
একই রকম ভাবছিলেন ফিলিপ লেনার্ডও। তাঁর যুক্তি সরল- ক্যাথোড টিউবে ক্যাথোড দণ্ড থেকে নির্গত হয় ইলেকট্রনের স্রোত, অ্যানোড এর অভিমুখে; তাহলে অ্যানোড থেকেও ধনাত্মক কণাদের একটা স্রোত ক্যাথোড দণ্ডের দিকে যাওয়া উচিত। তার সাথে একমত ছিলেন টমসনও।
জে জে টমসন পরমাণুকে নিরেট গোলক বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু লেনার্ড ১৯০৩ সালে একটা পরীক্ষা চালান। দেখেন, খুব পাতলা ধাতব পাত ভেদ করে চলে যাচ্ছে ক্যাথোড রশ্মি অর্থাৎ ইলেকট্রনের স্রোত। তার মানে কি?
ধাতব পাত পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণুগুলো যদি গায়ে গায়ে লেগে থাকে তাহলে তাদের ভেতর ইলেকট্রন বেরিয়ে যাওয়ার মতো কোন ফাঁক থাকার কথা নয়। তাহলে কেন বেরিয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রনগুলো। নিশ্চয়ই পরমাণুর ভেতরেই ফাঁক আছে। সেই ফাঁক দিয়েই ইলেকট্রনেরা বেরিয়ে যেতে পারছে অনেকটা বিনা বাধায়। তখন লেনার্ড আরও বললেন, টমসনের ধারণা ঠিক নয়। পরমাণু নয় পুডিংয়ের ভিতরে গাদাগাদি করে থাকা কিসমিসের মতো ইলেকট্রনের আর ধনাত্মক কণার সমাবেশ। নিশ্চয়ই ধনাত্মক কণাগুলো আর ইলেকট্রনে মধ্যে বেশ ফাঁকা জায়গা আছে। লেনার্ড তখন নতুন একটা পরমাণু মডেল পেশ করলেন। সেই মডেলে পরমাণুগুলোর ভেতরে ধনাত্মক কণা আর ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় থাকে এবং এরা পরস্পর পরস্পরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে মাত্র এক জোড়া ধনাত্মক কণা ও ঋণাত্মক ইলেকট্রন। অন্য মৌলগুলোর ক্ষেত্রে পরমাণুর ভেতর একাধিক ইলেকট্রন আর ধনাত্মক কণার জোড়া থাকে একাধিক।
এজন্যই লেনার্ড ভাবলেন আলোক-তড়িৎক্রিয়ায় শুধু ইলেকট্রনই বা কেন আলোর আঘাতে ছিটকে বেরিয়ে আসবে, ধনাত্মক কণাও তো বেরিয়ে আসা উচিত। তাই যদি হয়, ধনাত্মক কণার একটা স্রোত অ্যানোড থেকে ক্যাথোডের দিকে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যানোড থেকে ধনাত্মক কণার কোন স্রোত বিজ্ঞানীরা অনেক খুজেও আবিষ্কার করতে পারলেন না। লেনার্ডের পরমাণু মডেলও তাই টেকসই হলো না বেশিদিন। ধনাত্মক কণার স্রোত কেন পাওয়া যায় না, তার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করার চেষ্টা করলেন বিজ্ঞানীরা। নানা জনের নানা মত এল। তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত হলেন, নিশ্চয়ই ধনাত্মক কণার আচরণ-প্রকৃতি ইলেকট্রনের চেয়ে আলাদা। তখন জাপানি বিজ্ঞানী হান্তারও নাগাওয়াকাও একটা সমাধানে আসার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, পরমাণুর গঠন টমসনের মডেলের মত নয় আবার লেনার্ড মডেলের মতোও নয়। পরমাণু আসলে অনেকটা সৌরজগতের মতো। এর কেন্দ্রে আছে ধনাত্মক চার্জযুক্ত কণিকাগুলো। সেগুলো একেবারে গাদাগাদি করে থাকে। তার বাইরে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। সেই ফাঁকা জায়গায় কক্ষপথ রচনা করে ধনাত্মক কণাদের কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে ইলেকট্রনগুলো। এটাই আসলে প্রথম সোলার সিস্টেম অ্যাটম মডেল।
টমসনের পরমাণু মডেল (বাঁয়ে) এবং নাগাওয়াকার মডেল। ছবি সোস : http://cdn-cms.f-static.net
নাগাওয়াকার এই মডেলটি বেশ চলনসই। এখানে পরমাণুর দুটো চরিত্রের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। একটা হলো, এর ভেতর ইলেকট্রনগুলো ধনাত্মক কণার থেকে অনেক দূরে থাকে। এজন্য খুব সহজেই ধাতব পরমাণু ভেতর দিয়ে ক্যাথোড রশ্মি বেরিয়ে যেতে পারে। সঙ্গে আরেকটা সমস্যার সমাধান হলো। আলোক-তড়িৎক্রিয়াই যে ইলেকট্রন মুক্ত হয় আলোর আঘাতে, তার কারণ ইলেকট্রনগুলো গাদাগাদি করে থাকে না। এজন্য খুব সহজেই আলোর কণা তাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারে। কিন্তু ধনাত্মক কণাগুলো পরমাণুর কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকে বলেই তাদের ধাক্কা দিয়ে বের করা অতটা সহজ নয়।
নাগাওয়াকার মডেলের যুক্তি আছে, কিন্তু প্রমাণ তো নেই; সেটা অনুমাননির্ভর। সুতরাং পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কে করবে পরীক্ষা?
নাগাওয়াকা নিজেই করতে পারতেন? কিন্তু অন্যদিকে টমসনের ছাত্র রাদারফোর্ড পরমাণু নিয়ে আরও সূক্ষ্ম গবেষণা করছিলেন। বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিয়ে তার কারবার। তিনি এই রশ্মি ব্যবহার করলেন পরমাণুর ভেতরেও খবর বের করে নিয়ে আসার জন্য।
ততোদিনে বিজ্ঞানীরা জেনে গেছেন তেজস্ক্রিয় পরমাণু থেকে বিকিরিত হয় তিন ধরনের কণা। আলফা, বেটা ও গামা। এর মধ্যে বেটা রশ্মি আসলে ইলেকট্রন কণার স্রোত। আর আলফা কণা স্রোত ধনাত্মক কণা দিয়ে তৈরি।
আলফা কণা নিয়ে একটু বেশিই নাড়াচাড়া করলেন আর্নেস্ট রাদারফোর্ড। চৌম্বক ক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে এই রশ্মি চালিয়ে দেখলেন, এর চার্জ ধনাত্মক প্রকৃতির। আর প্রতিটা আলফা কণার ভর ইলেকট্রনের চেয়ে ৭৩৪৪ গুণ ভারি।
এই আলফাকণা ব্যবহার করেই পরমাণুর ভেতরের খবর অনুসন্ধানের কথা ভাবলেন রাদারফোর্ড। এজন্য তিনি করলেন সেই বিখ্যাত স্বর্ণপাতের পরীক্ষা।
জে জে টমসন আর ফিলিপ লেনার্ড অ্যানোড থেকে নির্গত হওয়া ধনাত্মক কনার সত্যের সন্ধান করছিলেন ইলেকট্রন আবিষ্কারের পর। কিন্তু তারও আগে সেই হাজার ১৮৮৬ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ইউগেন গোল্ডস্টাইন আরেক ধরনের কণা দেখতে পেয়েছিলেন ক্যাথোড টিউবের ভেতর। এজন্য অবশ্য তাকে একটু খাটনি করতে হয়েছিল। ক্যাথোড টিউবের ভেতর যে ক্যাথোড দন্ড থাকে সেটাকে তিনি অন্যভাবে সাজিয়েছিলেন। ব্যবহার করেছিলেন ছিদ্রযুক্ত ক্যাথোড পাত। এই পাতটা স্থাপন করা হলো ক্যাথোড টিউবের মাঝখান বরাবর। তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলো অ্যানোড ও ক্যাথোডে। এর ফলে ক্যাথোড থেকে উৎপন্ন হওয়া ক্যাথোড রশ্মি অ্যানোডের দিকে প্রবাহিত হয়।
গোল্ডস্টাইন লক্ষ্য করলেন ক্যাথোড থেকে আরেক ধরনের রশ্মি নির্গত হচ্ছে। সেটা প্রবাহিত হচ্ছে ক্যাথোড রশ্মির উল্টো দিকে। গোল্ডস্টাইন এই রশ্মির নাম দিলেন ক্যানাল রশ্মি। তিনি নিশ্চিত হলেন এই রশ্মি আসলে ধনাত্মক প্রকৃতির।
কীভাবে নিশ্চিত হলেন তিনি?
কারণ ক্যাথোড রশ্মি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। তাই সে ধনাত্মক বিদ্যুৎযুক্ত অ্যানোডের দিকে আকর্ষিত হয়। আর নতুন রশ্মি যেহেতু অ্যানোডের উল্টো দিকে যাচ্ছে, তার মানে অ্যানোড পাত এদেরকে বিকর্ষণ করছে। তাই উল্টোদিকে প্রবাহিত হচ্ছে ক্যানাল রশ্মি।
ফরাসী বিজ্ঞানী জ্যাঁ ব্যাপিস্ট প্যাঁরা করলেন আরেকটি পরীক্ষা। ১৮৯৫ সালে। তিনি ক্যানার রশ্মির গমন পথে এক এটা ধারক বস্তু রাখলেন। সেটা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন, ক্যানাল রশ্মি বস্তুটাকে ধনাত্মক চার্জে চার্জিত করেছে। অর্থাৎ গোল্ডস্টাইনের কথাই ঠিক। ক্যানাল রশ্মিতে প্রবাহিত কণাগুলির আধানের প্রকৃতি ধনাত্মক। বছর তিনেক পরে জার্মান বিজ্ঞানী ভিলহেম ভিন আরেকটু বিস্তারিত পরীক্ষা করলেন। ক্যানাল রশ্মিকে প্রবাহিত করলেন বিদ্যুৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে। এর ফলে ক্যানাল রশ্মিতে থাকা কণাগুলির ভর সম্পর্কেও আইডিয়া পেলেন। ভিন দেখলেন, এই কণাগুলি ভর ইলেকট্রনের চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় পরমাণুদের সমান। কিন্তু কোনো একটা নির্দিষ্ট পরামাণুর মতো নয়।
শতভাগ বায়ুশূন্য কোনো ক্যাথোড টিউব তৈরি করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করেও। কিছু গ্যাস টিউবের ভেতর রয়েই যেত। আর সেই অবশিষ্ট গ্যাসটুকুই সাপে বর হলো ক্যানাল রশ্মির গবেষণায়। ভিন নিশ্চিত হলেন, যে টিউবে হাইড্রোজেন গ্যাস থাকে, সেই টিউবের ক্যানাল কণাদের ভর পাওয়া গেল হাইড্রোজেনের ভরের সমান। আর যে টিউবে অক্সিজেন থাকে সেই টিউবের ক্যানাল কণাদের ভর পাওয়া গেল অক্সিজেন পরামাণুর ভরের সমান।
হিসাবটা কেমন একটু গোলমেলে না? ক্যাথোড রশ্মিতে ইলেকট্রন পাওয়া গিয়েছিল, তার প্রতিটার ভর সমান। কিন্তু ক্যানাল রশ্মিতে থাকা কণারা তেমন নয় কেন?
নিশ্চয়ই যে ধনাত্মক মৌলিক কণা খোঁজা হচ্ছিল, এটা সেই কণা নয়। এমনও হতে পারে এরা অনেকগুলো কণা দিয়ে তৈরি!
১৯০৩ সালে একটা আশার আলো দেখালেন রাদারফোর্ড। তিনি শুধু ক্যাথোড টিউবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেন না। বাইরেও করলেন ধনাত্মক কণাদের খোঁজ। তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিয়ে তখন এন্তার গবেষণা করছেন তিনি। একদিন তিনি বুঝে ফেললেন, যে আলফা রশ্মি নির্গত হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে, তাঁর সঙ্গে ক্যানাল রশ্মির কণাগুলোর অনেক মিল।
কেন?
তার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেন রাদারফোর্ড। আলফা কণা নিয়ে তিনি বিস্তর গবেষণা করলেন, তারপর ১৯০৮ সালে এসে একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এলেন। এই আলফা কণা আসলে হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস! কীভাবে এই সিদ্ধান্তে এলেন তিনি?
আলফা কণার ভর মেপে। রাদারফোর্ড দেখলেন, আলফা কণার ভর হিলিয়াম পরমাণুর সমান। ততদিনে ইলেকট্রন আবিষ্কার হয়ে গেছে, জানা গেছে এদের ভর। রাদারফোর্ড দেখলেন, আলফা কণারা ধনাত্মক চার্জযুক্ত, আবার এদের ভর হিলিয়াম পরামাণুর ভরের প্রায় সমান। অর্থাৎ হিলিয়াম পরমাণু থেকে ইলেকট্রন সরিয়ে নিলে এরা ধনাত্মক চার্জযুক্ত হবে। হিলিয়াম পরমাণুর ভরের চেয়ে আলফা কণার ভর যে সামান্য কম, সেটা ওই ইলেকট্রনের ঘাটতির জন্য।
এই সিদ্ধান্তে আসার জন্য রাদারফোর্ডকে একটা পরীক্ষা করতে হয়েছিল। এজন্য অবশ্য তাঁকেও কাচনল ব্যবহার করতে হয়েছিল। তবে ক্যাথোড নলের মতো নয় তাঁর এই কাচনল। আসলে দুই দেয়ালের একটা টিউব। মানে একটা টিউবের ভেতর আরেকটা টিউব আরকি? দুই দেয়ালের মাঝখানের অংশ বায়ুশূন্য। আর বাইরের দেয়ালটি অনেক পুরু। রাদারফোর্ড সেই টিউবের মধ্যে একটা তেজস্ক্রিয় পদার্থ রাখলেন। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে যেসব আলফা কণা বিকিরিত হলো সেগুলো টিউবের প্রথম দেয়াল পার হতে পারল সহজেই। কিন্তু বাইরের দেয়ালটি পুরু, তাই সেটা ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারল না ভারী আলফা কণারা। পর্যাপ্ত পরিমাণে আলফা কণা টিউবের দুই দেয়ালের মধ্যে জমা হলো। প্রথমবারের মতো কাজে লাগানোর জন্য আলফা কণা জমা করতে সক্ষম হলেন কোন বিজ্ঞানী। তারপর সেই আলফা কণা পরীক্ষা করে রাদারফোর্ড নিশ্চিত হলেন এগুলো আসলে হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস। নিশ্চয়ই এর ভেতরে সেই মৌলিক ধনাত্মক কণাটি আছে!
১৯১১ সালে রাদারফোর্ড করলেন স্বর্ণপাত পরীক্ষা। তারপরেই নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেল পরামাণুর নিউক্লিয়াস সম্পর্কে। কিন্তু রাদারফোর্ড খুঁজছিলেন একটা মৌলিক কণা, যার চার্জ হবে ধনাত্মক এবং ভর আর আকার হবে ইলেকট্রনের সমান। কিন্তু অনেক খুঁজেও তিনি এমন কোনো কণার হদিস পেলেন না। তবে গবষণা বন্ধ রইল না। ১৯১৪-১৯১৭ সাল এই তিন বছর অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন রাদারফোর্ড। দেখলেন হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসের চেয়ে হালকা ধনাত্মক কণা আর নেই। এর চার্জ ধনাত্মক, কিন্তু ইলেকট্রনের সমান। তবে ভর অনেক বেশি- ইলেকট্রনের ভরের ১৮৩৬ গুণ। ১৯১৯ সালে এটা নিয়ে বিস্তারিত একটা গবেষণাপত্র লিখলেন রাদারফোর্ড, সেদিন থেকেই ধনাত্মক কণার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। ১৯২০ সালে তিনি এর নাম দিলেন প্রোটন। গ্রিক এই শব্দটির অর্থ ইংরেজিতে বলে frist বা প্রথম।
রাদারফোর্ডের স্বর্ণ পাত মডেল। ছবি সূত্র : Home – tec-science (Home – tec-science)
পরে দেখা গেলো সব পরমাণুর নিউক্লিয়াসেই এই প্রোটন কণা রয়েছে। যে পরমাণুতে যতগুলো ইলেকট্রন থাকে, ঠিক ততগুলো প্রোটন থাকে এদের নিউক্লিয়াসে। তাই সমান সংখ্যক ধনাত্মক আর ঋণাত্মক কণা একে ওপরের চার্জ প্রশমিত করে দেয়। এজন্য স্বভাবিক পরমাণুগুলো চার্জ নিরপেক্ষ।
লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা (Abdul Gaffar Rony)