1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

খাদ্য সংকটে পড়বে বাংলাদেশ – সিপিডি

  • Update Time : শুক্রবার, অক্টোবর ২১, ২০২২

দেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যম যুগান্তরের প্রতিবেদনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মূল্যায়নে সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে খাদ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইতোমধ্যে দেশের মানুষ খাবার কমিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার অর্থনীতির ওপর এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ফাও’য়ের রিপোর্ট বলছে দুর্ভিক্ষ আসছে। বিষয়টি আসলে সত্য। কারণ একদিকে সংকট, অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি আবহাওয়া ভিন্নরূপ হিসাবে বন্যা, খরা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদনে জ্বালানি ও সার ব্যবহার করা হয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে শুধু পণ্য সরবরাহে সমস্যা হয়নি, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে এখন বহুমুখী সংকট রয়েছে, তাই বহুমুখী নীতিমালাও প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয় এ বিষয়টির সঙ্গে জড়িত। সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকা দরকার।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি চাকরিজীবী বা অন্য পেশার লোকজনকেও এ কমিটিতে রাখা উচিত। ‘সরকার ওএমএসসহ যেসব পণ্য দিয়েছে, তা সারা দেশে সহজলভ্য করতে হবে। এখানে দুর্নীতি যেন না হয়, সেটা অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, নিম্নআয়ের মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে হবে। একেবারেই দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যবস্থা করা দরকার।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মূল্যস্ফীতির লাগামহীন অবস্থা। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমদানি পণ্য নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্যর দামও বেশি। এটা কমার কোনো লক্ষণ নেই। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দুটি কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে বাজারের চিত্রে দেখা যায় সরকারি হিসারের চেয়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য আরও বেশি। ফলে প্রকৃত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা উচিত।

‘করোনার সময় থেকে জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। দেশে বেশিরভাগ পণ্য ও সেবায় দক্ষিণ এশিয়ার গড় দামের চেয়েও বেশি। এমনকি অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলংকার চেয়ে বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আধা কেজি পাউরুটির দাম ৬২ টাকা, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। এ দাম পাকিস্তানে ৪৫ টাকা, ভারত ও নেপালে ৪৮ টাকা, এমনকি শ্রীলংকাতেও ৫০ টাকা, যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গরুর মাংসের গড় মূল্য কেজিপ্রতি ৬৮৪ টাকা, যেখানে বিশ্বে গরুর মাংসের গড় দাম ৫৪৯ টাকা। পাকিস্তানে এক কেজি গরুর মাংস ৩৭৫ টাকা, ভারতে ৫৮০ টাকা, নেপালে ৪৬৫ টাকা এবং শ্রীলংকায়ও ৫৪৫ টাকা।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকায় যারা বসবাস করছেন, তাদের খাদ্যপণ্যের তালিকার ১৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় ৪ সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যপণ্যসহ সার্বিক খরচ ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ২২ হাজার ৪২১ টাকা।

অন্যদিকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে কমপ্রোমাইজড ডায়েট বা আপসের খাদ্য তালিকা হিসাবে ৪ সদস্যের পরিবারের ন্যূনতম খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৯ টাকায়। যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার ৫৪১ টাকা।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সাধারণত ৬০ দিনের জ্বালানি মজুত রাখা হয়। কিন্তু আমাদের ডিজেল ৬১ দিন, অকটেন ১৯ দশমিক ৬ দিন, পেট্রোল ৩৮ দশমিক ৪ দিন, ফার্নেস অয়েল ২৭ দশমিক ৯ দিনের মজুত আছে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, টাকা একদম নেই বিষয়টা তেমন নয়। বিপিসির হাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা আছে। তাই জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা উচিত। জ্বালানি তেলের ঘাটতি মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এখন ৩৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে এটা প্রকৃত রিজার্ভ নয়। কারণ এর থেকে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যয় বাবদ বাদ দিতে হবে। এটি বাদ দিলে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ফলে এই রিজার্ভ দিয়ে আমদানি ব্যয় কীভাবে মেটানো কঠিন। কারণ সামনের দিনে ডলার-সংকটে খাদ্য আমদানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

বর্তমানে ডলার বাজারের যে অবস্থা, সরকার কি খাদ্য আমদানি করবে নাকি অন্য খরচ মেটাবে, এটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আইএফএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু সেখানে যে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সরকার।

সুপারিশ : পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিপিডির প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের আমদানিতে কর রেয়াত। এতে দাম কিছুটা কমবে। এছাড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এককভাবে বা কয়েকজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ভেঙে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। অন্যদিকে আয় কমে যাওয়ার কারণে জীবনযাত্রায় ধস নেমেছে।

ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া খাদ্য-সংকটের আশঙ্কার কারণে উৎপাদন বাড়াতে হবে। সারের উচ্চমূল্যের কারণে এ খাতে দিতে হবে ভর্তুকি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।

সূত্র : যুগান্তর

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category