বৃন্দাবন চন্দ্র দাস (১৮৫০-১৯৩২) জন্মস্থান- বিথঙ্গল, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।
• বৃন্দাবন চন্দ্র দাস,পিতা মৃত বিষ্ণু চন্দ্র দাস, মাতা মহামায়া দাসের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। বিষ্ণু চন্দ্র দাস পেশায় ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক,গ্রাম বিথঙ্গল।জন্ম স্থান বিথঙ্গল গ্রামের বড় আখড়া সংলগ্ন পশ্চিমের বাড়ী যা উনার পিতামহের বাড়ী।পেশা মিরাশদারী, মহাজনী, মহালদারী ও ব্যবসা (শেয়ার হোল্ডার চিত্ত রঞ্জন কটন মিলস,শেয়ার হোল্ডার অল ইন্ডিয়া সুগার মিলস লিঃ সহ অন্যান্য ব্যবসায় জড়িত ছিলেন । জন্ম ১৮৫০ ইং ভাদ্র মাস, মৃত্যু ১৯৩৩ ইং ভাদ্র মাস,শিক্ষাগত যোগ্যতা তৎকালীন পঞ্চম শ্রেনী পাশ।মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ সৎ মিতব্যয়ী শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ।তিনি খুবই সাধারন জীবন যাপন করতেন এবং অন্যান্য জমিদারদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম জীবনযাপন করতেন, যার মধ্যে ছিল গরীবদের প্রতি ঊনার সেবামূলক মনোভাব, অত্যাচারী জমিদারদের এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতার প্রমান তাঁর জীবনীতে পাওয়া যায়।তিনি ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত উপাধি গ্রহন করলেও নিজ নামের সঙ্গে এ সকল উপাধি যুক্ত করেন নি যেমন চৌধুরি রায় সাহেব এবং ব্যাংকার্স উপাধি তারা উনার নামের পূর্বে এবং পরে যুক্ত করলেও তিনি তা কখনও নিজে লিখেন নাই। তিনি একজন সাধারন কৃষকের সন্তান হিসাবেই জীবনযাপন করতেন,তিনি সবসময় জমিদারদের নিষ্পত্তি জমি নিলামে ক্রয় করে তালুকের পরিমাণ বৃদ্ধি করতেন। এইভাবে তিনি ৫৬টি তালুকের মালিক ছিলেন।
১৯১৩ সালে কয়েকজন ব্যক্তি পরিত্যক্ত মনোহর বাজারে (বর্তমান কলেজ কোয়ার্টার )হবিগঞ্জ কলেজ নামে বাঁশের তৈরী একটি ঘর ও ছোট্ট একটি পাকা ঘর নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু করেন। তখন কোন কলেজ প্রতিষ্ঠা বা স্বীকৃতি পেতে হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্তির জন্য দশ হাজার রুপির তহবিল দেখাতে হত।তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠার বছর খানেকের মধ্যেই আর্থিক সমস্যার কারণে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।তখনকার কলেজ পরিচালনা কমিটির অনেক চেষ্টায় ও আহবানে হবিগঞ্জ জেলায় অনেক ধনী লোকদের অবস্থান সত্তেও যখন কেউ সারা না দেওয়াতে কলেজ কমিটির অন্যতম সদস্য বাবু গিরীন্দ্র নন্দন চৌধুরী ও বাবু নদীয়া চন্দ্র দাস পুরাকায়স্থ এর অনুরোধে বৃন্দাবন দাস এগিয়ে এলেন।বৃন্দাবন দাস তাঁর মায়ের অনুমতি নিয়ে দশ হাজার রুপি তৎকালীন হবিগঞ্জ কলেজে দান করেন।বৃন্দাবন চন্দ্র দাসের অর্থের জন্যই কলেজটি রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়।কলেজটি পরিচালনার জন্য উনি নিজস্ব ১৪/১৫ হাল জমিও দান করেন।তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মায়ের নামে কলেজটির নামকরণ হোক।কিন্তু তাঁর মায়ের ইচ্ছাতেই পরবর্তীতে এ কলেজটির নাম বৃন্দাবন দাসের নামানুসারে নামকরণ হয়।
কলকাতা রিপন কলেজের দর্শনের অধ্যাপক মিঃ বিপিন বিহারী দে প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন।আসাম লোকাল বোর্ডের সদস্য সুনেন্দ্র লাল দাস চৌধুরী, এ্যাডঃ বিনোদ লাল রায় সহ কলেজের পরিচালনা কমিটি তাঁর নামানুসারে নাম রাখেন বৃন্দাবন কলেজ।১৯৩১ সালে তৎকালিন হবিগঞ্জ মহকুমায় স্থাপিত সেই কলেজটি আজ সিলেট বিভাগের মধ্যে একটি নামকরা কলেজ।
ব্রিটিশ শাসনামলে শুরু হওয়া কলেজটিতে প্রথমে কেবলমাত্র উচ্চমাধ্যমিক পর্য্যায়ে মানবিক বিভাগে পাঠদান শুরু হয় ,১৯৩৩ সালে কলেজের ১ম ব্যাচের ছাত্ররা আই, এ পরীক্ষা দিলে ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র দিতে রাজী হননি। পরীক্ষা হয় সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ কেন্দ্রে।প্রথম ব্যাচের ৩১ জনের সবাই পাশ করলে ভাল ফলাফলের জন্য ১৯৩৪ থেকে আই,এ পরীক্ষার কেন্দ্র উক্ত কলেজে স্থাপিত হয়। ১৯৩৯-৪০ শিক্ষাবর্ষে বিএ(পাস) এবং ১৯৪০-৪১ শিক্ষাবর্ষে কয়েকটি বিষয়ে বিএ (অনার্স) কোর্স চালু করে।১৯৭৯ সালের ৭ মে, তৎকালীন সরকার কলেজটি জাতীয়করণ করেন এবং নাম হয় বৃন্দাবন সরকারী কলেজ।
১৯৯৮ সালে কলেজটি অনার্স কোর্স পাঠদানের পুনঃঅনুমতি পায়। বর্তমানে বৃন্দাবন সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল বিভাগ, স্নাতক (পাস), বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি,পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান,প্রাণি বিদ্যা, গণিত, হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। ২০০৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাববিজ্ঞান, এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে।