June 8, 2023, 11:55 am
সয়াবিন তেল নিয়ে অনেকটাই বিব্রত সরকার। আমদানিনির্ভর পণ্যটির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। ফলে দেশীয় বাজারে এর দাম নিয়ে সারা বছরই অস্বস্তিতে থাকতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় ২ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল, তিশি উল্লেখযোগ্য। আমদানির মধ্যে সয়াবিন ও পামই বেশি। এর মধ্যে আবার বেশি আমদানি হয় পাম তেল। যদিও এর সঙ্গে একমত নন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা। তাদের ভাষ্য, চাহিদার ১৮ লাখ টন ভোজ্যতেলের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন সয়াবিন তেল আমদানি হয় ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনা থেকে।
বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। এ দাম আরও বাড়াতে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার চলছে আমদানিকারকদের। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের মতো প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়েছে।
এসব কারণেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে সয়াবিন উৎপাদনে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেলবীজ ফসল। বর্তমানে বাংলাদেশে যা সয়াবিন উৎপাদিত হয় তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। তাই বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা উন্নত জাত উদ্ভাবনের চেষ্টার অংশ হিসেবে সয়াবিনের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাতের নাম ‘বিনা সয়াবিন-২’। বাণিজ্যিকভাবে সারা বছর চাষাবাদের জন্য এটাকে ছাড়পত্র দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।
এ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এর প্রধান উদ্ভাবক উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, ‘গাছটির উচ্চতা রবি মৌসুমে ২৭-৪০ সেন্টিমিটার এবং খরিফ-২ মৌসুমে ৩৫-৪২ সেন্টিমিটার হয়। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫টি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৪০-৫০টি। বীজ মাঝারি আকারের হয়। ১০০ বীজের ওজন ১৩ গ্রামের মতো হয়। বীজে আমিষ, তেল এবং শর্করার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৩, ১৯ এবং ২৬ শতাংশ।’
তিনি আরও জানান, ‘রবি এবং খরিফ-২ মৌসুমে এ জাতের জীবনকাল ১১৫ এবং ১১৭ দিন। এ দুই মৌসুমে প্রতি হেক্টরে যথাক্রমে ২.৫-২.৮ এবং ২.৭-৩.৩ টন ফলন পাওয়া যায়।’
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) নোয়াখালী অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্তত ৩৩ জেলার ৭২টি উপজেলায় তিন থেকে চার লাখ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হচ্ছে। এখান থেকে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। যার শতকরা ৬০ ভাগই হয় লক্ষ্মীপুরে।