সেনা কর্মকর্তা হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন যাঁদের, তাঁদের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ কিছু পরামর্শ । যারা দেশের সেবায় নিয়োজিত হয়ে, দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চান, তাদের জন্য কিছু দরকারি তথ্য। দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সচ্ছল জীবন ও আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আত্ম নিয়োগ করে।
সৈনিক হতে চাইলে যেসকল সামরিক মেডিকেল পদ্ধতি:

ওজন ও উচ্চতা

চোঁখ

কান

নাক ও এর ভেতরের সাইনাস।

পলিপাস বা নাকের ভেতরে বারতি মাংস আছে কি না।

নক নি ( দুই হাটুর মাঝের মাংসপেশি।

ফ্ল্যাট ফিট।

বুকের সংকোচন ও প্রসারন

মুখে অতিরিক্ত দাঁত থাকা

পাইলস ইত্যাদি।
এখন,আমরা উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো এক এক করে বিস্তারিত আলোচনা করবো ও কিভাবে একজন ক্যান্ডিডেট নিজেকে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে শারীরিক সক্ষমতা বারাতে পারে তাও আলোচনা করবো।
উচ্চতা ও তা অনুযায়ী ওজন।
বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে খুবই কড়াকড়ি চলছে,আগে কোন ক্যান্ডিডেট এর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন যদি কিছু কম বা বেশি হতো তা প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ করে দেয়া হতো কিন্তু ফাইনাল মেডিকেল এর আগে তা কমিয়ে বা বাড়িয়ে ফেলতে হতো।কিন্তু বর্তমানে আর এমনভানে উত্তীর্ণ হবার আর সুযোগ নেই কারন এই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ট্রেনিং করার সময় অনেক ক্যাডেট ইঞ্জুরিতে পড়ে, সেটি একজন ক্যাডেট জন্য যেমন কষ্ট ঠিক অথরিটির জন্য ঝামেলার।
তাই এখনে আমাদের কাজ হচ্ছে একজন সচেতন
ক্যান্ডিডেট হিসেবে নিজেকে একদম শুরু থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে গড়ে তোলা।
এক্ষেত্রে আপনাকে আগে নেট থেকে বা যেকোনো সাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এ্যাপস বা কোন ডাক্তার এর কাছ থেকে আপনাকে BMI চার্ট সংগ্রহ করে নিজের উচ্চতা অনুযায়ী কতটুকু ওজন থাকা জরুরি তা জেনে নিতে হবে।
যদি উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি হয় তাহলে বিভিন্নভাবে আপনি এই অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন।
যেমন : ডায়েট করে,খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে,বাহিরের খাবার পরিত্যাগ করে,ফাস্টফুড,কোমল পানিয়,তৈলাক্ত খাবার,মিস্টি,চিনি যুক্ত খাবার ইত্যাদি ত্যাগ করলে সহজেই আপনি আপনার ওজন নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।
এছাড়া আপনি ভাত এর বদলে গম এর আটার রুটি খেতে পারেন সাথে বেশি করে শাক-সবজি, ফল-মুল,বিভিন্ন ধরনের বাদাম,তিসি,মিস্টি কুমড়ার বিচি ভাজা ইত্যাদি খেতে পারেন,তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি খাওয়া,আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে।
এছাড়া আপনি প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ১-২ ঘন্টা হাটতে পারেন ও হাল্কা পাতলা ফ্রি- হ্যানড এক্সারসাইজ করতে পারেন।
আশা করি এভাবে আপনার বারতি ওজন সহজেই কমে যাবে।
মাথায় কাটা দাগ ।
মাথায় বড় ও গভীর কাটা দাগ থাকলে অনেক সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযােগ্য ঘােষণা করা হয় । কারণ মাথায় এ ধরনের বড় ও গভীর কাটা দাগ থাকলে এহেন আঘাতের কারণে মাথার ভেতরে কোনাে স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে কি না , তা নিরূপণ করা দুষ্কর । কারও এমন সমস্যা থাকলে তার উচিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এই দাগ মােচনের চেষ্টা করা
চুল ওঠা
অসুস্থতাজনিত কারণে কারও কারও কম বয়সেই চুল উঠতে শুরু করে বা চুল ঝরে যায় । এই রােগকে ‘ এলােপেশিয়া ‘ বলে । এই রােগে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হলে তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযােগ্য বিবেচনা করা হতে পারে । তাই কারও যদি এই রােগ থেকে থাকে , তবে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগেই এ রােগের চিকিৎসা করে আসা উচিত । কান ফুটা বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে শিশু অবস্থায় বিভিন্ন কুসংস্কারবশত ছেলেদের কান ফুটা করে দেওয়া হয় । সেনাবাহিনীতে এমন কান ফুটা প্রার্থীদের নেওয়া হয় না । এ ক্ষেত্রে ভালাে শল্যচিকিৎসকের কাছ থেকে অপারেশন করে এই ফুটা বন্ধ করিয়ে নেওয়াই সমীচীন ।
ঠোটকাটা ও কানকাটা
কারও কারও জন্মগতভাবে ওপরের বা নিচের ঠোট কাটা থাকে , আবার কারও জন্মগতভাবে বা দুর্ঘটনাবশত কান কাটা থাকে । এ ধরনের প্রার্থীকে সাধারণত স্বাস্থ্যগতভাবে উপযুক্ত বিবেচনা করা হয় না ।
চোঁখ।
এটিকেও খুব ভালভাবে দেখা হয়ে থাকে,
তিনটি বাহিনীতেই এটি খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়ে থাকে।
আপনারা যারা জিডি পাইলট হতে চান আপনাদেরকে অবশ্যই খালি চোখে দূরে বোর্ডে থাকা লেখা গুলো কোন সমস্যা ছাড়া পড়ে শোনাতে হবে।
এছাড়া বাকি ক্যান্ডিডেটদেরকেও এভাবে যেতে হবে এই প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে তবে এখানে চশমা সহও এখানে আসা যাবে যদি গ্লাস এর পাওয়ার ২.৫০ এর বেশি না হয়।
আর যদি বেশি হয়েই থাকে তবুও পরিক্ষা দেয়া যাবে তবে এক্ষেত্রে আপনাকে চোখে ল্যাসিক করিয়ে নিতে পারেন।
কান।
সাধারণত কানে আপনার কোন সমস্যা আছে কি না তা দেখবেন।
মূলত কান এর পর্দা ঠিক আছে কি না,
কানে আপনি ঠিকমতো শুনতে পান কি না,কানে কোন আঘাত পেয়েছিলেন কি না,
কানে কোন ব্যাথা বা কান পাকার সমস্যা আছে কি না তা দেখবেন।এক্ষেত্রে আপনার কাজ হবে নিয়মিত কান পরিষ্কার করা,কানে পানি যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা,কানে বেশি ময়লা জমলে বা কানে ব্যাথা থাকলে দেরি না করে ভাল ডাক্তার দেখানো ও কান এর নিয়মিত যত্ন নেয়া।
কান এর যত্নে আপনি বেশি উচ্চ শব্দে গান না শুনা,হেড ফোন কম ব্যবহার করা ও
প্রয়োজন ব্যতীত কানে কোন সুক্ষ্ম কিছু দিয়ে বার বার না খোচানো কারন এতে কানের পর্দাতে আঘাত লেগে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
নাক ও এর বিভিন্ন সমস্যা।
নাকে খুব কম মানুষেরই সমস্যা থেকে থাকে।যে সকল সমস্যা সাধারণত হয়ে থাকে তা হচ্ছে নাকের ভেতর বারতি মাংস থাকা যা পলিপাস নামে জানা হয়ে থাকে অথবা নাকের হাড় বাঁকা থাকা।
এই দুইটি সমস্যাই যদি থেকে থাকে তাহলে ছোট অপারেশন এর মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
আর সমস্যা না থাকলে তা এড়াতে বেশি সময় ধরে গোসল না করা,ঠান্ডা জাতীয় খাবার পরিহার করা ইত্যাদি।এভাবেই আপনি শারিরীকভাবে হয়ে উঠবেন আরও সুঠাম ও নিরোগ।
হাঁটু লেগে যাওয়া বা নক নি।
দুই হাঁটুর মাঝে অতিরিক্ত ফাঁক থাকা ( বােয়িং ) দুই পায়ের গােড়ালি একসাথে লাগিয়ে সােজা হয়ে দাঁড়ানাের পর যদি কারও দুই পায়ের হাঁটুর ভেতরের অংশ লেগে যায় তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে নক নি ‘ । স্বাভাবিক প্রার্থীদের এমন অবস্থায় দুই হাঁটুর ভেতরের অংশের মধ্যে কিছুটা ফাঁক থাকে । কিন্তু ‘ নক নি ” সমস্যাগ্রস্ত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই ফাঁক থাকে না । আবার অনেকের পা হাঁটুর পর থেকে বাইরের দিকে বেঁকে থাকে । সমস্যাকে বলে বােয়িং ‘ । এ – জাতীয় সমস্যা যাদের বেশি । থাকে তারা সাধারণত দৌড়াদৌড়িতে দুর্বল হয়ে থাকে । তাই গুরুতর নক নি ও বােয়িং নক নি ও বােয়িং সমস্যাগ্রস্ত প্রার্থীদের সেনাবাহিনীতে নেওয়া হয় না । যাদের ‘ নক নি ’ সমস্যা বেশি তাদের নিয়মিত দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ রেখে ওঠাবসার অনুশীলন করতে হবে । এর পাশাপাশি গােড়ালি মেলানাে অবস্থায় দাঁড়ানাের সময় হাঁটুর ভেতরের অংশ না লাগিয়ে দাঁড়ানাের অভ্যাস করতে হবে ।
শিরা ফোলা ( ভেরিকস ভেইন )
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে অথবা দৌড়াদৌড়ি করলে কারও কারও পায়ের হাঁটুর পেছনের অংশে রগ ফুলে ওঠে । কারও কারও ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশ প্রকট এবং এর ফলে তাদের দাড়িয়ে থাকতে বা দৌড়াদৌড়িতে সমস্যা হয় । তাই মাত্রাতিরিক্ত ভেরিকস ভেইন সমস্যাগ্রস্ত প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপযুক্ত করা হয় । এ সমস্যার জন্য একজন ভালাে শল্যচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে । অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রার্থীরা সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে ।
বুকের সংকোচন ও প্রসারণঃ
অনেকেই এই বিষয়টিকে একদম ভুলে যান।তবে সামরিক বাহিনিতে যোগদানের জন্য এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আসলে কি এই বুকর সংকোচন ও প্রসারণ?এটি হচ্ছে যে আপনি শ্বাস না নেয়া অবস্থায় আপনার বুকের মাপ নেয়া হবে এবং শ্বাস নেবার সময় শ্বাস নেবার ফলে বুক প্রসারিত হয়ে কমপক্ষে ২ ইঞ্চি স্ফীত হতে হবে।অনেকেই হয়তো কম সাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকেন বা যাদের এমন হয় না তাদের নিয়মিতভাবে সাতার কাটতে হবে।কারন একমাত্র সাতার কাটার মাধ্যমেই এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব হয়ে থাকে।
ফ্ল্যাট ফিট বা পায়ের তালু সমান থাকা
আমাদের সবারই পায়ের তালুর মাঝে একটা হাল্কা কার্ভ অংশ আছে।তবে অনেকেরই এটি থাকে না এটি জন্মগতভাবে হয়ে থাকে এর ডাক্তারি চিকিৎসা আমার জানা মতে এখনাে নেই । এটি থাকলে ডিফেন্স ক্যান্ডিডেটকে বাদ দেয়া হয়ে থাকে , কারন এই কার্ভ না থাকলে ক্যাডেট বা কোন ডিফেন্স সদস্য বেশি দূর দৌড়াতে পারে না । তবে সবসময় ventilator shoes (2/3মাস ) ব্যাবহার করা।এটি করলে সমস্যা সমাধান হবে।
পায়ের তালু ছিদ্র বা ক্ষয়ঃ
খালি পায়ে চলাফেরার কারণে অনেকের পায়ের তালু ছিদ্র ছিদ্র হয়ে ক্ষয়ে যায় । একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘ পিটেড ফুট ‘ । নিয়মিত জুতা পায়ে দিলেই এই রােগ অনেকাংশেই সেরে যায় । এ ছাড়া রাতে ঘুমানাের আগে পায়ের তালু ভালােভাবে ধুয়ে তেল ভ্যাসলিন লাগিয়ে ঘুমালেও এ সমস্যা দ্রুত সেরে যায় ।
মুখে অতিরিক্ত দাঁত থাকা।
এই বিষয়টি সাধারণত প্রাথমিক মেডিকেলে ধরা হয় না তবে ফাইনাল মেডিকেলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
তাই আপনার উচিত হবে আগে থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।
দাতঁ আঁকাবাঁকা হলেও আপনার উচিত আগে থেকে এতে দৃষ্টি দেয়া ও তা ঠিক করে নেয়া।
পাইলস ও হার্নিয়া।
এই দুটির যে কোন একটি থাকলেই আপনার উচিত যত দ্রুত সম্ভব এর যথাযথ চিকিৎসা নেয়া ও তা সারিয়ে তোলা।কারন কারো এই দুটি থাকলে তারা ফাইনাল মেডিকেল থেকেতো বাদ যাবেনই এমনকি প্রাথমিক মেডিকেল থেকেও বাদ যেতে পারেন।তাই দেরি না করে সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধান করে ফেলুন। মলদ্বারে রােগ অনেকের মলদ্বারে মাংস ঝুলে পড়ে , আবার অনেকের পায়ুপথের পাশে ছিদ্র হয় । উভয় ক্ষেত্রে এমন প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয় ।এসব রােগকে পাইলস ও হেমােরয়েড বলে । পাইলস ও হেমােরয়েড রােগের বিভিন্ন স্তর আছে । কারও প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে তাকে প্রথম ডিগ্রি হেমােরয়েড বলে , তৃতীয় ডিগ্রি হেমােরয়েড হলে অপারেশন ছাড়া রােগী সুস্থ হয় না । এমন প্রার্থীকে অবশ্যই চিকিৎসা করিয়ে তারপর ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা উচিত ।
পেনিশ / অন্ডকোশ যৌনরােগ ।
যেকোনাে প্রকার যৌনরােগে আক্রান্ত প্রার্থীকে ডিফেন্স স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাদ দেওয়া হয় । তাই প্রত্যেক প্রার্থীর উচিত ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে অন্যত্র একবার একজন চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ।
বড় অস্ত্রোপচার
প্রার্থীর দেহে বড় অস্ত্রোপচারের দাগ থাকলে সেই অস্ত্রোপচারের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে রিক্রুটিং মেডিকেল অফিসার কখনাে কখনাে প্রার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযােগ্য বিবেচিত করতে পারেন ।
শরীরের ফাটা দাগ।
ত্বকে বা শরীরের চামড়ায় ফাটা দাগ জনিত সমস্যা বা স্ট্রেচ মার্কের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন এবং শরীরের ত্বকের বিভিন্ন অংশে এই ফাটা দাগ গুলো দেখা যায়। অনেকের মতে এই সমস্যা বাড়তি ওজনের জন্য হয়। শরীরের আয়তন যখন বেড়ে যায়, ত্বক তখন স্ট্রেচ করে বাড়তি আয়তনকে ঢাকতে। ফলে তৈরি হয় এই দাগ। এটি ত্বকের উপরে দৃশ্যমান লাইনের মত দেখা দেয়।
শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন- পেটের প্রাচীর, কোমর, হাত, ঘাড়, হাটুর পেছনে, উরু এমনকি বুকেও দেখা যায়। স্থুলতা তো অবশ্যই, সাথে গর্ভ ধারণের মত শারীরিক ধকল এবং শরীরে পানি ঘাটতির কারণেও হতে পারে এ ধরনের সমস্যা। কিন্তু আমাদের ত্বকের এই ফাটা দাগ দূর করা এখন আর অসম্ভব কোনো কাজ না। চলুন তাহলে জেনে নেই কীভাবে এই সমস্যা থেকে আমাদের ত্বককে দাগহীন ও সতেজ রাখতে পারি। প্রথমে ডাক্তারের পড়ামর্শ নিন।
এক. প্রতিদিন তিন বার ফাটা স্থানের উপর ডিমের সাদা অংশ ৫-১০ মিনিটের জন্য ম্যাসেজ করুন। যতদিন দাগটি নির্মূল না হয় ততদিন এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করবেন।
দুই. ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করুন। দিনে তিনবার ফাটা দাগের উপর ম্যাসেজ করুন। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম না পেলে সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টটি দিনে ৩ বার খেতে হবে।
তিন. শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলে লেবুর একটি টুকরা নিয়ে দাগের উপর ১৫ মিনিট ধরে ম্যাসেজ করুন। এতে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
চার. গ্লাইকলিক অ্যাসিডযুক্ত বিভিন্ন বিউটি পণ্য যেমন টোনার, ক্লিনজার ও ময়শ্চারাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করুন। এই অ্যাসিড ফাটা দাগ নির্মূলে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
পাঁচ. ফাটা দাগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরণের তেল মিশিয়ে দাগের উপর প্রতিদিন ১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন। উপকার পাওয়া যাবে।
ছয়. চিনি, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে তা প্রতিদিন ফাটা দাগের উপর প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন।
সাত. ঘৃতকুমারির পাতা নিয়ে এর ভেতর থেকে জেলী সদৃশ অংশটি বের করে দাগের উপরে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আট.প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, ডিমের সাদা অংশ, দই, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, তরমুজের বীজ খাবেন। এগুলো আপনার ত্বককে জলযোয়িত রাখবে। শরীরের ফাটা দাগ নির্মূলে সহায়তা করবে।
চর্মরােগ ।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার শুরুতেই যদি কোনাে প্রার্থীর শরীরে ঘা , খােসপাঁচড়া , চুলকানি , ছুলি , শ্বেতিরােগ , কুষ্ঠ অথবা অন্য কোনাে চর্মরােগ চোখে পড়ে , তবে তা প্রার্থীর বাদ পড়ার কারণ হতে পারে । অত্যধিক ব্রণ , খুশকি অথবা হাতে – পায়ে চামড়া ওঠার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে । তাই এরকম কোনাে অসুখ থাকলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগেই তা উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে নিতে হবে ।
শরীরে উল্কি ট্যাটু ও কাটা দাগ ।
অনেকে শখ করে শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকায় । এই উল্কি বা ট্যাটু যদি অমােচনীয় কালির হয় তবে সেই প্রার্থীকে নেওয়া হয় না । আবার কেউ হাত কেটে বিভিন্ন নাম বা অক্ষর লেখে , অনেকে আবার আবেগের বশবর্তী হয়ে ব্লেড দিয়ে হাত কাটে । সেনাবাহিনীতে দরকার মানসিকভাবে দৃঢ় প্রার্থী । যারা আবেগের বশে নিজের হাত ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কাটে , তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে । এদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাদ দেওয়া হয় । অতএব উল্কি অথবা কাটা দাগ থাকলে পরীক্ষার আগেই তা চর্ম বিশেষজ্ঞের সহায়তায় ভালাে করে নেওয়া উচিত ।
হাত ঘামা
নার্ভাস হলে অনেকেরই হাত ঘামে , আত্মবিশ্বাসহীনতার কারণেও এমন হয় । এমন হাত ঘামা স্বাভাবিক । কিন্তু কারও কারও হাত এত বেশি ঘামে যে পরীক্ষার খাতা ভিজে যায় । এটা এক ধরনের অসুখ । সাধারণত ভালাে চর্ম বিশেষজ্ঞের চিকিৎসায় এ রােগ ভালাে হয়ে যায় । অনেকের রক্তে থাইরয়েড হরমােনজনিত সমস্যায় হাত ঘামে । তাদের অনতিবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে ।
নখ ও আঙুলের ফাঁকে ঘা থাকা।
হাত ও পায়ের নখের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে । হাত বা পায়ের নখ ফাটা থাকলে , উপড়ানাে থাকলে অথবা নখে পচন ধরলে প্রার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপযুক্ত ধরা হয় না । এজন্য পিন দিয়ে নখ খোঁচানাে অথবা ব্লেড দিয়ে নখের কোনা কাটা উচিত না । নখ কাটার জন্য সব সময় নেইল কাটার ব্যবহার করা উচিত । মাঝে মাঝে গােসলের সময় পুরােনাে দাঁতের ব্রাশে সাবান মাখিয়ে নখ পরিষ্কার করলে নখ ভালাে থাকে । নখের কোনায় পুঁজ হলে বা ব্যথা থাকলে ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা করিয়ে নিতে হবে । সাধারণত দীর্ঘ সময় পা ভেজা থাকলে অথবা যাদের অতিরিক্ত পা ঘামে তারা অপরিষ্কার জুতা – মােজা ব্যবহার করলে পায়ের আঙুলের ফাঁকে এক ধরনের ঘা হয় , একে বলে ‘ ফুট রট ‘ । সেনাবাহিনীতে ‘ ফুট রট ’ অত্যন্ত গর্হিত রােগ । তাই যাদের এই অসুখ আছে , তাদের উচিত ভর্তি পরীক্ষার আগে এই রােগের চিকিৎসা করানাে ।

এছাড়া যদি আপনার শরীরে বড় কোন অপারেশন হয়ে থাকেন যেমন : হার্ট,কিডনি,পাকস্থলী, ফুসফুসের কোন বড় ধরনের সমস্যা বা অপারেশন হয়ে থাকে তাহলেও আপনি বাদ যেতে পারেন।
উপরে উল্লেখিত সমস্যা গুলো থাকলে আপনার উচিত হবে তা সমাধান করা এবং যদি তা না থাকে তাহলে আপনার উচিত হবে —
১..নিয়মিত হাটা
২..পরিমিতভাবে খাবার গ্রহন করা
৩..সাতার কাটা
৪..পুশ আপ দেয়া
৫..হাল্কা পাতলা শারিরীক ব্যায়াম করা ও
নিজের সুস্থতা বজায় রাখা।