March 23, 2023, 5:31 pm
হঠাৎ ১৭ হাজার ২৮২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মাসিক ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ভাতা বন্ধের আগে তাঁদের কাউকেই বিষয়টি জানানো হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) কর্মকর্তারা বলছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাইয়ে যাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন এসেছে, তাঁদের ভাতার তালিকা থেকে আপাতত বাদ দেওয়া হয়েছে।
মূলত ২০০১-০৯ সালের মধ্যে যাঁদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, তাঁদের একটি অংশের ব্যাংক হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসের ভাতা যায়নি। উল্লেখ্য, ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। এরপর প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে যাচাই–বাছাইয়ের পর যাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হননি, তাঁদের ভাতার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রমাণের জন্য তাঁরা যেসব সনদ ও প্রমাণক জমা দিয়েছিলেন, তার কোনো কোনোটায় সমস্যা আছে। এখন তাঁদের আপিল করতে হবে জামুকায়। তবে কেউ যদি সঠিক তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেন তাহলে আপিল ছাড়াও তাঁর ভাতা আবার চালু হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই ও তালিকা প্রণয়নের কাজটি জামুকার মাধ্যমে হয়। তবে জামুকা আইন ২০০২ সালে হলেও ২০১০ সালের আগে জামুকার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বর্তমানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং ২ হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা মনে করেন, ১৭ হাজার ২৮২ জনের মধ্যে সবার নাম যাচাই-বাছাইয়ে হয়তো বাদ পড়েনি। সফটওয়্যারের কারিগরি ত্রুটির কারণেও অনেকে বাদ পড়তে পারেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কারও নাম গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণকের প্রয়োজন। এর মধ্যে জামুকার সুপারিশ অন্যতম। গত ফেব্রুয়ারি মাসে যাঁদের ব্যাংক হিসাবে ভাতা যায়নি, তাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৭৬ জন রয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। তবে গত বছর যাচাই-বাছাই শেষে ৬৩ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নিয়মিতকরণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করা যাবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও ভাতা এভাবে বারবার বাদ দিয়ে আবার যুক্ত করে অসম্মান করা হচ্ছে। যাঁদের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে, তাঁরা যদি যৌক্তিক কাগজপত্র দেখাতে পারেন, তাঁদের আবেদন অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। তবে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাঁদের নাম বিভিন্ন সময় সরকারি গেজেটে এসেছে, সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের পর যদি দেখা যায় তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত নন, তাহলে ভাতা বাতিল করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা থাকবে—এটি জাতি আশা করে।