November 30, 2023, 3:46 am
সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে প্রাক-আর্য বা অনার্য জনগোষ্ঠী এবং আর্য জনগোষ্ঠী এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী মূলত i) নেগ্রিটো ii) অস্ট্রিক iii) দ্রাবিড় iv) ভোটচীনীয় এই চারটি শাখায় বিভক্ত ছিল। নিগ্রোদের মত দেহযুক্ত এক আদিম জাতি এদেশে বসবাস করত। এরাই ছিল সাওতাল, মুণ্ডা প্রভৃতি উপজাতির পূর্বপুরুষ। অস্ট্রিক জাতি থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়। কেউ কেউ তাদের ‘নিষাদ জাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইন্দোচীন থেকে আসাম হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে অস্ট্রিক জাতি নেগ্রিটোদের উৎখাত করে। অস্ট্রিক জাতির সমকালে বা কিছু পূর্বে দ্রাবিড় জাতি এদেশে আসে এবং সভ্যতায় উন্নততর বলে তাঁরা অস্ট্রিক জাতিকে গ্রাস করে। অস্ট্রিক-দ্রাবিড় জাতির সাথে মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয় জাতীর সংমিশ্রণ ঘটে। বাংলাদেশে আর্যকরণের পরেই এদের আগমন ঘটে বলে বাঙ্গালির রক্তে এদের মিশ্রণ উল্লেখযোগ্য নয়। গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা ইত্যাদি এই গোষ্ঠীভূক্ত। অস্ট্রিক-দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মিশ্রণে যে জাতির প্রবাহ চলছিল, তার সাথে আর্য জাতি এসে সংযুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছে বাঙালি জাতি।
আর্যদের আদিনিবাস ছিল ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে বর্তমান মধ্য এশিয়া-ইরানে। ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে। সম্ভবত খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে বা তার কিছু আগে আর্যরা বাংলায় আসতে শুরু করে। আর্যরা সনাতন ধর্মালম্বী ছিল। তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম ছিল বেদ। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর দিকে সেমীয় গোত্রের আরবীয়রা ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতির সঙ্গে সংমিশ্রিত হয়। তাদের অনুকরণে নেগ্রিটো রক্তবাহী হাবশিরাও এদেশে আসে। এমনিভাবে অন্তত দেড় হাজার বছরের অনুশীলন, গ্রহণ, বর্জন এবং রূপান্তরিতকরণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়ে উঠে। নৃতাত্তি¡কভাবে বাংলাদেশের মানুষ প্রধানত আদি-অস্ট্রেলিয়া (Proto-Australian) নরগোষ্ঠীভূক্ত।
√সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠী বিভক্ত – দুই ভাগে (প্রাক-আর্য বা অনার্য ও আর্য নরগোষ্ঠী)।
√ আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী মূলত বিভক্ত – চার ভাগে: নেগ্রিটো, অষ্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয়)।
√ আর্যদের আগমনের পূর্বে এ দেশে বসবাস ছিল – অনার্যদের।
√ নেগ্রিটোদের উৎখাত করে – অস্ট্রিক জাতি।
√ বাংলাদেশের প্রাচীন জাতি – দ্রাবিড়।
√ বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে – অস্ট্রিক জাতি থেকে।
√ বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে – অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও আর্য জাতির সংমিশ্রণে।
√সর্বপ্রথম দেশবাচক শব্দ ‘বাংলা’ যে গ্রন্থে ব্যবহৃত হয় – আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে।
√ বৈদিক যুগ বলে – আর্য যুগকে।
√ আর্য সংস্কৃতি সমধিক বিকাশ লাভ করে-পাল শাসনামলে।
√ আর্যদের আদি নিবাস-ইউরাল পর্বতের দক্ষিণে কিরঘিজ তৃণভূমি অঞ্চলে এবং বর্তমান মধ্য এশিয়া- ইরান।
√ আর্যদের ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ।
√ বাংলার আদিম অধিবাসী হলো-অনার্য ভাষাভাসী শবর, পুলিন্দ, হাড়ি, ডোম, চণ্ডাল প্রভৃতি সম্প্রদায়।
√ আর্যদের প্রভাব স্থাপনের পরে বঙ্গদেশে যে জাতির আগমন হয় মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয় জাতির।
√ বর্তমান বাঙালি জাতির পরিচয়- সংকর জাতি হিসেবে।
√ আর্যগণ প্রথম উপমহাদেশে আগমন করে সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ বা ১৫০০ অব্দে।
√ আর্যজাতি ভারতে প্রবেশ করার পর প্রথমে বসতি স্থাপন করে সিন্ধু বিধৌত অঞ্চলে।