1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

বাংলা নাটকের উৎপত্তি ও উল্লেখযোগ্য নাট্যকার: বাংলা সাহিত্য

  • Update Time : শনিবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

 

 নাক:

কলকাতায় প্রথম রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৫৩ সালে “প্লে হাউজ” নামে। হেরাসিম লেবেদফ নামে একজন রুশ দেশীয় ভদ্রলোক এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘দি ডিসগাইস’ নাটক অনুবাদ করেছিলেন।

বাংলা নাটকের সূত্রপাত হয় ১৮৫২ খ্রি. তারাচরণ সিকদারের ‘ভদ্রার্জুন’ যোগেন্দ্রচন্দ্র গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’, নাটকের মাধ্যমে। এগুলো ছিল পৌরাণিক নাটক। ‘ভদ্রার্জুন’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাটক। 

বাংলা মৌলিক নাটকের যাত্রা শুরু হয় রামনারায়ণ তর্করতেœর হাত ধরে। তাঁর প্রথম সামাজিক নাটক ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’।

গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচনা করেন ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজউদ্দৌলা’। তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ বিয়োগান্ত নাটক ‘প্রফুল্ল’।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত:

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা নাটকের পথিকৃৎ। তিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক নাট্যকার। তাঁর প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯)। বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক ট্রাজেডিধর্মী নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১) এর নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এটি ঐতিহাসিক নাটক। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘পদ্মাবতী’ নাটকে (১৮৬০) অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রয়োগ করেছেন। এটি গ্রিক পৌরাণিক গ্রন্থের আলোকে রচিত। 

মধুসূদন রচিত প্রহসনদ্বয়ের নাম ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৪৯), ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৫৯)। তাঁর রচিত অসমাপ্ত নাটক ‘রিজিয়া’। এটি সুলতানা রিজিয়ার বীরত্বপূর্ণ কাহিনী অবলম্বনে ইংরেজি ভাষায় রচিত একটি অসম্পূর্ণ নাটক। 

 গিরিস চন্দ্র ঘোষ(১৮৪৪-১৯১২):

সাহিত্যাঙ্গনে নট, নাট্যকার ও রঙ্গালয় পরিচালক হিসেবে পরিচিত। গীতিনাটকে ব্যবহৃত তাঁর উদ্ভাবিত ছন্দই ‘গৈরিশছন্দ’ নামে পরিচিত। 

 উল্লেখযোগ্য নাটক:

পৌরাণিক নাটক: রাবণবধ (১২৮৮), অভিমন্যুবধ (১২৮৮), সীতার বনবাস (১২৮৮), ল²ণ বর্জন

(১৮৮২), রামের বনবাস (১৮৮২), সীতাহরণ (১৮৮২), পান্ডবের অজ্ঞাতবাস (১২৮৯), জনা (১৮৯৪)।

ঐতিহাসিক নাটক :  ‘সিরাজদ্দৌলা’ (১৯০৬), ‘মীর কাশিম’ (১৯০৬), ‘ছত্রপতি শিবাজী’ (১৯০৭)।

সামাজিক নাটক : ‘প্রফুল্ল’ (১৮৮৬), ‘হারানিধি’ (১৮৯০), ‘বলিদান’। 

চরিত নাটক : চৈতন্যলীলা (১৮৮৬), বিল্বমঙ্গল ঠাকুর, শঙ্করাচার্য (১৯১০)।

রোমান্টিক নাটক : মুকুলমুঞ্জরা (১২৯৯), আবু হোসেন (১৩০৩)।

 

মীর মশাররফ হোসেন:(১৮৪৭-১৯১১)

বসন্তকুমারী, জমিদার দর্পণ, বেহুলা গীতাভিনয়। 

১.বসন্তকুমারী (১৮৭৩) :

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১১) রচিত ‘বসন্তকুমারী নাটক’ লেখকের প্রথম নাটক এবং তৃতীয় গ্রন্থ। এটি ১৮৭৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বসন্তকুমারী নাটক বাংলা সাহিত্যে মুসলমান নাট্যকার কর্তৃক রচিত প্রথম সার্থক নাটক। 

বৈশিষ্ট্য : এটি প্রচলিত লোককাহিনীর উপাদানে সমৃদ্ধ নাটক। যুবতী-বিমাতার যুবক-সতীনপুত্রের প্রতি সমাজনিষিদ্ধ আকর্ষণ, প্রত্যাখ্যান এবং প্রত্যাখ্যাত চিত্রের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বিমাতার নিষ্ঠুরতা নাটকের কাহিনী। নাটকের পরিসমাপ্তি বিয়োগান্তক। তিন অঙ্কবিশিষ্ট ও এগারো দৃশ্যসম্বলিত নাটকে রয়েছে প্রস্তাবনাসহ মোট ৮টি সঙ্গীত।

প্রধান চরিত্র: বিমাতা রেবতী, সতীনপুত্র নরেন্দ্র, নরেন্দ্রর স্ত্রী বসন্তকুমারী ও পিতা বীরেন্দ্র সিংহ এই চারটি প্রধান চরিত্র আশ্রয়ে নাটকটি বিকশিত। বিমাতা রেবতী চরিত্রটি বাংলা নাটকে সামন্ত মূল্যবোধ-লালিত বঙ্গীয় সমাজে নারীর স্বাধীন চিত্তের প্রথম রুদ্র প্রকাশ। আর ‘বসন্তকুমারী’ নাটক অবহেলিত নারী হৃদয়ে ভারাক্রান্ত সামন্ত সমাজের অভ্যন্তরে প্রথম দ্রোহ। নামকরণে বঙ্কিমের কৃষ্ণকুমারী নাটকের ছায়া রয়েছে। 

২.জমিদার দর্পণ (১৮৭৩) : মুসলমান চরিত্র অবলম্বনে রচিত প্রথম নাটক ‘জমিদার দর্পণ’। কৃষকদের জীবনে জমিদার যে কতটুকু অভিশাপ হয়ে দেখা দিতে পারে তারই প্রামাণ্য চিত্র এ নাটকে অঙ্কিত হয়েছে। অত্যাচারী ও চরিত্রহীন জমিদার হাওয়ান আলী অত্যাচার এবং কৃষক আবু মোল্লার গর্ভবতী স্ত্রী নুরুন্নেহারকে ধর্ষণ ও হত্যার কাহিনী এতে ফুটে উঠেছে। নাট্যকার একে সমাজের অবিকল ছবি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের নামকরণের সাথে সাদৃশ্য থাকলেও বিষয়বস্তু, ঘটনা সংস্থাপন ও চিত্রসৃষ্টিতে স্বাতন্ত্র লক্ষণীয়। 

 

 দীনবন্ধু মিত্র (১৮২৯-১৮৭৩):

দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম নাটক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর ইংরেজি অনুবাদ করেন। 

‘নীলদর্পণ’ নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নীলকরদের অত্যাচার ও উৎপীড়নের কাহিনী ও নীল চাষীদের দুরবস্থা। এ নাটকের প্রেক্ষাপট হিসেবে কুষ্টিয়া এলাকার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এ নাটকের চরিত্র হলো- নবীন মাধব, তোরাপ। এ নাটকের অভিনয় দেখতে এসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মঞ্চে জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলেন।

অন্যান্য নাটক: নবীন তপস্বিনী (১৮৬৬), লীলাবতী (১৮৬৭), জামাই বারিক (১৮৭২), কমলে কামিনী (১৮৭৩) কুড়ে গরুর ভিন্ন গোঠ। 

প্রহসন: সধবার একাদশী (১৮৬৬), বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬)। ইয়ংবেঙ্গলদের উচ্ছৃখলতাকে কেন্দ্র করে রচিত দীনবন্ধু মিত্রের প্রহসনটির নাম ‘সধবার একাদশী’। বিখ্যাত নিমচাঁদ চরিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ‘সধবার একাদশীতে’। সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ব্যঙ্গ করে রচিত প্রহসনের নাম ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’।

কাব্য : সুরধনী কাব্য, দ্বাদশ কবিতা, নানা কবিতা; গল্প : ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’; উপন্যাস : ‘পোড়া মহেশ্বর’। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’। 

 

 দ্বিজেন্দ্রলাল রায়(১৮৬৩-১৯১৩):

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম কৃষ্ণনগরের নদীয়া জেলায়। বাংলা নাটকে সার্থক দ্বন্দ্বমূলক চরিত্র সৃষ্টির প্রথম কৃতিত্ব তাঁর। তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলো সমধিক প্রসিদ্ধ। ‘সাজাহান’ (১৯০৯) তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক।

কাব্যনাট্য: পাষাণী (১৯০০)।

ঐতিহাসিক নাটক: প্রতাপসিংহ (১৯০৫), দুর্গাদাস (১৯০৬), মেবারপতন (১৯০৮), নূরজাহান (১৯০৮), সাজাহান (১৯০৯), চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১) ও সিংহল-বিজয় (১৯১৬)।

সামাজিক নাটক: পরপারে (১৯১২) ও বঙ্গনারী (১৯১৬)।

নকশা ও প্রহসন: একঘরে (১৮৮৯), কল্কি অবতার (১৮৯৫), বিরহ (১৮৯৭), ত্র্যহস্পশ্য (১৯০০) ও প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২)।

রোমান্টিক ও পৌরাণিক নাটক: সোহরাব-রুস্তম (১৯০৮) ও সীতা (১৩০৯)।

 

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category