January 28, 2023, 10:06 am
প্রাচীনকালে বাংলাদেশে কোনো একক রাষ্ট্র ছিল না। এটি তখন কতকগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। অঞ্চলগুলো জনপদ নামে পরিচিত ছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত কতিপয় প্রাচীন জনপদ নিচে উল্লেখ করা হলো-
প্রাচীন জনপদ |
বর্তমান অঞ্চল |
গৌড়: | উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, আধুনিক মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ |
বঙ্গ: | ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালীর নিম্ন জলাভূমি, ময়মনসিংহ এর পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিছু অংশ |
পুণ্ড্র: | বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী ও রংপুর জেলা |
হরিকেল: | সিলেট (শ্রীহট্ট), চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম |
সমতট: | কুমিল্লা ও নোয়াখালী |
বরেন্দ্র: | বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেক অঞ্চল এবং পাবনা জেলা |
তম্রলিপ্ত: | পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলা |
চন্দ্রদ্বীপ: | বৃহত্তর বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও খুলনা |
উত্তর রাঢ়: | মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা |
দক্ষিণ রাঢ়: | বর্ধমানের দক্ষিণাংশ, হুগলির বহুলাংশ এবং হাওড়া জেলা |
বাংলা বা বাঙলা: | সাধারণত খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী |
উল্লেখ্য, গৌড়, বঙ্গ, পুণ্ড্র, হরিকেল, সমতট, বরেন্দ্র এরকম প্রায় ১৬টি জনপদের কথা জানা যায়।
♦ বাংলার সর্বপ্রাচীন জনপদ- পুণ্ড্র।
♦ ‘বঙ্গ’ নামে দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়- খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগে।
♦ সর্বপ্রথম ‘বঙ্গ’ দেশের নাম পাওয়া যায়- ঋগে¦দের’ ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে।
♦ সুপ্রাচীন বঙ্গ দেশের সীমা উল্লেখ আছে- ড. নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থে।
♦ বাংলার আদি জনপদগুলোর জনগোষ্ঠীর ভাষা ছিল- অস্ট্রিক।
♦ বরেন্দ্র বলতে বোঝায়- উত্তরবঙ্গকে (বগুড়া, রাজশাহী জেলার বৃহৎ অংশ)।
♦ প্রাচীনকালে ‘গঙ্গারিডই’ নামে শক্তিশালী রাজ্যটি ছিল- অনুমান করা হয় গঙ্গা নদীর তীরে।
♦ রাজা শশাঙ্কের শাসনামলের পরে ‘বঙ্গদেশ’ যে কয়টি জনপদে বিভক্ত ছিল- ৩টি; পুণ্ড্র, গৌঢ় ও বঙ্গ।
♦ বঙ্গ ও গৌড় নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়- ষষ্ঠ শতকে।
♦ হিউয়েন সাঙ এর বিবরণ অনুসারে কামরূপে যে জনপদ ছিল- সমতট।
♦ রাঢ়দের রাজধানী ছিল- কোটিবর্ষ।
♦ প্রাচীন যেসব গ্রন্থে বঙ্গ দেশের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়- ঋগে¦দের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’-এর শ্লোকে (২-১-১), মহাভারতে, পতঞ্জলির ভাষ্যে, ওভেদী, টলেমির লেখায়, কালিদাসের ‘রঘুবংশে’ এবং আবুল ফজলের ’আইন-ই আকবরী’ গ্রন্থে।
♦ সমতট রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল- কুমিল্লা জেলার বড়কামতায়।
♦ প্রাচীন রাঢ় জনপদ অবস্থিত- বীরভ‚ম ও বর্ধমানে।
♦ প্রাচীনকালে ‘সমতট’ বলতে বোঝায়- কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলকে।
♦ বর্তমান বৃহৎ বরিশাল ও ফরিদপুর এলাকা প্রাচীনকালে যে জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল- বঙ্গ।
♦ সিলেট প্রাচীন যে জনপদের অন্তর্গত- হরিকেল।
♦ প্রাচীন বাংলায় বাংলাদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল- হরিকেল।
♦গৌড়
বাংলার উত্তরাংশ এবং উত্তরবঙ্গে ছিল গৌড় রাজ্য। সপ্তম শতকে রাজা শশাঙ্ক বিহার ও উড়িষ্যা পর্যন্ত গৌড় রাজ্যের সীমা বর্ধিত করেন। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোকে শশাঙ্ক গৌড় নামে একত্রিত করেন। মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণ (বর্তমানে অঞ্চল) ছিল শশাঙ্কের সময়ে গৌড় রাজ্যের রাজধানী। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সন্নিকটের এলাকা গৌড় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুলতানী সময় বাংলার উত্তর-পশ্চিমাংশ, বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চলের রাজধানী ও ছিল গৌড় নগরী।
♦ বঙ্গ
ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নি¤œ জলাভূমি এবং পশ্চিমের উচ্চভূমি যশোর, কুষ্টিয়া, নদীয়া, শান্তিপুর ও ঢাকার বিক্রমপুর সংলগ্ন অঞ্চল ছিল বঙ্গ জনপদের অন্তর্গত। সুতরাং বৃহত্তর ঢাকা প্রাচীনকালে বঙ্গ জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পুরানো শিলালিপিতে ‘বিক্রমপুর’ ও ‘নাব্য’ নামে দুটি অংশের উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন বঙ্গ ছিল একটি শক্তিশালী রাজ্যে। ঋদ্বেদের (প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য) ‘ঐতরেয় আরণ্যক’-এ বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া রামায়ণ ও মহাভারতে এবং কালিদাসের ‘রঘুবংশ-এ ‘বঙ’ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সমগ্র বাংলা বঙ্গ নামে ঐক্যবদ্ধ হয় পাঠান আমলে।
♦ সমতট
হিউয়েন সাং এর বিবরণ অনুযায়ী সমতট ছিল বঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাংশের একটি নতুন রাজ্যে। মেঘনা নদীর মোহনাসহ বর্তমান কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল সমতটের অন্তর্ভুক্ত কুমিল্লা জেলার বড় কামতা এ রাজ্যের রাজধানী ছিল বলে জানা যায়।
♦ রাঢ়
রাঢ় বাংলার একটি প্রাচীন জনপদ। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীর হতে গঙ্গা নদীর দক্ষিণাঞ্চল রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। অজয় নদী রাঢ় অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। রাঢ়ের দক্ষিণে মেদেনীপুর জেলায় ‘তা¤্রলিপি’ ও ‘দণ্ডভুক্তি’ নামে দুটি ছোট বিভাগ ছিল। তৎকালে তাম্রলিপি ছিল একটি বিখ্যাত নৌবন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র।