April 1, 2023, 5:04 am
◊পুণ্ড্রনগর
বাংলার প্রাচীনতম জনপদ ছিল পুণ্ড্র বা পৌন্ড্র। পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। পুণ্ড্রনগরের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। এটি মৌর্য ও গুপ্ত রাজংবশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত শীলাদেবীর ঘাট। এখানে রয়েছে অশোক নির্মিত বৌদ্ধ স্তম্ভ যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজার, পরশুরামের প্রাসাদ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, লক্ষ্ণীন্দরের মেধ, কালীদাহ সাগর, মদ্মদেবীর বাসভবন প্রভৃতি।
◊ সোনারগাঁও
মুঘল সম্রাট আকবরের সময় বার ভুঁইয়া নেতা ঈসা খাঁ সোনারগাঁও বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। সোনারগাঁও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাঁও পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ^রী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুর নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল। এর পূর্ব নাম সুবর্ণগ্রাম। ঈসা খাঁর স্ত্রী সোন বিবির নামানুসারে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়। সোনা বিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, হোসেন শাহ নির্মিত একটি সুদৃশ্য মসজিদ, ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, গ্রান্ড-ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি সোনারগাঁর দর্শনীয় স্থান। সোনারগাঁও এর পানাম নগরী উনিশ শতকের উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল।
◊লালবাগের কেল্লা
লালবাগের কেল্লা মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরোনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি দূর্গ। এই কেল্লার পূর্ব নাম আওরঙ্গবাদ দূর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তার তৃতীয় পুত্র শাহজাদা মোহম্মদ আযম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। এর মধ্যে তার কন্যা পরিবিবি (প্রকৃত নাম ইরান দুখত) সমাধি অবস্থিত। কেল্লার উত্তর-পশ্চিমাংশের বিখ্যাত শাহী মসজিদ অবস্থিত। এটি মুঘল আমলের সর্বচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন।
◊ হুসেনি দালান
হোসেনি দালান বা ইমাম বাড়া ঢাকা শহরের বকশিবাজার এলাকার একটি শিয়া উপসনালয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়। হিজরী ১০৫২ সনে সৈয়দ মীর মুরাদ এটি নির্মাণ করেন।
◊ উত্তরা গণভবন
দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী (উত্তরা গণভবন) নাটোর জেলার অবস্থিত। এককালে দিঘাপাতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান ছিল। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উত্তরাঞ্চলীয় সচিবালয়। ১৯৪৩ সালে রাজা দয়ারাম রায় এটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় এটি পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান একে গভর্নরের বাসভবন হিসাবে উদ্বোধন করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রাজবাড়ীর নামকরণ করেন ‘উত্তরা গণভবন’ (Uttara Ganobhaban)|
◊ আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল(Ahsan Manzil) পুরানো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গণি। তিনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরাণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৬২ সাল। ১৮৯৭ সালে ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে নবাব আহসানউল্লাহ তা পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯০৬ সালে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিলকে ‘আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে’ রূপান্তর করা হয়।
তথ্য কণিকা:
♦ বাংলাদেশের প্রাচীনতম শহরের নাম – পুণ্ড্রবর্ধন।
♦ প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন জনপদটির বর্তমান নাম -মহাস্থানগড়।
♦ মহাস্থানগড় অবস্থিত – বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর তীরে।
♦ খোদার পাথর ভিটা অবস্থিত – মহাস্থানগড়ে।
♦ বৈরাগীর ভিটা অবস্থিত বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে।
♦ সোনারগাঁও বাংলাদেশের রাজধানী ছিল – মোঘল আমলে।
♦ সোনরগাঁওয়ের পূর্বে বাংলার রাজধানী ছিল – মহাস্থানগড়ে।
♦ বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে স্থাপন করেন – ঈসা খাঁ।
♦ময়নামতি অবস্থিত – কুমিল্লায়।
♦ ময়নামতিতে নিদর্শন পাওয়া যায় – বৌদ্ধ সভ্যতার।
♦ ময়নামতির অপর দুটি নাম – হিলটিয়া ও লালমাই।
♦ আহসান মঞ্জিল অবস্থিত – ঢাকার ইসলামপুরে।
♦ লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে কবর রয়েছে – শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির (মৃত্যু ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে)।
♦ লালবাগ দুর্গের অভ্যন্তরে সমাহিত শায়েস্তা খাঁর কন্যা বিবি পরীর আসল নাম – ইরান দুখ্ত।
♦ বড় কাটরা অবস্থিত – ঢাকার চকবাজারে।
♦ ঢাকার ঐতিহাসিক বড় কাটরা নির্মাণ করেন – শাহ সুজা।
♦ ছোট কাটরা অবস্থিত – রাজধানী ঢাকার চকবাজারে।
♦ ছোট কাটরা নির্মাণ করেন – শায়েস্তা খাঁন।
♦ হোসনি দালান অবস্থিত – পুরান ঢাকার বকশিবাজারে।
ঐতিাসিক স্থানগুলোর প্রথমে বর্তমান নাম অত:পর পুরনো নামের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
বাংলাদেশ– বং, বঙ্গ, বাঙালা, পূর্ব পাকিস্তান
ঢাকা– জাহাঙ্গীরনগর/ঢাবেকা/ছুক্কা
চট্টগ্রাম– ইসলামাবাদ/পোরটো গ্রানডে/শাতিলগঞ্জ
খুলনা– জাহানাবাদ
বরিশাল– চন্দ্রদ্বীপ/ বাকলা/ইসমাইলপুর
সিলেট– শ্রীহট্ট, জালালাবাদ (মুঘল আমলে)
কুষ্টিয়া– নদীয়া
সাভার- সাভাউর
মুন্সিগঞ্জ– বিক্রমপুর
ফেনী– শমশেরনগর
ময়নামতি– রোহিতগিরি
রাজবাড়ী– গোয়ালন্দ
গজারিয়া– দোয়ার
গাইবান্ধা- ভবানীগঞ্জ
উত্তরবঙ্গ- বরেন্দভূমি
রাঙ্গামাটি– হরিকেল
শরীয়তপুর– ইদ্রাকপুর পরগনা
সাতক্ষীরা– সাতঘরিয়া
বাগেরহাট– খলিফাতাবাদ
সোনারগাঁও– সুবর্ণগ্রাম
ময়মনসিংহ– নাসিরাবাদ
নোয়াখালী– সুধারাম/ভুলুয়া
শাহবাগ– বাগ-ই-শাহেনশাহ (মুঘল আমলে)
জামালপুর– সিংহজানী
কুমিল্লা– ত্রিপুরা পরগনা
কক্সবাজার– ফালকিং
টঙ্গী– টুঙ্গী
মহাস্থানগড়– পুন্ড্রবর্ধন
গাজীপুর– জয়দেবপুর
ফরিদপুর– ফতেহাবাদ