1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

প্রাণীর সেবা যিনি সর্বদায় নিয়োজিত থাকেন…বরিশালের সৈয়দা তুবা নাহার।

  • Update Time : শুক্রবার, মে ২১, ২০২১
কুকুর-বিড়াল গুলোর প্রতি যে মায়া মমতা দেখান বরং সেটি নিজের সন্তানের মতোই দেখাশুনা করেন। প্রাণীর প্রতির সীমাহীন মায়া মমতা বহি: প্রকাশ ঘটছে। আর তিনি হচ্ছেন প্রাণীর প্রেমী সৈয়দা তুবা নাহার। বর্তমানে তিনি ( ল) অধ্যায়ণরত আছেন। বরিশাল শহরেই থাকেন ।
কুকুর ও বিড়ালদের নিয়ে কাজ করেন। শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান। এদিক-সেদিক তাকান। কুকুরগুলো কি অবস্থা সেটি প্রত্যক্ষ করেন। কখনও সদলবলে ছুটে যান। আহত বা অসুস্থতা জনিত কুকুরদেরকে চিকিৎসা করেন।
ক্ষত, পচে গেছে, পশম পড়ে যাচ্ছে, মটকে গেছে, পোকা ধরছে, পা ভাঙছে, ইত্যাদি নানারকম রোগের চিকিৎসা করেন। প্রয়োজন বোধে অপারেশন করেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেন। বেশি জরুরী হলে রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসেন। তবে যাদের কে রেসকিউতে নেওয়া হয় না তাদের কে প্রতিদিনই ড্রেসিং করে দেন।
এদিকে “সুগন্ধা” নিজের বাসভবনটি ই হচ্ছে কুকুর-বিড়ালদের রেসকিউ সেন্টার। বায়তুল মামুর জামে মসজিদ লেন,মেজর এম এ জলিল সড়ক রোড,বরিশাল,২১ নং ওয়ার্ড,বিসিসি। বাসটি বেশ পরিপাটি,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নিরাপত্তা বেষ্টিত, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রয়েছে। কুকুর বিড়ালসহ পরিবার-পরিজনরা একত্রে বসবাস করেন। এ যেনো এক ব্যতিক্রম দৃশ্য। সত্যিই অসাধারণ। প্রাণীর প্রতির গভীর মমত্ববোধ। সীমাহীন ভালোবাসা বহি:প্রকাশ।
রেসকিউ সেন্টারে বর্তমানে ১৪ টি ছোট-বড় কুকুর রয়েছে। কুকুরগুলো রেসকিউ সেন্টারেই এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে। কখনো বিছানায়, কখনোও মেঝো,কখনোও বারিন্দায় এ যেনো মহাআনন্দে আছেন কুকুরগুলো । খাবার-দাবারসহ সেবা যত্ন ও চিকিৎসা চলছে অবিরাম।
চিকিৎসার পাশাপাশি অভুক্ত কুকুরদেরকে খাবারের ব্যবস্থাও করেন। বরিশাল শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট পয়েন্টে খাবার-দাবারগুলো পৌঁছে যাচ্ছে। অভুক্ত কুকুরগুলো বেশ আরাম-আয়েশে খেয়ে নিচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রাণীপ্রেমী সৈয়দা তুবা নাহার জানান,” আমার বংশগত ভালোবাসা প্রানীর প্রতি আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমার আদরের ছোট বোন। সেই প্রেক্ষিতে কুকুর বিড়াল পালি একদম ছোট থেকে।”
তিনি আরো বলেন, “রাস্তায় কখনো এভাবে করা হয় নি। গত তিন বছর ধরে কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। পথে-ঘাটে খোঁজে খোঁজে বের করে কুকুরদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন আমার কুকুর বিড়ালের প্রতির রক্তে রক্তে মিশে গেছে ভালোবাসা টান ।”
এই মুহুর্তে করোনা চলছে কিন্তু সেবা কার্যক্রম কিভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” করোনার প্রথম কঠিন সময় আমি আমার কাছের কিছু সহকর্মী আর সহযোদ্ধা নিয়ে রাস্তায় প্রায় ৭-৮ ঘন্টা হেটে প্রায় ২শত কুকুর খাইয়েছি।টানা প্রায় ৫-৬ মাস।।অনেক কষ্ট করেছে ওরা আমার সাথে।বাচ্চারা তখন সামান্য খাবারের টুকরাও পেতো না।বেশ কয়েকটি পেপারে কিভাবে যেনো খবর নিয়ে আর্টিকেল লিখেছিল।পরে আমাকে মেসেজ করে দেয়। করোনায় সবাই ঘরবন্দী। এটা ঠিক তবে জরুরি না হলে ডাকি না। আমি কিন্তু ঘরবন্দী না।আমার বাচ্চা আগে। তারপর অন্যকিছু। ওরা( কুকুরগুলো) আমার সন্তান।”
প্রাণীর চিকিৎসা কার্য কিভাবে রপ্ত করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” প্রাকটিস করতে করতে আর ভেট এর সাথে কন্সাল করে নেই সিরিয়াস কেস হলে আর পড়াশুনা তো কাজ করলে করতেই হয়।”
এই মহৎ উদ্যোগটি চালিয়ে যেতে টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে জানতে চাইলে সৈয়দা তুবা নাহার জানান দিচ্ছেন ,”চিকিৎসা, খাবার সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। মাসে ২০ হাজারের টাকা অধিক। যদি কারো ভালো লাগে চাইলে দিতে পারে না হলে কোন সমস্যা নেই। তবে কেউ দেয় না। কিন্তু আমি নিজেই এর যাবতীয় খরচ বহন করি। ওদের জন্য ভালো কিছু একটা করে মরতে চাই।যাতে কেউ ওদেরকে লাথি দিতে না পারে। “
তিনি আরো বলেন ” হিসাব করি না কখনো আনুমানিক বললাম খালি হিসাব করলে তো এর বেশিই আসবে। আসলে আমার জীবনটা পুরাই যুদ্ধে পরিপূর্ন।বাচ্চাদের জন্য সর্বদাই আমাকে যুদ্ধ করে যেতে হয়।যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে ওদের পালি কোনো আর্থিক সহায়তা ছাড়া”
আপনার ঘরই রেসকিউ সেন্টার এতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে সৈয়দা তুবা নাহার বলেন, ” প্রব্লেম তো হয় কিছু যেহেতু নিজের বাসায় একত্রে থাকি সবাই তাও সাপোর্ট না দিলে এগুলো কি করে সম্ভব!!”
বাবা-মা সহযোগিতা করেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ” বাবা দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করছিলেন বর্তমানে অসুস্থতা জনিত কারণে অবসর আছেন। তারা যতটা সহযোগিতা করেছেন আমি কৃতজ্ঞ।এটাই বা ক’জনে করতে দেয়।আলহামদুলিল্লাহ যতটা করছেন।। তাছাড়া বাচ্চারা( কুকুর-বিড়াল) ভাল থাকলে আমি ভাল থাকি।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন প্লাটফর্ম আছে কি না জানতে এই প্রাণীর প্রেমী জানান ( এনিমেল ওয়েল ফেয়ার অব বরিশাল)  নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ রয়েছে। সেটি মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। “
লোকেশন :বরিশাল শহরের আশেপাশে।
ছবি ও ক্লীপ : সৈয়দা তুবা নাহার।

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category