1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন বংশ

  • Update Time : মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২৬, ২০২১

পাল বংশ:

৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটে পাল রাজত্বের উত্থান মধ্য দিয়েবাংলার প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল বংশের বাজত্বকালে। বাংলার প্রথম দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ হল পাল বংশ। পাল বংশের রাজারা একটানা চারশত বছর এদেশ শাসন করেছিলেন। এত দীর্ঘ সময়য আর কোন রাজবংশ এদেশ শাসন করেনি। পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এসময় বাংলার রাজধানী ছিল পাহাড়পুর/সোমপুর।

গোপাল পাল (৭৫৬-৭৮১)
গোপাল পাল ছিলেন পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন উত্তরবঙ্গের একজন শক্তিশালী সামন্ত নেতা। রাজ্যের কলহ ও অরাজকতা দূর করার জন্য আমাত্যগণ ও সামন্তশ্রেণি গোপালকে রাজা নির্বাচন করেন। তিনি বাংলায় প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু করেন। তিনি বিহারের উদন্তপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণকারী গোপাল প্রায় সমগ্র বাংলায় প্রভুত্ব স্থাপন করেন।

ধর্মপাল (৭৮১-৮২১)
ধর্মপাল ছিলেন পাল বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বা নরপতি। তিনি বাংলা থেকে পাঞ্জাবের জলন্ধর পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারতের রাজ্য বিস্তার করেন। পাহাড়পুরের বিখ্যাত বৌদ্ধবিহার সোমপুর বিহার তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া মগধের বিখ্যাত বিক্রমশীলা বিহারও (বর্তমান ভাগলপুরে) তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার করতে তিনটি রাজবংশ প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। একটি বাংলার পাল বংশ, অন্যটি রাজপুতানার গুর্জর পৃতীহার বংশ এবং তৃতীয়টি দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুট বংশ। ইতিহাসে এ যুদ্ধ পরিচিত হয়েছে ত্রিশক্তির সংঘর্ষ (Tripartite War) নামে।

প্রথম মহীপাল (৯৯৫-১০৪৩)
মহীপাল বেনারস ও নালন্দার ধর্মমন্দির, দিনাজপুরের মহীপাল দিঘি, ফেনীর মহীপাল দিঘি খনন করেন। ফেনীতে এখনও মহীপাল স্টেশন নামে স্টেশন আছে।

দ্বিতীয় মহপাল (১০৭৫-১০৮০)
তার শাসনামলে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলায় প্রথম সফল বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়। এ বিদ্রোহ কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। সে সময় জেলে, কৃষক ও শ্রমজীবি মানুষকে কৈবর্ত বলা হত। কৈবর্ত বিদ্রোহকে অনেক সময় বরেন্দ্র বিদ্রোহ বা সামন্ত বিদ্রোহও বলা হয়। রাজা দ্বিতীয় মহীপাল কৈবর্ত বাহিনীকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজে নিহত হন।

রামপাল (১০৮২-১১২৪)
রামপালের মন্ত্রী ও সভাকবি সন্ধ্যাকার নদী বিখ্যাত ‘রামচরিত কাব্য’ রচনা করেন। তিনি ছিলেন পাল বংশের শেষ রাজা। বরেন্দ এলাকায় পানির কষ্ট দূর করার জন্য তিনি অনেক দীঘি খনন করেন। দিনাজপুর শহরের নিকট যে রামসাগর রয়েছে তা রামপালের কীর্তি।

তথ্য কণিকা:
পাল বংশের রাজাগণ বাংলায় রাজত্ব করেছেন- প্রায় চার’শ বছর।
পাল রাজারা যে ধর্মালম্বী ছিলেন- বৌদ্ধ।
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা- গোপাল।
পাল বংশের শেষ রাজা- রামপাল।
নওগাঁ জেলার পাহাপুরে অবস্থিত ‘সোমপুর বিহারের’ প্রতিষ্ঠাতা- রাজা ধর্মপাল।

সেন বংশ:

বাংলার ব্যাপক অংশ জুড়ে একাদশ শতাব্দীর মাঝ পর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় শক্তিশালী সেন বংশের শাসন। সেন রাজাদের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন দাক্ষিনাত্যের কর্ণাটক অঞ্চলের অধিবাসী। বাংলার সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামন্ত সেন। তিনি কর্ণাট থেকে বৃদ্ধ বয়েসে বাংলায় আসেন। তিনি প্রথমে বসতি স্থাপন করেন রাঢ় অঞ্চলে গঙ্গা নদীর তীরে। কিন্তু তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রথম রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় তার পুত্র হেমন্ত সেনকে।

হেমন্ত সেন:
সামন্ত সেনের পুত্র হেমন্ত সেন রাঢ় অঞ্চলে সেন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন সেন বংশের প্রথম রাজা। নদীয়া ছিল তার রাজধানী।

বিজয় সেন (১০৯৮-১১৬০)
তার পুত্র বিজয় সেন (১০৯৮-১১৬০) রাজ্যকে সম্রাজ্যে পরিণত করেন। বিজয় সেন বাংলাকে সর্বপ্রথম একক শাসনাধীন আনয়ন করেন। তিনি ত্রিবেণীর নিকট স্মীয় নামানুসারে ‘বিজয়পুর’ নামে রাজধানী স্থাপন করেন। তাঁর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার রামপাল স্থানে)। সেন বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন বিজয়সেন।

বল্লাল সেন:
বিজয় সেনের পুত্র বল্লাল সেন ছিলেন বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী। তিনি ‘দানসাগর’ নামক স্মৃতিময় গ্রন্থ এবং ‘অদ্ভূত সাগর’ নামক জ্যোতিষ গ্রন্থ রচনা করেন। বাংলায় ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, কায়স্থ প্রভৃতি জাতির মধ্যে তিনি কৌলিন্য প্রথার প্রচলন করেন।

লক্ষ্ণণ সেন:
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্ণন সেন পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলার শেষ হিন্দু রাজা। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খলজী লক্ষ্ণণ সেনকে অতর্কিত আক্রমণ করলে তিনি পূর্ববঙ্গে পলায়ন করেন। এখানে আরো কিছুকাল রাজত্বের পর ১২০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্য কণিকা:
সেন বংশের প্রথম রাজা বা প্রতিষ্ঠাতা- হেমন্ত সেন।
সেন বংশের সর্বপ্রথম সার্বভৌম বা স্বাধীন রাজা- বিজয় সেন।
সেন বংশ ও বাংলার শেষ হিন্দু রাজা- লক্ষ্ণন সেন।
লক্ষ্ণন সেন ছিলেন- বৈষ্ণব ধর্মালম্বী।

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category