1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

নুডলস অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত ১টি খাবার।

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, জুলাই ২, ২০২০

সব বয়সের মানুষেরই নুডুলস কমবেশি পছন্দের একটি খাবার। সকাল-বিকেলের নাস্তায়, স্কুলের টিফিনে বা আপ্যায়নে কিংবা মাঝরাতে খুদা লাগলে নুডলস প্রথম পছন্দ। এই জন্য নুডলস ঝটপট খাবার (ইন্সট্যান্ট ফুড) হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। নুডলসের উৎস নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলে অধিকাংশ মত অনুযায়ী এটা চীনদেশীয় খাবার বা চীনাদের আবিষ্কার। ময়দার তাল থেকে বিভিন্ন ধরনের নুডলস তৈরী করা হয়ে থাকে। লম্বা, সরু সুতার মত দেখতে নুডলসই বেশি দেখা যায়। তবে এটা ঢেউ খেলানো, নলাকার, খোলসাকার, ভাজ করা ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। নুডলস সাধারণত ফুটন্ত পানিতে রান্না করা হয়। অনেকসময় রান্নার তেল ও লবন ব্যবহার করা হয়। এদেরকে প্রায়শই কড়া ভাজা করা হয়। চাটনি দিয়ে নুডলস পরিবেশন করা হয়। অল্প সময় সংরক্ষণের জন্য নুডলস রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়। নুডলস শব্দটি জার্মান শব্দ নুডেল থেকে এসেছে।

আসুন জেনে নিই নুডলসের ইতিহাস

নুডলসের উৎস অমিমাংসিত। দাবী করা হয়ে থাকে নুডলসের চীনা আরবীয় ও ইউরোপীয় উৎসের । একটি নিবন্ধে দাবী করা হয়েছে নুডলস খাওয়ার সব থেকে পুরতন নিদর্শন রয়েছে ৪০০০ বছর আগেকার চীনে। ২০০৫ সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে কাজ করার সময়ে মাটির পাত্র খুঁজে পায় যেখানে ফক্সটেইল মিলেট এবং ব্রুমকর্ণ মিলেটের সন্ধান পাওয়া যায় । নুডলসের লিখিত নথি পাওয়া যায় ২৫-২২০ সালের মধ্যে পূর্ব হান সাম্রাজ্যকালে লিখিতে একটি বইয়ে)। গমের ময়দার খামির থেকে তৈরী নুডলস হান রাজত্বের প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়। ট্যাং সাম্রাজ্যকালে সর্বপ্রথম নুডলস কেটে সুতাকারের তৈরি করা হয় এবং ইউয়ান রাজত্বকালে শুকনো নুডলস তৈরীর প্রচলন হয়।

নবম শতকের শুরুর দিকে বৌদ্ধ সন্যাসীদের মাধ্যমে চীনের গমের নুডলস জাপানে আসে। ১৩ শতকে পারস্যের জনগণ রেশতেহ নুডলস খেতো। বিভিন্ন উপাদান থেকে নুডলস তৈরীর গবেষণা চলতেই থাকে। ১৯২ থেকে ১৮৯৭ সালে কোরিয়ার জোসেয়ন রাজত্বকালে বাজরা থেকে নুডলস তৈরি আবিষ্কার হয়। চাইনিজ নুডলসের উপর ভিত্তি করে তৈরী র‌্যামেন নুডলস ১৯০০ সালে জাপানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মমফোকু আন্ডো ইন্সট্যান্ট নুডলস আবিষ্কার করেন এবং ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম জাপানে বাজারজাত করা হয়।এদিকে আবার বিশ্বের অনেক দেশেই নতুন বছরের প্রথম দিনে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে নানান ধরনের খাবার খাওয়া হয়। কিন্তু হংকংয়ে চীনা নববর্ষের সময় নুডলস খাওয়া একটা ঐতিহ্য। নুডলস দীর্ঘায়ুর প্রতীক। বলা হয়ে থাকে, রান্নার সময় নুডুলস ভেঙ্গে বা ছোট হয়ে যায় না। নুডুলসের দৈর্ঘ্য ও রান্নার সহজ উপায় ভোজকের জীবনের প্রতীক। নুডলস সিদ্ধ বা ভাজা যে কোনো পদ্ধতিতেই রান্না করা যেতে পারে। হংকং’য়ে নুডলস রান্নার নানান পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

শিশুর খাবারে নুডলস পুষ্টিবিদের কথা

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘ভাত বা রুটির বিকল্প হিসেবে নুডলস খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত আটা ও চাল এই দুই উপকরণ দিয়ে নুডলস হয়ে থাকে। আটার নুডলসে ফাইবার ও প্রোটিন বেশি পরিমাণে থাকে। তবে যেসব বাচ্চার গ্লুটিনে সমস্যা আছে বা রক্তে ল্যাকটেড অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেশি, তাদের জন্য রাইস নুডলস ভালো। দিনে হালকা নাশতা হিসেবে কিংবা মূল খাবার হিসেবেও শিশুরা নুডলস খেতে পারে। পুষ্টিবিদরা  আরো বলছেন, শিশুরা যদি দিনে তিন বেলা নুডলস খেতে চায়, তাতে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। নুডলসের সঙ্গে রাখা যেতে পারে পুষ্টিকর সবজি।

নুডলস খেলে কি মোটা হয়?

ডিনার হোক বা ব্রেকফাস্ট, নুডলস  প্রেমীরা যেকোনও সময়ই নুডলস খেতে ভালবাসেন৷ অনেক সময় নুডলস যেমন হজম করা সমস্যা হয়, তেমনই অতিরিক্ত নুডলস খেলে বাড়তে পারে ওজনও৷ তবে নুডলস খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে একেবারেই খারাপ? নিউট্রিশনিস্টরা জানাচ্ছেন, একেবারেই না৷ নুডলস কার্বোহাইড্রেট ছাড়া কিছুই নয়৷ তাই নুডলস শরীরের পক্ষে অবশ্যই ক্ষতিকারক নয়৷ কিন্তু কার্বোহাইড্রেড শরীরে গেলে তা অবশ্যই ক্ষতিকারক হতে পারে৷ ঠিক তেমনই ইন্সট্যান্ট বা প্যাকেজড নুডলস প্রসেসড ফুড৷ তাই ইন্সট্যান্ট নুডলস থেকে অবশ্যই দূরে থাকুন৷ কাঁচা নুডলস কিনে বাড়িতে বানিয়ে খান৷ আবার নুডলসের হাই কার্বোহাইড্রেট ব্যালান্স করাও প্রয়োজন৷ তাই নুডলস তৈরির সময় মেশান গাজর, বিনস বা স্বাস্থ্যকর যেকোনও সব্জি৷ চিকেন, এগের মতো প্রোটিনও নুডলস করে তুলবে স্বাস্থ্যকর৷ একই ভাবে অলিভ অয়েলে নুডলস ভাজলে হবে আরও পুষ্টিকর৷

নুডুলস কীভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

কিন্তু নুডলস অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত একটি খাবার। পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত অল্প থাকায় এটি প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ না করতে পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। খুব দ্রুত রান্না করা গেলেও উচ্চমাত্রায় চর্বি, ক্যালরি, সোডিয়াম আর প্রিজারভেটিভ থাকায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নুডলস বর্জন করাই শ্রেয়।

আসুন দেখে নেই নুডুলস কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে-

ফাইবার প্রোটিন কম

নুডলস প্রক্রিয়াজাত খাবার, যা ওজন বাড়ায়। ফাইবার ও প্রোটিন কম থাকায় এটি পূর্ণ খাবার নয়।

আরও পড়ুন: ডিম ভুনা করতে হয় কিভাবে?

বিপাকে ত্রুটি

গবেষণায় দেখানো হয়েছে মহিলারা সপ্তাহে দুই বা তার বেশিবার নুডলস খেলে তাদের মেটাবোলিক সিনড্রম দেখা দেয়। এটি ফাস্টফুড ক্যাটাগরির খাবার তাই ডায়েট লিস্টে নুডুলস রাখার কোনো মানে নেই।

ময়দায় তৈরি

নুডলস ময়দা দিয়ে তৈরি যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ময়দা উচ্চমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত, খেতে সুস্বাদু হলেও পুষ্টিহীন। নুডলসে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়।

খারাপ চর্বি

নুডলস অত্যন্ত খারাপভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা ফ্যাটি অ্যাসিড বা ট্রান্স-ফ্যাট যুক্ত। এছাড়া ভোজ্য উদ্ভিজ তেল, চিনি, চিনির সিরাপ, গন্ধবর্ধনকারী ও অন্য উপাদান ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

নুডুলসে থাকে এমএসজি

নুডলসে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG) থাকে, যা প্রক্রিয়াজাত খাবারে সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। এমএসজি খেলে ওজন বাড়ে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, মাথা ব্যথা ও নাক বন্ধ হয়।

অতিমাত্রার সোডিয়াম

নুডলসের উচ্চমাত্রার সোডিয়াম স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। সাধারণভাবেই এটি উচ্চরক্তচাপ, কার্ডিওভাস্কুলার রোগের আশঙ্কা বাড়ায়।

পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমায়

যেসব বাচ্চারা ইন্সট্যান্ট নুডুলস খায়, তাদের শরীরে অন্য খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। নুডলস খাওয়ার পর অনেক বাচ্চার সঠিক খাবার গ্রহণের পরেও অপুষ্টি দেখা দেয়।

সন্তান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি

গর্ভবতী মহিলাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে নিষেধ করা হয়। গর্ভাবস্থায় নুডুলস খেলে অকাল গর্ভপাত ঘটতে পারে। কারণ নুডলস ভ্রুণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিহত করে।

স্থূলতা বাড়ায়

ইনস্ট্যান্ট নুডলস মেদবহুল করে তোলে। এর চর্বি ও অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে। প্রতিদিন নুডুলস খেলে দ্রুত ওজন বাড়ে।

সতর্কতা : নুডলস বানানোর ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, তাতে যেন টেস্টিং সল্ট কিংবা প্যাকেটজাত কোনো মসলা ব্যবহার করা না হয়। সাধারণত বাজারের বিভিন্ন নুডলসের সঙ্গে এসব মসলা দেওয়া হয়। এটি শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এই লবণ রক্তে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা বাচ্চাদের হাইপার অ্যাকটিভ করে তোলে। বিশেষ করে অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য এটি বেশ ক্ষতিকর। নুডলস খেতে সমস্যা নেই, তবে এর প্যাকেট মসলা থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

সমগ্র বাংলায় আরও পড়তে পারেন:

আরও পড়ুন: ঠান্ডা দুধ খেলে কি ক্ষতি হয়?

আরও পড়ুন : সুশি কি? সুশি কীভাবে তৈরি করা হয়?

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category