March 27, 2023, 5:00 pm
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য শস্য। এ দেশ বিশ্বের ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। (বিশ্বের ১০টি ধান উৎপাদনে র্শীষে দেশের ক্রমে:চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, ব্রাজিল) বাংলাদেশে ধানের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৪.২ টন। বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত জনপ্রতি দৈনিক চালের চাহিদার পরিমাণ ৪১০ গ্রাম। ধান উৎপাদনে শীর্ষ জেলা ময়মনসিংহ। ধান মূলত ক্রান্তিয় (ক্রান্তীয় অঞ্চল বলতে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলকে বুঝানো হয়। যেসব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এবং বছর জুড়ে তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না সেসব অঞ্চলকে ক্রান্তীয় অঞ্চল বলে।) মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের ফসল।ধান উষ্ণ জলবায়ুতে, বিশেষত পূর্ব-এশিয়ায় ব্যাপক চাষ হয়। (পূর্ব-এশিয়ার দেশ সমুহ: গণচীন-বেইজিং,হংকং-হংকং,চীনা তাইপেই—তাইপে, ম্যাকাও-ম্যাকাও, জাপান-টোকিও, মঙ্গোলিয়া-উলানবাটোর, উত্তর কোরিয়া-পিয়ংইয়ং,দক্ষিণ কোরিয়া-সিউল)। ধান সাধারণত একবর্ষজীবি উদ্ভিদ, কোন কোন অঞ্চলে বিশেষ করে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ধান দ্বি-বর্ষজীবি উদ্ভিদ হিসেবে চাষ করা হয়।
ধান আবিষ্কারের একটি গল্প আছে:
বাংলাদেশে ধান আবিষ্কারের একটি গল্প এভাবে প্রচারিত রয়েছে যে অনেকদিন আগে কয়েকজন জেলে খুলনা জেলার ভাটিতে মাছ ধরার সময় কালবৈশাখী ঝড়ে পড়েন। ঝড়ের তান্ডবে তারা বেঁচে যান বটে তবে নৌকা ও মাছ ধরার সাজসরঞ্জাম খুইয়ে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে তীরে আশ্রয় নেন। ঘন অন্ধকার রাতে পথ চলতে না পেরে তারা নদীর তীরেই কোন রকমে রাত কাটিয়ে ভোর হতেই জনপদের উদ্দেশ্যে উত্তর দিকে হাঁটতে শুরু করেন। দুপুরের দিকে তারা পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে খাবার সংগ্রহে উদ্যোগী হয়ে নদীর তীরে ঝড়ে ভাসা কয়েকটি মাছ কুড়িয়ে নিয়ে তা খাওয়ার জন্য খড়কুটা সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে মাছ পুড়িয়ে নিতে থাকেন। তখন আগুনে পোড়া খড়ের মাঝে কিছু বীজ ফুটে ওঠে। তা দেখে তারা ফুটে ওঠা বীজ সংগ্রহ করে খেয়ে দেখেন যে তা ভালই লাগে। ফলে মাছ ঝলসানোর সাথে সাথে সে সব ঘাস বীজ পুড়িয়ে খৈ করেও খান। খাওয়া শেষে তারা ঐ ঘাসবীজ সংগ্রহ করে নিয়ে পথ চলতে চলতে সন্ধ্যায় এক গৃহস্থ বাড়িতে ঠাঁই নেন। গৃহস্থ জেলেদের অসহায় অবস্থা দেখে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। খাওয়া শেষে জেলেরা গৃহস্থকে তাদের সংগ্রহ করা ঘাসবীজের আগুনে পোড়া খৈ-এর কথা বলেন। গৃহস্থ বধূ তা থেকে একমুঠো বীজ নিয়ে খোলায় ভাজতে গিয়ে বিস্মিত হন এবং বীজ ভেজে খৈ করে সবাইকে দেখান। তা সবাই দেখে খুশী হন। পরদিন ভোরে জেলেরা বিদায়লগ্নে ঐ গৃহস্থকে তাদের সংগৃহীত কিছু ঘাসবীজ দেন। বাকিটা তারা নিয়ে নিজের বাড়িতে বুনে দেন। এভাবেই সেই ঘাসবীজ থেকে যে ফসলের আবির্ভাব হয় তা-ই আদি ধান জাত।
ধানের ইংরেজি ‘Rice’ ( রাইস ) শব্দের জন্ম:
চীনের ব্যবসায়ীরা প্রাচীন যুগ থেকেই আরব-মিশর দেশের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা করতেন। নানাবিধ পণ্যের মধ্যে চীনের রেশম বস্ত্র ও চাল বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে। চীনের নিংপো উপভাষায় ধানকে Ou-liz “উলিজ” বা “উলিস” বলা হতো। এই উলিজ শব্দকে আরবীয় Oruz “ওরাজ”নাম দেয়। যা পরবর্তীকালে গ্রীক ভাষায় ওরাইজা (Oryza) হয়ে যায় এবং তা থেকেই ফরাসী ভাষায় Ritz ‘রি ‘ এবং ইংরেজি ভাষায় Rice ‘রাইস’হয়ে যায়। ইংরেজিতে Rice ‘রাইস বলতে ধান বুঝায় তবে আমাদের দেশে Rice ‘রাইস’মানে চাল; ধানের ইংরেজি শব্দ পেডি (Paddy) ।
ধান: Gramineae/Poaceae/Grasses; গ্রামিনী/পোয়াসি/ঘ্রাস গোত্রের দানাশস্যের উদ্ভিদ।
ধানের বৈজ্ঞানিক নাম: Oryza sativa (অরাইজা স্যাটিভা), Oryza glaberrima (অরাইজা গ্লাবেরিমা ) । ধান Angiosperms বা আবৃতবীজি উদ্ভিদ। Angiosperms (এনজিওস্পার্ম: আবৃতবীজি, Angio: আবৃত sperms: বীজি) [আমরা জানি যে বীজ দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা: Gymnosperm : নগ্নবীজি ও Angiosperms: আবৃতবীজি] ধান একবীজ পত্রী উদ্ভিদ (Monocots (একবীজপত্রী)। Commelinids কমলিনয়েডস। বর্গ: Poales পোলাস, পরিবার:Poaceae পোয়াসি , গণ: Oryza অরাইজা, প্রজাতি: O. sativa স্যাটিভা।
ধানের ক্রোমোসম সংখ্যা 2n =24 টি [ মানুষের দেহকোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টি। কাজের উপর ভিত্তিকরে ক্রোমোজোম দুই প্রকার, দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনকে ক্রোমোজোমকে অটোজম (Autosome) এবং যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোমকে যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম (Sex chromosome) বলে। মানুষের দেহকোষে অটোজমের সংখ্যা ৪৪টি (২২ জোড়া) এবং যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের সংখ্যা ২টি (১ জোড়া) এবং জনন কোষে (শুক্রাণু বা ডিম্বাণু) অটোজমের সংখ্যা ২২টি এবং যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের সংখ্যা ১টি।] সবচেয়ে কম সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে পিঁপড়ায়। এক ধরনের পুরুষ পিঁপড়ায় ১টি এবং স্ত্রী পিঁপড়ায় ২টি ক্রোমোসোম থাকে। ফার্ণবর্গীয় উদ্ভিদে সর্বাধিক ক্রোমোসোম থাকে। ফার্ণবর্গীয় উদ্ভিদে প্রায় ১২৬০টি। মাছিতে ১২ টি ক্রোমোজোম থাকে।কুকুরে ৭৮টিক্রোমোজোম থাকে। গরু, ছাগলে কয়টি ক্রোমোজোম থাকে ৬০টি। ব্যাঙে ২২ টি ক্রোমোজোম থাকে। মুরগীতে ৭৮ টি ক্রোমোজোম থাকে। ভেড়াতে ৫৪ টি ক্রোমোজোম থাকে।। ধান ফল: কেরিওপসিস (Caryopsis) শুষ্ক একবীজফল যার ডিম্বাশয়ের প্রাচীর এবং বীজত্বক সংযুক্ত।ধান থেকে চাউল হয়। চাউল প্রধানত শ্বেতসার (Starch) দ্বারা গঠিত। ধানে সাধারণত ১৭টি অ্যামাইনো এসিড রয়েছে।
এছাড়া ধানের পুষ্টিগুণ: পরিমাণ ( ১০০ গ্রামে ) পানি-১২ গ্রাম, কার্বোহাড্রেট-৮০ গ্রাম, শক্তি- ১৫২৮ কিলোজুল, আমিষ-৭.১ গ্রাম, স্নেহ-০.৬৬ গ্রাম, আঁশ-১.৩ গ্রাম চিনি-০.১২ গ্রাম
ধান গাছের বর্ণনা: ধান গাছ সাধারণত ১-১.৮ মিটার (৩.৩-৫.৯ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতা সরু, লম্বা আকৃতির হয়। পাতা ৫০-১০০ সে.মি. (২০-৩৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা ও ২-২.৫ সে.মি. (০.৭৯-০.৯৮ ইঞ্চি) প্রশস্ত হয়ে থাকে। সাধারণত বায়ুর সাহায্যে এর পরাগায়ন হয়ে থাকে। পুষ্পমঞ্জরীতে ফুলগুলো শাখান্বিত অবস্থায় উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সাজানো থাকে। এক একটি পুষ্পমঞ্জরী ৩০-৫০ সেমি (১০-২০ ইঞ্চি) লম্বা হয়ে থাকে। বীজকে খাবার হিসেবে খাওয়া হয়, একে শষ্য বলা হয়। বীজ সাধারণত ৫-১২ মি.মি. লম্বা ও ২-৩ মি.মি. পুরু হয়ে থাকে।
বৃষ্টিপাতঃ ধান চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। সাধারণভাবে ১৫০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। how much litres of water required to produce 1kg of paddy?
উষ্ণতাঃ সাধারণভাবে ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাযুক্ত অঞ্চলে ধান চাষ করা হয়। গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
তাপমাত্রা:
গবেষণায় দেখা গেছে, ধান গাছ তার জীবনচক্রের মধ্যে কাইচথোড় থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত সময়ে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম সহ্য করতে পারে না। ওই সময় বাতাসের তাপমাত্রা যদি ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে অথবা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে যায় তাহলে ধানে ব্যাপকভাবে চিটা দেখা দেয়।
ধানের জীবন চক্রের অঙ্কুরোদগম অবস্থায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চারা অবস্থায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুশি অবস্থায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, থোড় অবস্থায় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ফুল ফোটা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে তাপমাত্রা চলে গেলে ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এতে ফলন অনেক কমে যায়।
এই উপমহাদেশের ধানের পরিচিতি আলোচনা করতে প্রথমেই ধানের উপপ্রজাতিসমূহ জানা দরকার।
এশিয়ায় ধানের ৩টি উপপ্রজাতি রয়েছে, এগুলো হলো: ক) ইন্ডিকা টাইপ (Indica) খ) জাপনিকা টাইপ (Japonica) গ) জাভানিকা টাইপ (Javanica)।বাংলাদেশে বহু জাতের ধান রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে উপপ্রজাতিগত পার্থক্য যথা- ইন্ডিকা, জাপনিকা ও জাভনিকা জাতের মধ্যে ধান গাছের পার্থক্য রয়েছে। গাছ ব্যতিত ইন্ডিকা জাতের মধ্যে ও দানার আকার আকৃতিতে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এসব পার্থক্যের ভিত্তিতে ধানকে শনাক্তও করা যায়।-১. ধানের দানার আকার অনুসারেধানের প্রায় ২৫টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে কেবল ২টি ধানের চাষাবাদ হয়। এগুলো হলোঃ * Oryza sativa * Oryza glaberrima.
আকার অনুসারে ধানের প্রকার। যথা: মোটা দানার ধানঃ – দেশীয় আউশ (ধারিয়াল) ও বোরো ধান (টেপি)
মধ্যম আকারের ধানঃ – আমন ধানের অধিকাংশ জাত (লতিশাইল)
সরু আকারের ধানঃ- আমন ধানের জাত – পোলাও চাল, কালিজিরা, আক্কর কড়া, কাটারী ভোগ।
দানার বর্ণ অনুসারে ধানের প্রকার – সোনালীঃ – অধিকাংশ জাত, লালচেঃ – কটক তারা, মরিচবাটি, কালচেঃ – কালা মোটা, কালিজিরা, ধূসরঃ – ধরিয়াল।
দানার শুং (ধহি) এর উপস্থিতি অনুসারে ধানের প্রকার: যথাঃ শুং বিহিন: – আধিকাংশ জাত, শুং সহ: – গাজী, অনেক স্থানীয় জাত।
ধান ও ধান চাষের বিষয়াবলীতে কৃষিতাত্তিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিকরণ করা যায়:-
(ক) চাষাবাদের ঋতু (Season of cultivation) অনুসারে;
(খ) চাষাবাদ কৌশল (Cultivation technique) অনুসারে;
(গ) আলোর প্রয়োজনীয়তা (Photo sensetivity) অনুসারে।
চাষাবাদে ঋতু বা মৌসুম অনুসারে শ্রেণিকরণ:
চাষাবাদের মৌসুম অনুসারে ধান চাষকে প্রধান ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
(ক) আউশ (IUs) বা গ্রীষ্মকালীন ধান চাষ,
(খ) আমন (Aman) বা বর্ষাকালীন ধান চাষ।
(গ) বোরো (Boro) বা শীতকালীন ধান চাষ,
আউশ ধান : দ্রুত (আশু) ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের নাম করা হয়েছে আউশ। এই ধান সাধারণত জন্মে বর্ষাকালের আষাঢ় মাসে। এই কারণে এর অপর নাম আষাঢ়ী ধান। তবে এই ধান বৎসরের যে কোন সময়েই চাষ করা যায়। বাংলাদেশে আউশ ধানের যে নামগুলো পাওয়া যায়, তা হল- আটলাই, কটকতারা, কুমারী, চারনক, দুলার, ধলাষাইট, ধারাইল, পটুয়াখালী, পশুর, পানবিড়া, পাষপাই, পুখী, মরিচবেটি, হরিণমুদা, হাসিকলমি, সূর্যমুখ, শনি, ষাইটা, ভইরা, শঙ্ক পটি, কালা বকরি, খাড়াজামড়ি, মুলকে আউশ, কালামানিক, ভাতুরি ইত্যাদি।
আউশ ধান চাষ: আউশ ধান স্বল্প মেয়াদি এবং আলো নিরপেক্ষ। সাধারণত ৯০-১০০ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়। মার্চ
ও এপ্রিল মাসে বীজ বুনলে ফলন কিছুটা বাড়ে। আউশ মৌসুমে চাষের জন্য দেশী ও উচ্চ ফলনশীল
উভয় জাতের ধানই রয়েছে। ধানের ফলন কিছুটা কম। ধানের আকার মাঝারী থেকে মোটা।
আমন ধান:
আমন শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘আমান’ থেকে যার অর্থ আমানত। অর্থাৎ আমন কৃষকের কাছে একটি নিশ্চিত ফসল (Sure Crop) বা আমানত হিসেবে পরিচিত ছিল। আবহমান কাল থেকে এ ধানেই কৃষকের গোলা ভরে, যা দিয়ে কৃষক তার পরিবারের ভরণপোষণ, পিঠাপুলি, আতিথেয়তাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকে।
সংস্কৃত হৈমন’ বা হৈমন্তিক’ শব্দের অপভ্রংশ। ধান বিশেষ। এর অপর নাম আগুনী ও হৈমন্তিক। আমন মৌসুমে সবচেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়। আমন ধান তিন প্রকার। যথা—
আমন ধান মূলত দুই প্রকার; রোপা আমন ও বোনা আমন। রোপা আমন অন্য জমিতে চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা ক্ষেতে রোপণ করে ধান উৎপন্ন হয় বলে এর এরূপ নাম। রোপা আমন আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পৌষ (এলাকাভেদে) মাসে ধান কাটা হয়।
বোনা আমন ছিটিয়ে বোনা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বোনা আমনের বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে আছড়া আমন, বাওয়া আমন বা গভীর পানির আমনও বলা হয়। আমন মৌসুমে যেহেতু আবাদ এলাকা সম্প্রসারণের তেমন সুযোগ নেই তাই ফলন বাড়ানোর জন্য নতুন জাত চাষাবাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। আমন ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয় যেমন- ভালো বীজ নির্বাচন, জমি তৈরি, সঠিক সময়ে বপন বা রোপণ, আগাছা দূরীকরণ, সার ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক সেচ ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমন ধান:
আমন শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘আমান’ থেকে যার অর্থ আমানত। অর্থাৎ আমন কৃষকের কাছে একটি নিশ্চিত ফসল (Sure Crop) বা আমানত হিসেবে পরিচিত ছিল। আবহমান কাল থেকে এ ধানেই কৃষকের গোলা ভরে, যা দিয়ে কৃষক তার পরিবারের ভরণপোষণ, পিঠাপুলি, আতিথেয়তাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকে।
সংস্কৃত হৈমন’ বা হৈমন্তিক’ শব্দের অপভ্রংশ। ধান বিশেষ। এর অপর নাম আগুনী ও হৈমন্তিক। আমন মৌসুমে সবচেয়ে বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়। আমন ধান তিন প্রকার। যথা—
আমন ধান মূলত দুই প্রকার; রোপা আমন ও বোনা আমন। রোপা আমন অন্য জমিতে চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা ক্ষেতে রোপণ করে ধান উৎপন্ন হয় বলে এর এরূপ নাম। রোপা আমন আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পৌষ (এলাকাভেদে) মাসে ধান কাটা হয়।
বোনা আমন ছিটিয়ে বোনা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বোনা আমনের বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে আছড়া আমন, বাওয়া আমন বা গভীর পানির আমনও বলা হয়। আমন মৌসুমে যেহেতু আবাদ এলাকা সম্প্রসারণের তেমন সুযোগ নেই তাই ফলন বাড়ানোর জন্য নতুন জাত চাষাবাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি। আমন ধানের ফলন বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয় যেমন- ভালো বীজ নির্বাচন, জমি তৈরি, সঠিক সময়ে বপন বা রোপণ, আগাছা দূরীকরণ, সার ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা ও সম্পূরক সেচ ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমন ধান চাষ: মে মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় সীমার মধ্যে চাষ করা ধানকে আমন ধান বলে। আমন ধান
স্বল্প মেয়াদি থেকে দীর্ঘ মেয়াদি (১২০-১৬০ দিন) হতে পারে। এই ধান আলোর প্রতি স্পর্শকাতর।
বোনা ধান (Broadcast rice):
বোরো বা শীতকালীন ধান:
নভেম্বর মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে জন্মানো ধানকে বোরো ধান বলে। বীজতলায় চারা
উৎপাদন করে তারপর মূল জমিতে চারা রোপণ করতে হয়। বোরো ধান চাষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
যে এই মৌসুমে ধান চাষ করতে হলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। ধান সাধারণত একটু মোটা।
বোরো ধান চাষে ধানের ফলন সবচেয়ে বেশি। বোরো ধান ২ প্রকার। যথা – (ক) দেশী বোরো ধান, (খ) উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান। দেশী বোরো ধান একটু আগাম অর্থাৎ এপ্রিল মাসে কাটা যায়। আবার উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান একটু বিলম্বে অর্থাৎ মে মাসে কাটতে হয়। জমি প্রস্তুত করার পর তাতে সরাসরি বীজ বুনে চাষ করা ধানকে বোনা ধান বলে। বোনা ধান নিম্নরূপ হতে পারে, যথা- (ক) বোনা আউশ (খ) বোনা আমন বোনা আউশ (Broadcast IUs)
বোনা আউশ ধান ছিটিয়ে এবং সারিতে উভয় পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। বোনা আউশ ধান সাধারণত
বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে চাষ করা হয়। তবে সুযোগ থাকলে আংশিক সেচ দেওয়া যায়। দেশী ধান
সাধারণত ছিটিয়ে বোনা হয় এবং উফশী বোনা আউশ ধান সারিতে বোনা হয়। কোন কোন সময়
আউশ ধান ডিবলিং (Dibbling) করা হয়। মাটি চিকন খুটি দিয়ে গর্ত করে তাতে বীজ বপনকে
ডিবলিং বলে।
বোনা আমন (Broadcast Aman): বোনা আমন ধান মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে সরাসরি বপন করা হয়। বর্ষার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছও লম্বা হয় গভীর পানিতে ডুবে থাকা জমিতে বোনা আমন ধান চাষ করা হয় বলে একে গভীর
পানির ধান (Deep water rice) বলা হয়। গাছ বড় হওয়ার পর পানিতে ভেসে থাকে বলে বোনা
আমন ধানকে বা অনেক জাতকে ভাসমান ধান (Floating rice) বলে।
বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার পর থেকে একটি ধান গাছ ধীরে ধীরে বড় হয়। গাছে ফুল ও দানা
উৎপাদিত হয় এবং সবশেষে ধান পাকে। এগুলোকে ধান গাছের বিভিন্ন বৃদ্ধি অবস্থা বলে।
১. রোপা আমন : চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা রোপণ করে এই ধান উৎপন্ন হয় বলে এর এরূপ নাম। রোপা আমন জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে বীজ তলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপা কার হয় এবং অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটা হয়।
২. বোনা আমন : এই আমন ছিটিয়ে বোনা হয়। বোনা আমন চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে আছড়া আমনও বলে।
৩. বাওয়া আমন : বিল অঞ্চলে এই আমন উৎপন্ন করা হয়। একে এই কারণে গভীর পানির বিলে আমনও বলা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। এবং প্রতিটি প্রজাতির ধানের স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন— ইন্দ্রশাইল, কাতিবাগদার, ক্ষীরাইজালি, গদালাকি, গাবুরা, চিংড়িখুশি, চিটবাজ, জেশোবালাম, ঝিঙ্গাশাইল, ঢেপি, তিলককাচারী, দাউদিন, দাদখানি, দুদলাকি, দুধসর, ধলা আমন, নাগরা, নাজিরশাইল, পাটনাই, বাঁশফুল, বাইশ বিশ, বাদশাভোগ, ভাসা মানিক, মালিয়াডাক্র, রাজাশাইল, রূপশাইল, লাটশাইল, হাতিশাইল ইত্যাদি।
বোরো ধান:
বোরো ধান প্রধানত সেচ নির্ভর। কার্তিক মাস থেকে বীজ তলায় বীজ বপন শুরু হয়। ধান কাটা চলে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য পর্যন্ত। উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান প্রবর্তনের পর থেকে ধান আবাদ তথা সমুদয় কৃষি ব্যবস্থার মস্তবড় একটা পরিবর্তন এসেছে। ফলে একদিকে যেমন আউশ ধানের আবাদ আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে, তেমনি রবি মৌসুমে প্রচলিত ফসল যেমন ডাল, তৈল বীজ, শাক সবজি, ফলমূল, গোলআলু, মসলা ইত্যাদির আবাদ কমে এসেছে। তবে বসন্তকালে এই ধান জন্মে বলে একে বাসন্তিক ধান বলা হয়। এই জাতীয় ধানের নামগুলো হলো- আমন বোরো, খৈয়াবোরো, টুপা, পশুশাইল, বানাজিরা, বোরোবোরো ইত্যাদি।
ধানের বৃদ্ধি স্তর-
ধানের বৃদ্ধিকাল: জাত ভেদে অঙ্গজ বৃদ্ধি ৩৫ দিন, প্রজননকাল ৩৫ দিন ও পরিপক্ককাল ৩০ দিন।
যদি ১০০ দিনের জাত হয় তাহলে বৃদ্ধিকালের বন্টন হবে: ( অঙ্গজ বৃদ্ধি+ প্রজননকাল+ পরিপক্ককাল) ৩৫ + ৩৫ + ৩০ মোট ১০০ দিন। যদি ১৩০ দিনের জাত হয় তাহলে বৃদ্ধিকালের বন্টন হবে- ৬৫ + ৩৫ + ৩০ ( অঙ্গজ বৃদ্ধি+ প্রজননকাল+ পরিপক্ককাল)।
স্তর সমূহ:
স্তর- ০, অংকুরোদগম শুরু থেকে চারা উৎপাদন। স্তর-১, বীজতলায় চারা অবস্থা , স্তর-২, কুশি পর্যায়, স্তর-৩, কান্ড বৃদ্ধি, স্তর-৪, কাইচ থোর অবস্থা, স্তর- ৫, শীষ উৎপাদন। স্তর- ৬, ফুল ফোটা, স্তর- ৭, দুধ অবস্থা, স্তর- ৮, মন্ড বা ডাফ অবস্থা, স্তর-৯, পরিপক্ক অবস্থা।
দৈহিক বৃদ্ধি পর্যায় :
১। চারা পর্যায় থেকে প্রথম কুশি অবস্থা-৩০ দিন।, ২। রিকোভারী পর্যায় ৭-১০ দিন।,৩। কুশি পর্যায় ৪৫- ৬০ দিন।
জনন পর্যায়:
১। কাইছ থোর অবস্থায় ১০ দিন।, ২। গর্ভাবস্থায় ১০ দিন।,৩। শীষ উদগমন ও ফুল ফোটা অবস্থায় ১০ দিন।
পরিপক্ক পর্যায়: ১। দুধ অবস্থায় ১০ দিন। ২। মন্ড বা ক্ষীর অবস্থায় ১০ দিন। ৩। পরিপক্ক অবস্থায় ১০ দিন।
ফসল উৎপাদনের জন্য এসব বৃদ্ধি পর্যায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ধান গাছের
জীবনকালকে মোটামোটি ৭টি ভাগে ভাগ করা যায় –
১। চারা পর্যায় (Seedling stage) ২। কুশি উৎপাদন (Tillering stage)
৩। কান্ড বৃদ্ধি পর্যায় (Stem elongation stage) ৪। কাইচ থোড় উৎপাদন পর্যায় (Booting stage)
৫। ফুল উৎপাদন পর্যায় (Flowering stage) ৬। দানা পুষ্টি পর্যায় (Grain filling stage)
৭। পরিপক্ক পর্যায় (Maturing stage)
বৃদ্ধি পর্যায় ও ধান গাছের জীবনকাল:
একটি ধানের বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর থেকে পুনরায় ধান পাকা পর্যন্ত সময়কে এর জীবনকাল
বলে। বাংলাদেশে বহুজাতের ধান রয়েছে। এসব ধান জাতের জীবনকালও ভিন্ন। ধানের জাত ও
জন্মানোর মৌসুমভেদে ধানের জীবনকালে পার্থক্য হয়। অপর দিকে ধান গাছের জীবনকালের ওপর
এর বৃদ্ধি পর্যায়সমূহের মেয়াদ নির্ভর করে। এখানে বিভিন্ন বৃদ্ধি পর্যায়ের বিবরণ দেওয়া হলো:
১। ধানের চারা পর্যায় (Seedling stage):
বীজ বপনের পর তা অঙ্কুরিত হওয়ার পর থেকে কুশি উৎপাদন শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অবস্থাকে চারা
অবস্থা বলা হয়। ধানের চারা অবস্থায় মেয়াদ নিম্নরূপ হতে পারে-
বোরো মৌসুম : ৩৫ – ৫০ দিন, আউশ মৌসুম : ৩০ – ৪০ দিন, রোপা আমন মৌসুম : ২৫ – ৩৫ দিন
২। কুশি উৎপাদন পর্যায় (Tillering stage)
ধান গাছের গোড়া থেকে গজানো চারাকে কুশি বলা হয়। কুশি ধান গাছের কোন শাখা প্রশাখা নয়।
একটি নতুন চারা। বীজ বপনের ৪০ – ৫০ দিন পর বা চারা রোপণের ১০ – ১৫ দিনের মধ্যেই ধান
গাছে কুশি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। কোন একটি ধান জাতের জীবনকাল ১২০ দিন হলে মোটামোটি
৫০-৬০ দিনের মধ্যেই কুশি উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। জীবনকাল লম্বা হলে কুশি উৎপাদন সময়
সীমাও কিছুটা বাড়ে।
ধান গাছের চারা অবস্থা ও কুশি উৎপাদন অবস্থাকে এক সাথে বাড়ন্তকাল বলে। ধানের জাতের
জীবনকাল ১২০ হলে এর বাড়ন্ত কাল হবে প্রায় ৫৫ দিন। ধানের জীবনকাল ১৬০ দিন হলে চারা
অবস্থাসহ কুশি উৎপাদন মেয়াদ হবে প্রায় ৭৫ দিন। ধানের শেষ পর্যায়ে যেসব কুশি উৎপাদিত হয়
তার সবগুলোতে শীষ নাও হতে পারে।
৩। কান্ড বৃদ্ধি পর্যায় (Stem elongation stage)
এই পর্যায়ে কান্ড দ্রুত লম্বা হতে থাকে। কুশি উৎপাদনের সাথে সাথেই কান্ড দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
কুশি উৎপাদনের মাঝামাঝি থেকে এই পর্যায় ১৫-২৫ দিন মেয়াদি হতে পারে।
৪। কাইচ থোড় উৎপাদন পর্যায় (Booting stage)
ধান গাছের যে অবস্থায় ফুল উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয় তাকে কাইচ থোড় অবস্থা বলে। ধান গাছের
বয়স ১২০ দিন হলে মোটামুটি ৫০ – ৬০ দিন বয়সেই কাইচ থোড় উৎপাদন শুরু হয়।
ধান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাইচ থোর অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধানের কাইচ থোর অবস্থায়
মাটিতে পুষ্টি বা পানির ঘাটতি হলে ধানের ফলন খুবই কমে যায়।
৫। ফুল উৎপাদন পর্যায় (Flowering stage) বা গর্ভ পর্যায় (Reproductive stage)
কাইচ থোড় অবস্থার শুরু থেকে কচি শীষের বহিঃপ্রকাশ পর্যন্ত অবস্থাকে ফুল অবস্থা বলা যায়। ফুল উৎপাদন অবস্থায় ধানের জমিতে উপযুক্ত পরিচর্যা না হলে ধানে চিটা হয়। জীবনকাল ১২০ দিন হলে ধানের ফুল অবস্থা ২৫-৩৫ দিন পর্যন্ত মেয়াদের হয়ে থাকে।
৬। দানা পুষ্টি পর্যায় (Grain filling stage)
এই পর্যায়ে দুধ উৎপাদিত হয়ে ধীরে ধীরে পুষ্ট হতে থাকে। এই পর্যায় ১০-১৫ দিন মেয়াদের হতে পারে।
ধানের জাত:
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে প্রতিকূল ও অপ্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এই পর্যন্ত ১০২ টি (৯৫ টি ইনব্রিড ও ৭ টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বোরো ধানের প্রায় ২৭টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
জাত নির্বাচন
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমন মৌসুম ও এর পরিবেশ উপযোগী ৪১টি [৩৯টি ইনব্রিড (অন্ত: প্রজনন) ও ২টি হাইব্রিড] উফশী ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানা রকম কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে। অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য আমন জাতগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
চারার বয়স : আলোক-অসংবেদনশীল দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদি জাতগুলোর চারার বয়স হবে ২০-২৫ দিন।
আলোক-অসংবেদনশীল স্বল্পমেয়াদি জাতগুলোর চারার বয়স হবে ১৫-২০ দিন।
৪৩ টি জাত বোরো মওসুমের জন্য (বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী)।
২৫ টি জাত বোনা এবং রোপা আউশ মওসুম উপযোগী।
৪৫ টি জাত রোপা আমন মওসুম উপযোগী।
১২ টি জাত বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী।
১ টি জাত বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মওসুম উপযোগী।
১টি জাত বোনা আমন মওসুম উপযোগী।
ব্রি বিভাগ কর্তৃক লবণাক্ততা সহনশীল বোরো মওসুমের জন্য ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬১ এবং ব্রি ধান৬৭ আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যা চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মি. এবং সম্পূর্ণ জীবনচক্রে ৬-৮ ডিএস/মি. লবণাক্ততা সহনশীল। তাছাড়া, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪ এবং ব্রি ধান৭৩ এই জাতগুলো আমন মওসুমে প্রজনন পর্যায়ে ৮ ডিএস/মি.