April 1, 2023, 4:25 am
প্রাকৃতিক ভাবে বিশ্বের কোন না কোন দেশে আঘাত হেনেছে র্টনেডো, আইলা, নাগির্স, সিডোর এবং সর্ব শেষে আম্পানের মত প্রাকৃতিক দূযোর্গ । কিন্তু কখনো থেমে যায় নি অর্থনৈতিক অবস্থা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিছু দেশ।বর্তমানে সারাবিশ্বে র্টনেডো, আইলা, নাগির্স, সিডোর ও আম্পানের থেকেও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে নভেল করোনা ভাইরাস যা কিনা কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা থমকে গেছে।যেখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ শিক্ষা জীবন শেষ করে বেকার হচ্ছে। আবার নতুন করে কোভিড-১৯ এর কবলে পড়ে বেকার হচ্ছে অনেক মানুষ। বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের দেশ। আমাদের দেশে দারিদ্রের হার বেশি। রাজনীতিবিদদের খাম-খেয়ালীপনার কারনে আমাদের অর্থনীতি তেমনভাবে অগ্রসর হতে পারে নি। বেকারত্বের হার এ দেশে প্রকট। তার কারন শিক্ষিত তরুণদের অনুপাতে প্রয়োজনীয় পদ নেই। এই কারনে আমাদের দেশে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিদ্বন্দীতার মুখামুখি হতে হচ্ছে তরুণদের। বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতই। এ ছাড়া সরকারি চাকরি পেতে লাগে মামা চাচা বা ঘুষ । দূষ্প্রাপ্য চাকরির বাজারে বেকারত্ব দূর করতে পারে একমাত্র আত্ন-কর্মসংস্থান। নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি অন্যকেও চাকরি দেওয়া যায়। অনেকেই এখন ব্যবসায়ের দিকে ঝুকে পড়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে আমাদের ব্যবসা ভাবনা পার্ট-১, ২ ও ৩। আজকে ব্যবসা ভাবনা পার্ট-১ প্রকাশিত।
আসুন জেনে নিই ব্যবসা সর্ম্পকে :
“ব্যবসায়” শব্দ টি ইংরেজি “business” শব্দের পারিভাষিক প্রতিশব্দ। “business” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “ব্যস্ত থাকা” অর্থাৎ হয় ব্যক্তিগতভাবে অথবা সমষ্টিগত ভাবে বাণিজ্যিক ভাবে, সমর্থনযোগ্য ও লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকা। সুবিধামত “ব্যবসায়” শব্দটির কমপক্ষে তিনটি ব্যবহার রয়েছে –
ব্যবসায় মূলত চার ধরনের :
ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসাকে যেভাবে দেখা হয় ?
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ব্যবসাকে হালাল ও সম্মানজনক পেশা বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় ব্যবসা হালাল পেশা। পৃথিবীতে সর্ব প্রথম কর্মের সূচনা হয়েছিল আত্ন-কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে। অনেক নবী-রাসূল ও সাহাবী ব্যবসা করেছে। কুদুরী গ্রন্থাকার আল্লামা কুদুরী হাড়ি পাতিলের ব্যবসা করতেন। কুদুরী অর্থ হাড়ি পাতিল। সেই থেকে উনার নাম হয়ে গেছে কুদুরী।
কর্মজীবন শুরু করার জন্য একটি আদর্শ প্লাটফর্ম হলো ব্যবসা। গল্পের মাধ্যমে জানি ব্যবসায় ভাবনা :
ব্যবসা করতে গেলে প্রয়োজন টাকা, সাবেক কাল থেকেই এই ধারণা প্রচলিত। আমরা সকলেই নানা সময়ে শুনে এসেছি, বড় রকমের মূলধন জোগাড় করতে না পারলে নাকি ব্যবসায় নামাই উচিত্ না।
সত্যিই কী তাই? নাকি উদ্ভাবনী, দক্ষতা, শ্রম আর সৃজনশীলতা দিয়ে নেহাতই অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করা সম্ভব?
বিল গেটসের নাম আমরা মোটামুটি সবাই শুনেছি বা জানি। বিল গেটস কে নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। তাঁর ডেস্ক থেকে একবার কয়েক হাজার ডলার পড়ে গিয়েছিল। তিনি সেটা আর তোলেননি। কারণ, সেটা তুলতে গিয়ে তাঁর যতটা সময় খরচ হত, সেই সময় কাজে লাগিয়ে তিনি আরও বেশি টাকা আয় করতে পারতেন।
এই গল্প সত্যি কি মিথ্যা – এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু গল্পের পেছনের মেসেজটা দিনের আলোর মত সত্যি। সময়কে যে কোনও কিছুর চেয়ে বেশি মূল্য দিলে, সময় তা বহু গুণে ফিরিয়ে দেয়। কাজেই, সফল উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম মূল মন্ত্র হল, প্রতিটি মিনিট এর ব্যাপারে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে।
যদি ১ ঘন্টা কাজ করেন, তবে খেয়াল রাখুন ৬০টি মিনিটই যেন কাজে লাগে। দেখবেন, ১ ঘন্টার কাজ ১ ঘন্টার অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাকি সময়টা আপনি অন্য জরুরী কাজে লাগাতে পারবেন। এতে প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
সফল হতে হলে যা করতে হবে ?
আমরা জীবনে সবাই সফল হতে চাই। আমরা নিজের জীবনে সেরা হতে চাই, বিখ্যাত হতে চাই। কিন্তু আমরা কি সবাই সফল হই? এই যে দেখুন, পৃথিবী জুড়ে শত কোটি মানুষ। এদের সবাই কি হতে পারে বিলিনিয়ার, কবি শিল্পী কিংবা সেরা গায়ক? সবাই হয় না, শত কোটি মানুষের ভিতর হাতে গোনা কয়েকজন হন মাত্র। এর কারণ কী? এর কারণ লেগে না থাকা।
জীবনে আমরা সফল না হলে আমরা সবাই বলি আমি চেষ্টা করেছি- হয়নি, অমুক আমার চেয়ে বুদ্ধিমান, স্মার্ট, চালাক। আসলে সফলতার পথে এসব কিছুই না। আপনি আসলে আপনার চেষ্টাটুকু পুরোটা করেন নি, যদি করতেন অন্য কোন ভাবে হলেও আপনি এগিয়ে যেতেন। এই ভাবনাটা আমরা সবাই ভাবতে পারি না।
এখন প্রশ্ন আসে লেগে থাকা কী? কেন বা কিভাবেই লেগে থাকবো?
এঞ্জেলা লি এর মতে, লেগে থাকার গুণটা হচ্ছেন প্যাশন এবং ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ যা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে। তবে এই গুণ হুট করে আসে না বরং চর্চার মাধ্যমে আনতে হয়। একবার লেগে থাকার গুণ চলে এলে ব্যক্তির মাঝে কাজ করার যেমন নেশা বা প্যাশন তৈরি হয় তেমনি কাজ করার জন্য শক্তি আসে মনে। দিনের পর দিন নয় বরং বছরের পর বছর ধরে লেগে থাকতে হয় সফলতার জন্য। লেগে থাকার গুণ হচ্ছে ম্যারাথনের মতো, আপনি যদি জীবনে ম্যারাথনের চেষ্টা করেন তবে আপনার সাফল্য আসবে সব দিক দিয়ে।
লেগে থাকা কি ও কিভাবে লেগে থাকবো । আপনাদের কি মনে আছে রবার্ট ব্রুসের কথা? যিনি সাত সাতবার যুদ্ধে পরজিত হয়ে, এরপর মাকড়শার চেষ্টা দেখে ঠিক ৮ম বারে যুদ্ধ জিতে শত্রু মুক্ত করে ছিলেন নিজের মাতৃভূমিকে। তবে এর ভিতরের গল্প আমরা ক’জন জানি? আমরা সফলতার গল্প শুনি কিন্তু ভিতরের গল্প কখনই শুনি না। আজ একজন জিরো থেকে হিরো হবার গল্প আপনাদের বলবো।
গল্পের নায়ক পেশায় একজন ফিটনেস ট্রেইনার, একজন ব্যবসায়ী, একজন উদ্যোক্তা। বডি ২০ তার হাতে নির্মিত ফিটনেস কোম্পানি। মনে পড়ছে নিশ্চয় কে গল্পের নায়ক, হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন নায়কের নাম বের্তুস আলবার্টাস। বডি ২০ এর সিইও বের্তুস আলবার্টাসের জন্ম আমেরিকার নিম্নবিত্ত পরিবারে। জন্মের ৯ মাসের মাথায় বাবা মায়ের ডিভোর্স হয় আর এরপর শুরু হয় দারিদ্রতা। তার মা ডিভোর্সের পর তাকে এবং তার বোনকে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। এরপর পুরো পরিবার মাতাল নানার সাথে সাথে এ বাড়ি ও বাড়ি করে শেষমেষ রাস্তায় কাটিয়েছে। খুব অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছিলেন জীবনে টাকা পয়সা কিংবা সম্পদের গুরুত্ব এর চেয়ে ব্যক্তির গুরুত্ব বেশি। তিনি দেখেছেন তাদের পছন্দের খেলনা কিংবা কাপড় তার মা বিক্রি করে দিয়েছেন শুধু খাবারের জন্য।
ব্যাপারটা এমন ছিলো যে, দোকানদাররা পর্যন্ত তাদের দোকানে ঢুকতে দিতেন না। বের্তুস আলবার্টাস এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “আমি কখনই ভুলবো না আমি কোথা থেকে উঠে এসেছি, কিভাবে এসেছি। আমি কখনই ভুলবো না দোকানদারেরা কিভাবে আমার আর আমার বোনের দিকে চেয়ে থাকতো, তাদের চোখে আমি দেখেছিলাম ঘৃণা আর অপমান।”
আরও পড়ুন:কেউ অপমান করলে তাকে উত্তর দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?
মনে আছে বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এর বিখ্যাত লাইন “ভুলে যেও না তুমি কে, পৃথিবী কখনই ভুলে যাবে না। তোমার অক্ষমতাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করো, এই ঢাল দিয়ে নিজের ভেতরকে বাঁধ, এই অক্ষমতা আর তোমাকে কাঁদাবে না।” সিরিয়ালের এই কথাগুলো শিখেছিলেন জীবন থেকে। তাই তো ভেঙ্গে না পড়ে শুরু করেছিলেন নতুন করে, অক্ষমতাকে তার ক্ষমতা হিসাবে ব্যবহার করেছেন।
শুরু করেছেন শরীরচর্চা জীবনের শুরুতেই। সেই সাথে করেছিলেন প্রচণ্ড পরিশ্রম আর চেষ্টা। তিনি তার জীবনের সেরা বাণীর তালিকায় বলেছিলেন, “তুমি তাই হবে জীবনে যা তুমি বার বার করো। তাই সেরা হওয়ার জন্য আর কিছু না শুধু চর্চা আর চেষ্টার দরকার।” তিনি বলেন, তার পুরো জীবনে এই কথাটাই মেনে চলেছেন। ফলাফল ও পেয়েছেন আস্তে আস্তে একসময়। স্কুলের সেরা ছাত্র দিয়ে তার ঝুলিতে সাফল্য আসতে শুরু করে। খেলাধুলায় অর্জন দিন দিনকে বাড়তে থাকে তার। বহু পুরষ্কার জিতেছেন এর মাঝে সেরা বলার মতো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বডি বিল্ডিং এবং ফিটনেস টাইটেল। ধীরে ধীরে পদক প্রাপ্তির সাথে সাথে তার জীবনের গল্প আসতে থাকে মিডিয়ার আলোয়। লোকজন আরো আগ্রহী হয় তার সম্পর্কে, লুফে নেয় এই জীবনের গল্প। এর মাঝে তিনি ধরতে পেরেছিলেন মানুষ কি চায়! মানুষ চায় সেসব জিনিসকে যা তাদের অনুপ্রাণিত করে। মানুষ যেখানে অনুপ্রেরণা পায় সেখানে ছুটে যায়, মোটিভেশন লেকচার হলো দেখলে এই কথাটা আপনি ঠিক মানবেন।
আরও পড়ুন:B2B বা বিজনেস টু বিজনেস কি?
তো এই চিন্তা থেকে তার মাথায় এলো ব্যবসার ভাবনা। নিজের লেগে থাকা– চেষ্টাকেই ভিত্তি করে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালে শুরু করেন তার নিজের প্রথম ব্যবসা। বাবার কাছ থেকে টাকা লোন করে নেমে পড়লেন ব্যবসায়, চেষ্টার কারণে খুব দ্রুত ব্যবসায় সফল হতে থাকেন তিনি। ব্যবসায় এত দ্রুত সফলতা পান যে মাত্র তিন মাসে লোনের টাকা পরিশোধ করে দেন বাবাকে।
সেই ব্যবসায়িক সফলতার হাত ধরে এখন তিনি জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত ফিটনেস রিটেইল কোম্পানি বডি ২০ এর সিইও এবং তিনি এর প্রতিষ্ঠাতাও। এই ফিটনেস কোম্পানির মাধ্যমে তিনি ক্লায়েন্টদের প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। নিজের লেগে থাকা গুণের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন হয়েছেন সফল তেমনি আশে পাশের মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছেন তার কাজের মাধ্যমে। তার এই লেগে থাকার ব্যাপারে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন আমি বিশ্বাস করি, “একটি খরগোশ সব সময় পালাবে একটি শেয়াল থেকে, আর শিয়াল ছুটবে খরগোশের পিছু পিছু। শিয়াল ছুটছে কারণ তার ক্ষুধা নিবারণ করবে খরগোশ, আর খরগোশ পালাবে কারণ এখানে তার জীবন মরণের ভাবনা। আমি মনে করি এই ভাবনা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় আপনি কতটুকু বেপরোয়া হলে নিজেকে বদলে আপনার চারপাশের উপর প্রভাব ফেলতে পারবেন।”
যেকোন আলোচনার শুরুতে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হাই হ্যালো জনিত কোন অভ্যর্থনা জানানো উচিত।এতে অপর পাশের ব্যক্তি কোন কাজে ব্যস্ত আছে কিনা অথবা আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী কিনা এ সম্পর্কে জানতে কিংবা সহজেই বুঝতে পারবেন।