March 27, 2023, 5:38 pm
সমগ্র বাংলা ডেস্কঃ বাংলাদেশে গত এপ্রিলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ‘ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের’ শনাক্তের হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়েছে।
বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিকোয়েন্স করা সব নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। মার্চ মাসে সিকোয়েন্স করা মোট নমুনার ৮২ শতাংশ বিটা ভ্যারিয়েন্ট ও ১৭ শতাংশ আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসেও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য ছিল। গত ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সংগৃহীত মোট ৬৪৬টি কোভিড-১৯ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সব নমুনায় কোভিড -১৯ এর আলফা ভ্যারিয়েন্ট (ইউকে-তে প্রথম শনাক্ত), বিটা ভ্যারিয়েন্ট (সাউথ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত), ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতে প্রথম শনাক্ত), ইটা ভ্যারিয়েন্ট (নাইজেরিয়াতে প্রথম শনাক্ত), বি ১.১.৬১৮ ভ্যারিয়েন্ট (আনআইডেন্টিফায়েড) শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘করোনা মহামারি গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি আছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি গ্রামাঞ্চলের। এসব রোগীর বেশিরভাগই রোগের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে এসেছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ৪ জুলাই ৪৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে যে, ভর্তি রোগীদের বেশিরভাই বেশি গ্রামের। রোগীরা হাসপাতালে আসছেন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশ পড়ে, যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ছে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘এখন বর্ষা মৌসুম। অনেকেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলেও সাধারণ সর্দি–জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত বলে ধরে নিচ্ছেন। পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না।’
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ১ নম্বর আলোকঝাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোকছেদুল গনি শাহ জানান, তার এলাকায় ঘরে ঘরে রোগী। প্রত্যেক বাড়িতে জ্বর- সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগী আছেন। ভয়ে কেউই টেস্ট করাতে যাচ্ছেন না।
ঠাকুরগাঁও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমাদের এখানে আগে রোগীই ছিল না। আগের তুলনায় আমাদের এখানে রোগী শনাক্ত অনেকটা বেড়ে গেছে। সব জায়গাতেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে আমার ধারণা। গ্রাম-শহর সব জায়গায় এখন একই অবস্থা।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন অবস্থা তো ভয়াবহ। একদিকে সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনের কোনও বিকল্প নেই। তাছাড়া সামনে কোরবানি আছে, সব মিলিয়ে এখন কঠিন একটা অবস্থা। আর এবারের সংক্রমণ একদম ভিন্ন। আগের সংক্রমণ ছিল মূলত জেলা শহরগুলোতে, এখন সেটা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। কাজেই লকডাউন দিয়ে এটা ঠেকানো খুব কঠিন কাজ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই রোগীদের আগেই আইসোলেশনে নিতে পারতাম, তাহলে কিন্তু লকডাউন ছাড়াও সংক্রমণ কমানো যেত। এই পন্থা একটু কষ্টকর বলেই করা যাচ্ছে না। তাই সহজ কাজ হিসেবে লকডাউন দিতে হচ্ছে।’