March 21, 2023, 6:48 am
নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া শহরতলির মাটিডালি এলাকার ছেলে কৌশিক। ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে কৌশিক।তাঁর বাবা বগুড়া শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী। সুদর্শন, মেধাবী, চতুর কৌশিক স্কুলে যেমন ছিল ভাল শিক্ষার্থী তেমনি বিজ্ঞানের প্রতিও ছিল তার প্রচুর আগ্রহ। ২০১৯ সালে, কৌশিক রাষ্ট্রপতির পুরষ্কার সহ রাজশাহী বিভাগের সেরা স্কাউটের খেতাব পেয়েছিল। কৌশিক বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এবছরে এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে কৌশিকের নাম কে না জানে? বগুড়ার গাবতলীতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অপরাধীর সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ কিশোরটিকে আবিষ্কার করেছে। ঘটনার ১৮ দিন পর গত ২২ জানুয়ারী সকালে গাজীপুরের টঙ্গীর নিশতনগর থেকে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পৃথিবীর বেশিরভাগ সাইবার অপরাধীদের সাথে ছিল তাঁর বন্ধুত্ব। তার ৫২টি ভুয়া ফেসবুক এবং ২২টি ভুয়া ইমেল আইডি ছিল। কৌশিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের তালিকায় তালিকাভুক্ত হতে চেয়েছিল। এজন্য ডার্ক ওয়েবে ছিল তার অবাদ বিচরণ। ডার্কওয়েব হল তথ্য প্রযুক্তি বা ডিপ ওয়েবের গোপন জগতের একটি অংশ, যেখানে সব ধরণের অবৈধ কার্যকলাপ হয়। হোয়াইট ডেভিলস নামের একটি হ্যাকিং গ্রুপের সদস্য ছিল কৌশিক। সে একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাশিয়া থেকে এনেছিল পারক্লোরিক এসিড, ক্লোরোফম, এডিনল ইথানল ও পটাশিয়াম ডাইক্লোরেট নামের বিভিন্ন ভীতিকর রাসায়নিক পদার্থ। নিজের বাড়িতে বসে সে তার ব্যক্তিগত ল্যাবে এসব নিয়ে গবেষণা চালাত।
তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে বগুড়ার গাবতলীতে। তাই প্রায়ই কৌশিক বেড়াতে যেত বোনের বাড়িতে। বোনের বাড়িতে বেড়াতে ব্যাংক ডাকাতির চিন্তা আসে কৌশিকের মাথায়। আর গাবতলীর ব্যাংক ডাকাতি ছিল কৌশিকের অ্যাডভেঞ্চারের অংশ। এজন্য অত্যাধুনিক ইফেক্টসে নির্মিত বলিউডের ছবি ধুম-৩ (থ্রি) সে ১৫৪ বার দেখে নিজেকে প্রস্তুত করে ব্যাংক ডাকাতির জন্য। ধুম-৩’ থ্রিলার ছবিতে সর্বাধুনিক ভিএফএক্সের মাধ্যমে দুঃসাহসিক সব ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করেন বলিউড কিং আমির খান। সেখানে ই-বাইক (যা মাটি ও পানিতে সমানভাবে চলে) ব্যবহার করে ডাকাতির দুঃসাহসিক দৃশ্য তুলে ধরা হয়। ওই ছবির দৃশ্যে ঝুঁকি থাকায় সিনেমার শুরুতেই সতর্কবাণী জুড়ে দেয় সেন্সর বোর্ড।
সে প্রথমে একটি মুখোশ এবং বিশেষ গ্লোভস পরে ছাদে উঠে। এই গ্লোভগুলি ব্যবহার করে স্পাইডারম্যানের মতো দেয়াল আরোহণের জন্য মইয়ের প্রয়োজন হয় না। তারপরে কৌশিক ছাদের সিঁড়ির তালা কেটে ভিতরে প্রবেশ করে।শেষে ব্যাংকের ভেতরের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তার অভিজ্ঞতাটি ব্যবহার করে, ডাকাতির সময় সে ব্যাংকে পাহারারত আনসারদেরকে নাইট্রোজেন সলিউশন নিক্ষেপ করে এবং তার ছুরিরাঘাতে আহত হয়েছেন দুই আনসার সদস্য। টিয়ার গ্যাসের মতো এই অ্যাসিডটিও কৌশিকের নিজস্ব ল্যাবে তৈরি করে। ১৮ দিন সন্ধান চালিয়ে গত ২২ জানুয়ারী সকালে গাজীপুরের টঙ্গীর নিশতনগর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে সে পুলিশকে জানায়, সে নাকি সেনা কমান্ডোর মতই নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম। এমনকি মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই সে তৈরি করতে পারে বিrজ্জনক দোলনা বন্দুক। একই সাথে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে তৈরি করতে পারে চেতনানাশক গ্যাসও। যেটি স্প্রে করলে যে কেউ চেতনা হারাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
এ ব্যাপারে তার বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, সে নাকি মা-বাবার কথাও শুনে না। তারা ছেলে কৌশিকের অপরাধের ব্যাপারে আর কিছু জানাতে রাজি হননি যোগাযোগ মাধ্যমকে।