1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা (Adolescent Health Care)

  • Update Time : বুধবার, জুলাই ৮, ২০২০

মাহফুজুর রহমানঃ রবি ঠাকুরের বিখ্যাত ছোটগল্প “ছুটি”-র ফটিকের কথা মনে আছে? সেখানে বয়ঃসন্ধিকালীন বয়সের প্রতিভূ চরিত্র হিসেবে ফটিক সম্পর্কে যা বলা হয়েছিলো তা যেন আমাদের কিশোর-কিশোরীদেরই মনের কোটরবন্দী কথা, “তেরো-চৌদ্দ বছরের” ছেলেমেয়েরা “সর্বদা মনে-মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না… অথচ, এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়।“

এইজন্যই বাংলাদেশের প্রতিটি বাসিন্দার ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ওয়েবের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি কর্মপন্থা তৈরির সংস্থাগুলি থেকে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলি থেকে সম্প্রদায়ের স্তর পর্যন্ত সারা দেশ জুড়ে বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো তিন স্তরে ভাগ করা যায়: মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল তৃতীয় স্তরে রয়েছে। জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র মাধ্যমিক স্তর হিসেবে বিবেচিত। উপজেলা (সাব জেলা) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক (সর্বনিম্ন স্তর স্বাস্থ্য সুবিধা) হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের স্বাস্থ্য প্রদানকারী। বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংগঠন) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই জটিল স্বাস্থ্য নেটওয়ার্কে অবদান রাখে।

জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিগুণ রোগের মুখোমুখি হয়: অসংক্রামক রোগ: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, দীর্শ্বাঘমেয়াদী শ্বসনতন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার এবং সংক্রামক রোগ: যক্ষ্মা, এইচআইভি, ধনুষ্টংকার, ম্যালেরিয়া, হাম, রুবেলা, কুষ্ঠব্যাধি এবং ইত্যাদি।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে সংক্রামক এবং অ-সংক্রামক রোগ, অপুষ্টি, পরিবেশগত স্যানিটেশন সমস্যা এবং অন্যান্য।

বাংলাদেশের মোট জনসংখার প্রায় এক-চতুর্থাংশ কিশোর কিশোরী । এ কিশোর কিশোরীদের শিক্ষা, জীবন-দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের ভবিষ্যত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে কৈশোর বলে। এর যে কোনো এক সময়ে বয়ঃসন্ধিকাল আসতে পারে। আমাদের দেশে বয়ঃসন্ধি শুরু হয় ১১ বছর বয়সে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েরা দ্রুত বড় হতে থাকে। শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন আসে। এসময় নিজের শারীরিক পরিবর্তনে ছেলে মেয়েরা হীনমন্যতায় ভোগে। শরীর এবং শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের ফলে এসময় ছেলে মেয়েরা নতুন জগতে প্রবেশ করে। তাদের চিন্তা-চেতনায় দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। তারুন্যের নব উদ্দীপনার উদাসীনতায় নিজের প্রতি খেয়াল থাকেনা অনেক ছেলে মেয়েদের। আবার যখন খেয়াল হয়, তখন নিজের কাছেই নিজেকে সমাজের বেমানান বস্তু হিসেবে ধারণা হতে থাকে।

বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোর :

বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের শরীরে ও মনে নানা ধরণের পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং যৌবনে এসব পরিবর্তন গুলো পূর্ণতা লাভ করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কে কৈশোর বলে। এ বয়সে ছেলেদের কিশোর ও মেয়েদের কিশোরী বলাহয় বয়ঃসন্ধি কাল। ১০ বছর এবং ১৯ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাকে বয়ঃসন্ধি কাল বলে। মানুষের জীবন শুরুর অর্থাৎ সাধারণভাবে জন্ম থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময়টাকে শৈশব বলে । আমাদের মতো দেশে বয়ঃসন্ধি শুরু হয় ১১ বছর বয়সে। বয়ঃসন্ধি কালে ছেলেমেয়েরা দ্রুত বড় হতে থাকে। শরীর এবং শরীর বৃত্ত সংক্রান্ত পরিবর্তনের ফলে এ সময় ছেলে মেয়েরা নতুন জগতে প্রবেশ করে। তাদের চিন্ত চেতনায় দেখাদেয় ব্যাপক পরিবর্তন। শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ এবং দায়িত্ব বোধযোগ হতে থাকে এ সময়ে । অর্থাৎ বয়ঃসন্ধি হলো একাধারে দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক একটা অভিজ্ঞতা। শরীরের হরমোন গুলো হলো রসায়ন। এগুলো মূলত মানুষের শরীরে তৈরি হয় এবং শরীর কখন ও কিভাবে বাড়বে তা নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন । একটি ছেলে যখন শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধি কালে প্রবেশ করে তখন তার পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি হতে থাকে। অন্ডকোষ সৃষ্ট এ টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌন গ্রন্থির গঠন এবং যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে। আমাদের দেশে ১১ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে মানুষের যৌনাঙ্গ এবং জননতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটে থাকে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে বিকাশ পর্ব টি ১১ থেকে ১৭ বছর । এ বয়সেই একটি ছেলের জীবনে প্রজনন ক্ষমতার সূচনা হয়। তার উচ্চতা বাড়ে। কাঁধ চওড়া হয়। কণ্ঠস্বর ভারী হয়। লিঙ্গের গোড়া ও বগলে লোম গজায়। আর অন্ডকোষে শুরু হয় শুক্রকোষ উৎপাদন। এক সময় ঘুমের মধ্যে যখন লিঙ্গ পথে বীর্য বেরিয়ে আসে, তাকে স্বপ্নদোষ বলে, তখন ছেলেটি নিজে কে সাবালক ভাবে। বয়ঃসন্ধিতে জননেন্দ্রিয়ের পূর্ণ বিকাশ হতে থাকে বলে ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ বোধকরে। আমাদের দেশের মেয়েদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এ সময়টা হলো মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কাল । এ বয়সে মেয়েদের উচ্চতা বাড়ে। নিতম্ব প্রশস্ত ও স্তন স্ফীত হয়। বগল ও যৌনাঙ্গের আশপাশে লোম গজায়। ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হয় এবং প্রতিমাসে ঋতুস্রাব শুরু হয়। প্রতি ২৮ দিনে এ ঋতুচক্র হয়ে থাকে । কারোবা ২৮ দিনের আগে কিংবা পরে হয়। প্রত্যেক মাসের ঋতু চক্রের মাঝামাঝি সময়ে দু’টি ডিম্বকোষের যেকোনো একটি থেকে একটি ডিম্বাণু নিঃসৃত হয় এবং এর ১৪ দিন পর ঋতুস্রাব হয়ে থাকে।
এখানে মনে রাখা দরকার যে, মেয়েদের ডিম্বাণুর সংখ্যা অনেকটা নির্ধারিত। ডিম্বাশয়ে প্রায় চারলাখ ডিম্বাণু জমা থাকে এবং একজন মেয়ে তার প্রজনন জীবনে মাত্র ৪০০ এর মতো ডিম্বাণু নিঃসরণ করে থাকে । বয়ঃসন্ধি কাল থেকে রজঃনিবৃত্তি পর্যন্ত এ ডিম্বাণু গুলো নিঃসৃত হয়ে থাকে। এ জন্য বলা হয়ে থাকে যে, মেয়েদের প্রজনন কাল নির্ধারিত এবং পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা আজীবন। উল্লেখ্য মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে প্রজনন কালে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। বয়ঃসন্ধি কাল ছেলেমেয়ে দের জন্য নতুন জগৎ। প্রত্যেক মানুষকেই এ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এ সময় ছেলেমেয়ে দের মন মেজাজ খুব ওঠানামা করে। এই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তো পরক্ষণেই আবার খুব খারাপ লাগছে। এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিলো তো পরক্ষণেই তার পরিবর্তন। মনে হয় তো দারুণ খুশি, কিন্তু একটু পরেই ঘন বিষাদ। এ সময় শরীরের নিঃসৃত যৌন হরমোন গুলো ছেলেমেয়েদের মন মেজাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাদের নিজেদের রাজারানী ভাবতে ভালোলাগে। তাদের আচারআচরণে অনেক অভিভাবক বিব্রত বোধ করেন। কাউকে না মানার মনোভাব তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবে জেগে ওঠে। এ সময় বাবা-মা কিংবা অন্য অভিভাবকদের সাথে তাদের বনিবনা হয় না।একটা দুর্বিনীত ভাব সব সময় উত্তেজিত করে রাখে। নেতিবাচক চিন্তা-চেতনা তাদের প্রভাবিত করে। পারিবারিক পরিবেশ, স্কুল-কলেজের পরিবেশ, বন্ধু বান্ধবের সাহচর্য এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক তাদের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাদের মনে এক প্রকার লোভ লালসা বাসাবাঁধে। তারা অনেক কিছু পেতে চায়। ভোগ করতে চায়। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়। প্রেমের নেশা এ সময়ের অন্যতম নেশা। জীবন বিলিয়ে দিয়েও তারা প্রেমের সফলতা বাস্তবায়ন করতে চায়। কারোকারো মধ্যে যৌন উচ্ছৃঙ্খলা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অনেকেই আবার এ বয়সেই যৌন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনটাকে বিষিয়ে তোলে। এ বিশৃঙ্খলার পরিণাম হচ্ছে বিষাদ গ্রস্ততা। ফলে অনেকের মধ্যে নিজেদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোরের যে ঝুকি পরিলক্ষিত হয় :

  • বন্ধুবান্ধবদের চাপে পড়ে তারা বিপদজনক কাজে জড়িয়ে যেতে পারে।
  • কৌতুহলের বসে বা কোন অসৎ সঙ্গে পড়ে ধূমপান, মাদকাসক্তি, অনিরাপদ যৌন-আচরণ সহ নানা ধরনের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে পারে।
  • প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে প্রজননতন্ত্রে নানা ধরণের রোগ সংক্রমণ এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্ভবনাও বেড়ে যেতে পারে।

কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য :

একটি ছেলে যখন শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধি কালে প্রবেশ করে তখন তার পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরি হতে থাকে। একটি মেয়ে যখন শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করে তখন তার ডিম্বাশয় থেকে প্রজনন কালে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। এসব হরমোনের কারণে বয়ঃসন্ধিতে প্রজননেন্দ্রিয়ের পূর্ণবিকাশ হতে থাকে বলে ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। এসময় ছেলেমেয়েদের মন মেজাজ খুব ওঠা নামা করে। এই ভালো লাগছে তো পরক্ষণেই আবার খুব খারাপ লাগছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে এবং যেকোনো কিছু নিয়ে দ্বিধান্বীত থাকে। এই মনে হয় দারুণ খুশি, কিন্তু একটু পরেই ঘন বিষাদ। এসময় শরীরের নিঃসৃত যৌনহরমোন গুলো কিশোর-কিশোরীর মন মেজাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

বয়ঃসন্ধি কালেই কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে, তাই এসময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য সমন্ধে সঠিক শিক্ষার প্রয়োজন। কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে পারলে, সুষ্ঠুভাবে নিজেদের যত্ন নিতে পারবে এবং এ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ-সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারবে। এসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ, যৌনরোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করার জ্ঞান থাকাটা জরুরী।

প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় যা যা করণীয় :

  • পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
  • নিরাপদ যৌন আচরণ সম্পর্কে জানা ও তা মেনে চলা।
  • প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ, যৌন রোগ সম্পর্কে জানা ও প্রতিরোধ করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা।
  • অল্প বয়সে বিয়ে করা থেকে নিজেকে বিরত থাকা এবং অন্যদের উদ্বুদ্ধ করা।

নিরাপদ যৌন আচরণের জন্য যা করণীয় :

  • ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন এবং শারীরিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কিশোর-কিশোরীদের এ বয়সে যৌন আচরণের ক্ষেত্রে সংযত থাকা উচিৎ।
  • যৌন চিন্তা যাতে মনে কম আসে সেজন্য পড়াশোনা, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা সহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা প্রয়োজন।
  • অশ্লীল বইপত্র এবং ভিডিও বা সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
  • যৌন নির্যাতনের শিকার হলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মা-বাবা বা বিশ্বস্ত কোনো মানুষকে বিষয়টি জানানো দরকার।
  • কোন কারণে যদি কিশোর বয়সে বিয়ে হয়েই যায় তবে অবশ্যই পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর পরামর্শমতো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিৎ।

বয়ঃসন্ধি সময়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর খাবার দাবারঃ

সন্তানের বয়ঃসন্ধি কালে (বয়স ১১ থেকে ১৪ বছর) খাবার দাবারে অভিভাবকদের বাড়তি সচেতনতা দরকার। কারণ এ সময় হরমোনের পরিবর্তনের জন্য কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। বয়ঃসন্ধি কালে তারা বেড়ে ওঠে তরতর করে। এ বয়সে প্রয়োজন বেশি পরিমাণ শক্তি ও পুষ্টির। তাই খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিৎ। এ সময় ছেলেমেয়েদের খাওয়া-দাওয়ার রুচির বদল হয়। শুধুস্বাস্থ্য গত দিক নয়, এ সময়ের খাদ্যাভ্যাসন শিশুর পরবর্তী জীবনের পছন্দনীয় খাদ্য তালিকার ভিত গড়ে তোলে। খাওয়া-দাওয়ায় এসময় একটু অবহেলা করলেই পরে পুষ্টিহীনতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হয়। শর্করা খাবারের পাশাপাশি হাড়ের বৃদ্ধির জন্য দরকার ক্যালসিয়াম ও আয়রন। এসব পাওয়া যাবে দুধ, ডিম ও ফলমূলে। এ রকম বয়সে দুধ খেতে চায়না অনেকেই । তাই তাদের সরাসরি দুধ না দিয়ে দুধের তৈরি ফিরনি, দই, সেমাই তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। এ সময় হাড়ে মিনারেলের ঘাটতি থাকলে পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরেসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মিনারেল পাওয়া যাবে নানা ফলমূল ও শাক সবজিতে। বয়ঃসন্ধির সময় মেয়েদের আয়রনের ঘাটতি এড়াতে খেতে হবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। ডিম, ডাল, মাছ, মাংস ও সবুজ শাকে তা পাওয়া যাবে। কিশোরীরা যদি শারীরিক গঠনের ব্যাপারে সচেতন হতে চায়, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, তারা যেন খাবার খাওয়া কমিয়ে না দেয়। বরং সুষম খাদ্য খেয়ে ব্যায়াম কিংবা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালরি কমাতে হবে। এ বয়সী ছেলেমেয়েদের ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন এবং কার্বো হাইড্রেট আছে এ রকম খাবার খেতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক সবজি, দেশীয় বিভিন্ন ধরণের ফল, ডাল, সিমের বিচি, মাছ, ডিম, দুধ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি কাল যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, তাই এ সময় অভিভাবকদের একটু সচেতন হওয়া দরকার।

বয়ঃসন্ধিকালে পরিবারের ভূমিকার কেমন হওয়া প্রয়োজনঃ

বয়ঃসন্ধিতে থাকা ছেলে মেয়েরা ভীষণ কৌতূহলপ্রবণ হওয়ায় অনেক সময় তাদের বিপথগামী হওয়ার, মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়া, অযাচিত ঝুঁকি নেয়া বা অপসংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।

আবার এই বয়সটায় স্বাধীন আত্মপরিচয় গড়ে ওঠায় তারা সব কিছু নিয়ে ভীষণ সংবেদনশীল থাকে।

তাই তাদের সঠিক পথে রাখতে পরিবারকে কৌশলী ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।

“এই বয়সটাতে ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের চাইতে বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। অনেকেই বাবা মায়ের বাঁধা মেনে নিতে পারে না রেগে যায়। এ বিষয়গুলো বাবা মায়ের পক্ষে নেয়াও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ধৈর্য হারালে চলবে না। তাদের আচার আচরণের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।”

এক্ষেত্রে সন্তানের সাথে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা কোনভাবেই গায়ে তোলা যাবে না। এছাড়া তুলনা করা, ছোট করে কথা বলা যাবে না।

তার মানে এই নয় যে তারা যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে।

বরং সন্তানের পছন্দ, অপছন্দের প্রতি সম্মান জানিয়ে সেটা বুঝিয়ে বলতে হবে। যেন তার আত্মসম্মানে আঘাত না আসে আবার ভাল-মন্দের ব্যবধানটাও বোঝানো যায়।

এই বয়সে ছেলে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মিস সরকার।”বাচ্চাদের একটু একটু করে ছাড়তে হবে। শিশুদের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তার ব্যাগ চেক করা, মোবাইল চেক করা ডায়রি খুলে পড়া এসব করা যাবে না। বন্ধুবান্ধবের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করা যাবে না। তবে তারা কী করছে, কাদের সাথে মিশছে সেটা অন্যভাবে সুপারভিশন করতে হবে। না হলে তারা বাবা মার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটা হারিয়ে ফেলবে।”

কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শ যেখান থেকে পাওয়া যায়ঃ

পরিবার কল্যাণ সহকারী

কমিউনিটি ক্লিনিক

স্যাটেলাইট ক্লিনিক

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

জেলা সদর হাসপাতাল

এনজিও ক্লিনিক

বেসরকারি ক্লিনিক

শেষকথাঃ
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “তেরো-চৌদ্দ বছরের মতো, এমন বালাই আর পৃথিবী তেনাই।’’ আসুন, প্রাকৃতিক এই স্বাভাবিক পরিবর্তনের ধারায় নিজের সন্তান, আশেপাশের আত্মীয় স্বজনদের কাছে ভয়ের এই বিষয়টাকে জয়ের করে তুলতে সহায়তা করি। আপনার, আমার, সবার একটু ইতিবাচক সহযোগিতাই পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসবে।

সবার জেনে রাখা উচিৎ

  • ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়, ২০ বছরের আগে সন্তান নয়।
  • সুস্থ্য শিশু সুস্থ্য মা দেখতে যদি চাও সঠিক পরিকল্পনা করে সংসার সাজাও
  • কোন কারণে যদি সন্তান নষ্ট হয়, তাহলে এক বছরের আগে গর্ভধারণ নয়।
সমগ্র বাংলার পাঠক বন্ধুরা আগামীতে জানতে পারবেন কিশোর-কিশোরীদের মাথায় কি চলছে এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category