February 9, 2023, 9:43 am
কারক শব্দের অর্থ, যে করে যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্য পদের যে সম্বন্ধ হয় তাকে কারক বলে।
কারক শব্দের গঠন- কৃ+ণক (অক) = কারক।
যেমন- ‘রনি ফুটবল খেলছে’ এখানে ‘খেলছে’ একটি ক্রিয়াপদ। ‘খেলছে’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘রনি’ নামক নামপদের সম্বন্ধ হয়েছে। এই সম্বন্ধ বা সম্পর্কই কারক।
কারকের প্রকারভেদ:
কারক ছয় প্রকার। যথা:
১। কর্তৃকারক ২। কর্মকারক
৩। করণ কারক ৪। সম্প্রদান কারক
৫। অপাদান কারক ৬। অধিকরণ কারক
কর্তৃককারক:
বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। যেমন-
ক) মিতা নাচে। [ মিতা কর্তৃকারক ]
খ) হাবিব কবিতা লেখে। [ হাবিব কর্তৃকারক ]
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ-
১) ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্তৃকারক চার প্রকার। যথা-
ক) মুখ্যকর্তা খ) প্রযোজক কর্তা গ) প্রযোজ্য কর্তা ঘ) ব্যতিহার কর্তা
মুখ্যকর্তা: যে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে মুখ্যকর্তা বলে। যেমন- সুমন ক্রিকেট খেলছে।
প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন অন্যকে দিয়ে কোন কাজ করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
প্রযোজ্য কর্তা: মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন- মা ছেলেকে ভাত খাওয়াচ্ছেন। শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
ব্যতিহার কর্তা: কোন বাক্যে যখন দুজন কর্তা একত্রে একজাতীয় কাজ করে তখন তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন- রাজায় রাজায় লড়াই। বাঘে-মহিষে একই ঘাটে জল খায়।
বাক্যের প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা তিন প্রকারের হতে পারে। যথা-
ক) কর্মবাচ্যের কর্তা-কর্মপদ প্রাধান্য পায়। যেমন- পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।
খ) ভাববাচ্যের কর্তা- ক্রিয়ার প্রাধানসূচক বাক্য। যেমন- আমার যাওয়া হবে না।
গ) কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা- কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়। যেমন- ঘড়িটা চলে ভাল।
কর্ম কারক :
যাকে আশ্রয় করে বা অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে কর্মকারক বলে। যেমন- ক) মামুন পত্রিকা পড়ে [পত্রিকা কর্মকারক] খ) ঝুমুর ছবি আঁকছে [ছবি কর্মকারক]
কর্মকারক দুই প্রকার- ক) মুখ্যকর্ম খ) গৌণকর্ম
কখনও কখনও কোন ক্রিয়ার দুটি করে কর্ম থাকে। দুটির মধ্যে ক্রিয়পদের সাথে যার মুখ্য সম্বন্ধ থাকে তাকে মুখ্যকর্ম বলে এবং ক্রিয়াপদের সাথে যার গৌণ সম্বন্ধ থাকে তাকে গৌণকর্ম বলে। সাধারণত মুখ্য কর্ম বস্তু বাচক ও গৌণ কর্ম প্রাণিবাচক হয়। গৌণ কর্মে বিভক্তি হয়। মুখ্য কর্মে হয় না। যেমন- মা শিশুকে (গৌণ) চাঁদ (মুখ্য) দেখাচ্ছেন।
করণ কারক:
করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র / সহায়ক / উপায়। অর্থাৎ যা দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন হয় তাকে করণ কারক বলে। যেমন-
ক) আমরা কানে শুনি [ ‘কানে’ করণ কারক ]
খ) মন দিয়ে বিদ্যা অর্জন কর [ ‘মন’ দিয়ে করণ কারক ]
সম্প্রদান কারক:
যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কোন কিছু দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা বোঝায় তাকে ‘সম্প্রদান কারক’ বলে। যেমন- ভিখারীকে ভিক্ষা দাও। এ বাক্যে ভিখারিকে স্বত্ব ত্যাগ করেই দান করা হয়- তাই ‘ভিখারিকে’ সম্প্রদান কারক। ‘কাকে’ এ প্রশ্ন করে ক্রিয়াপদের সাথে সম্প্রদান কারকের সম্পর্ক বের করতে হয়। গরিবকে কাপড় দাও। এখানে কাকে দেবে? ‘গরীবকে’ ফলে গরীবকে সম্প্রদান কারক।
যেখানে নিজের জিনিস অপরকে দান করা হয় সেখানেই প্রকৃত সম্প্রদান কারক হয়। দান না বোঝালে সম্প্রদান কারকের প্রশ্ন উঠে না। যেমন- ‘ধোপাকে কাপড় দাও’। এখানে ধোপাকে কাপড় দান করা বোঝায় না, ধোপাকে কাপড় কাঁচতে দেয়া বোঝায়। ‘চাকরকে বেতন দাও’ ‘সরকারকে কর দাও’ এসব ক্ষেত্রে সম্প্রদান কারক হয় না।
বাংলায় কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বিভক্তি একরকম হওয়ায় সম্প্রদান কারককে কর্মকারকের অন্তর্গত করার পক্ষে অনেকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিঃদ্রঃ সম্প্রদান কারকে কখনও দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় না, সবসময় চতুর্থী বিভক্তি হয়।
স্বত্ত্বহীন দান:
১. সমিতিতে চাঁদা দাও। সম্প্রদানে ৭মী।
২. সৎপাত্রে কন্যা দান কর। সম্প্রদানে ৭মী।
৩. ভিখারীকে ভিক্ষা দাও। সম্প্রদানে ৪র্থী।
৪. সর্বভূতে ধন দাও। সম্প্রদানে ৭মী।
৫. ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। সম্প্রদানে ৪র্থী।
৬. দরিদ্রকে ধন দাও। সম্প্রদানে ৪র্থী।
৭. তোমায় কেন দেই নি আমার সকল শূন্য করে। সম্প্রদানে ৭মী।
৮.তোমাকে সঁপিনু মোর যাহা কিছু প্রিয়ে। সম্প্রদানে ৪র্থী।
৯.গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে। সম্প্রদানে ৭মী।
১০.গৃহহীনে গৃহ দাও। সম্প্রদানে ৭মী।
১১.অন্ধজনে দেহ আলো। সম্প্রদানে ৭মী।
১২.ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও। সম্প্রদানে ৪র্থী।
১৩.মৃতজনে দেহ প্রাণ। সম্প্রদানে ৭মী।
নিস্বার্থ কাজ:
১. আমায় একটু আশ্রয় দিন। সম্প্রদানে ৭মী।
২. গুরুজনে কর নতি। সম্প্রদানে ৭মী।
৩. তাই দিই দেবতারে। সম্প্রদানে ৪র্থী।
৪. দীনে দয়া কর। সম্প্রদানে ৭মী।
৫. দিব তোমা শ্রদ্ধাভক্তি। সম্প্রদানে শূন্য।
৬. সর্বজনে দয়া কর। সম্প্রদানে ৭মী।
৭. সকল কর্মফল ভগবানে অর্পণ কর। সম্প্রদানে ৭মী।
৮. দেবতার ধন কে যায় ফিরায়ে লয়ে। সম্প্রদানে ৬ষ্ঠী।
৯. প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই, তাই দিই দেবতারে। সম্প্রদানে ৭মী।
১০. সকল কর্মফল ভগবানে অর্পণ কর। সম্প্রদানে ৭মী।
১১. সর্বশিষ্যে জ্ঞান দেন গুরুমহাশয়। সম্প্রদানে ৭মী।
নিমিত্তার্থে সম্প্রদান:
১. সুখের লাগিয়া এ গর বাঁধিনু। নিমিত্তার্থে ৬ষ্ঠী।
২. বেলা যে পড়ে এল জলকে চল। নিমিত্তার্থে ৪র্থী।
৩. জলকে চল। নিমিত্তার্থে ৪র্থী।
৪. তারা তীর্থে যাত্রা করল। সম্প্রদানে ৭মী।
অপাদান কারক .
যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহী, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয়, তাকেই অপাদান কারক বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ‘কোথা হতে’ দ্বারা প্রশ্ন কলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাকে অপাদান কারক বলে।
যেমন:
উৎপন্ন – দুধ থেকে ছানা হয়।
ভীত – শিক্ষককে বড্ড ভয় পাই।
রক্ষিত – বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা।
বিরত – পাপে বিরত হও।
পরাজিত- পরাজয়ে ডরে না বীর।
গৃহীত/প্রাপ্ত- পথে টাকা কুড়িয়ে পেয়েছি।
বঞ্চিত – কেন বঞ্চিত হব চরণে।
চ্যুত – গাছ থেকে ফল পড়ে।
শ্রু ত – মায়ের মুখে গল্পটি শুনেছি।
ক) বস্তুর রূপান্তর ঘটলে অপাদান কারক হয়। যেমন- তিলে তৈল হয়।
খ) ভিতর থেকে বাইরে গেলে অপাদান কারক হয়। যেমন- স্কুল পালানো ভাল নয়।
বিঃদ্রঃ বাইরে থেকে ভেতরে গেলে অধিকরণ কারক হয়। যেমন- আমি স্কুলে যাব।
গ) দূরত্ব বোঝালে অপাদান কারক হয়। যেমন- ঢাকা থেকে যশোর তিনশো কিলোমিটার দূরে।
ঘ) তারতম্য বোঝালে অপাদান কারক হয়। যেমন- মেহেদীর চেয়ে হাসান লেখাপড়ায় ভাল।
ঙ) কালবাচক শব্দের ক্ষেত্রে অপাদান কারক হয়।যেমন- তিন দিন ধরে আমি জ্বরে ভুগছি।
চ) আধার- স্বর্গ থেকে পুষ্প বর্ষিত হল।
অপাদান কারকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদাহরণ:
উৎস, উৎপাদন, রুপান্তর:
০১. ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না। – অপাদানে ষষ্ঠী।
০২. মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। – অপাদানে ৫মী।
০৩. সাদা মেঘে বৃষ্টি হয় না। – অপাদানে ৭মী।
০৪. সব ঝিনিকে মুক্তা পাওয়া যায় না। – অপাদানে ২য়।
০৫. সুখের চেয়ে শান্তি ভাল। – অপাদানে ৬ষ্ঠী।
০৬. লোক মুখে এ কথা শোনা যায়। – অপাদানে ৭মী।
০৭. লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। – অপাদানে ৭মী।
০৮. মেঘে বৃষ্টি হয়। – অপাদানে ৭মী।
০৯. দুধে ছানা হয়। – অপাদানে ৭মী।
১০. তিলে তৈল হয়। – অপাদানে ৭মী।
১১. জ্ঞানে বিমল আনন্দ লাভ হয়। – অপাদানে ৭মী।
১২. জলে বাষ্প হয়। – অপাদানে ৭মী।
১৩. চোখ দিয়া পানি পড়ে। – অপাদানে ৩য়া।
১৪. গাছে তক্তা হয়। – অপাদানে ৭মী।
১৫. কত ধানে কত চাল তা আমি জানি। – অপাদানে ৭মী।
১৬. এ জমিতে সোনা ফলে। – অপাদানে ৭মী।
১৭. এ মেঘে বৃষ্টি হয় না। – অপাদানে ৭মী।
১৮. সব ঝিনুকে মুক্তা মিলে না। – অপাদানে ৭মী।
১৯. চোখ দিয়ে জল পড়ে। – অপাদানে ৩য়া।
২০. সব ঝিনুকে মুক্তা মিলে না। – অপাদানে ৭মী।
২১. কত ধানে কত চাল, সে আমি জানি। – অপাদানে ৭মী।
২২. পড়ায় বিরত হয়ো না। – অপাদানে ৭মী।
চ্যুত, বিচ্যুত, নির্গমণ:
০১. ট্রেনটি ঢাকা ছাড়ল। – অপাদানে শূন্য।
০২. স্কুল পালাইও না। – অপাদানে শূন্য।
০৩. রোজ রোজ কলেজ পালাও কেন? – অপাদানে শূন্য।
০৪. পরীক্ষা আসিল তাই চোখে জল পড়ে। – অপাদানে ৭মী।
০৫. ট্রেন ঢাকা ছাড়ল। – অপাদানে শূন্য।
০৬. গাড়ি ঢাকা ছাড়ল। – অপাদানে শূন্য।
০৭. গাড়ি স্টেশন ছাড়ল। – অপাদানে শূন্য।
০৮. করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরে। – অপাদানে শূন্য।
০৯. হিমালয় হতে গঙ্গা প্রবাহিত। – অপাদানে ৫মী।
বিরত, রক্ষিত, ভীত:
১. আমি কি ডরাই সখী ভিখারী রাঘবে? – অপাদানে ৭মী।
২. কুকর্মে বিরত হও। – অপাদানে ৭মী।
৩. চোরের ভয়ে ঘুম আসে না। – অপাদানে ৬ষ্ঠী।
৪. তোমাকে আমার ভয় হয়। – অপাদানে ২য়া।
৫. তর্কে বিরত হওয়। – অপাদানে ৭মী।
৬. ধর্ম হতে বিচলিত হয়ো না। – অপাদানে ৫মী।
৭. পরাজয়ে ডরে না বীর। – অপাদানে ৭মী।
৮. পাপে বিরত হও। – অপাদানে ৭মী।
৯. বিপদে মোরে রক্ষা কর। – অপাদানে ৭মী।
১০. বাবাকে বড্ড ভয় পাই। – অপাদানে ২য়া।
১১. ভূতকে আবার কীসের ভয়? – অপাদানে ২য়া।
১২. যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। – অপাদানে ৬ষ্ঠী।
অধিকরণ কারক:
যে স্থানে বা যে সময়ে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন- পড়–য়ারা ক্লাসে পড়ে [‘ক্লাসে’ অধিকরণ কারক]
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ- অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথা- ক) কালাধিকরণ খ) আধারাধিকরণ গ) ভাবাধিকরণ
ক) কালাধিকরণ: ক্রিয়া সম্পাদেকর কালকে/সময়কে প্রকাশ করে। যেমন- ক) কাল সকালে এসো। খ) বসন্তে ফুল ফোটে।
খ) আধারাধিকরণ: ক্রিয়া সম্পাদনের স্থানকে প্রকাশ। যেমন- ক) পুকুরে মাছ আছে। খ) তুমি এই পথে যেয়ো।
গ) আধারাধিকরণ: যদি কোন ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য কোন ক্রিয়ার কোনরূপ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তখন তাকে ভাবাধিকরণ বলে। যেমন- ক) সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়।খ) কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।
ভাবাধিকরণ কারকে সবসময় ৭মী বিভক্তি থাকে বলে ইহাকে ভাবে ৭মী বলা হয়।
আধারাধিকরণ আবার তিন প্রকার: যথা-
ক) ঐকদেশিক-বিরাট স্থানের কোন এক অংশ জুড়ে থাকে-যেমন: আকাশে মেঘ আছে, পুকুরে মাছ আছে।
খ) অভিব্যাপক- সমস্ত স্থান জুড়ে থাকে। যেমন: তিলে তৈল আছে, ঘরে আলো আছে।
গ) বৈষয়িক- বিষয়ভিত্তিক বা বিশেষ বিষয়ে পরাদর্শি বোঝাতে। যেমন: তুষার রাজনীতিতে খুব দক্ষ। রাহাত অংকে ভালো কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বল।
বৈষয়িক অধিকরণ:
০১. শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। অধিকরণে ৭মী।
০২. পাঠে মনোযোগ দাও। অধিকরণে ৭মী।
০৩. পড়াতে তার মন বসে না। অধিকরণে ৭মী।
০৪. ত্যাগে তিনি নিরহঙ্কার। অধিকরণে ৭মী।
০৫. তাহার ধর্মে মতি আছে। অধিকরণে ৭মী।
০৬. কাজে মন দাও। অধিকরণে ৭মী।
০৭. সৌন্দর্যে কার না রুচি আছে। অধিকরণে ৭মী।
০৮. অতিবড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ। অধিকরণে ৭মী।
ভাবাধিকরণ:
১. কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়। ভাবে ৭মী।
২. আলোয় আঁধার কাটে। ভাবে ৭মী।
বিভক্তিঃ বাক্যের বিভিন্ন পদ বিশ্লেষণ করলে তার দুটি অংশ পাওয়া যায় এর একটি শব্দ অপরটি বিভক্তি। বিভক্তি বলতে সেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বোঝায় যেগুলো শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বাক্য গঠনের জন্যে পদ সৃষ্টি করে এবং ক্রিয়াপদের সাথে অন্য পদের সর্ম্পক নির্ণয় করতে সাহায্য করে। যেমন- কলমে লেখ। এখানে ‘কলম’ এর সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
বিভক্তির প্রকার ভেদঃ বিভক্তি সাত প্রকার। বিভক্তির প্রকারভেদ এবং বিভক্তি নির্ণয়ের কৌশল নিম্নের ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করা হল-
বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
প্রথমা/শূন্য | শূন্য / ‘অ’ | |
দ্বিতীয়া | কে/ রে/ এরে/ | দিগে/ দিগকে / দিগেরে/ দের/ গুলিকে/ গুলোকে/ বৃন্দকে |
তৃতীয়া | দ্বারা/ দিয়ে/কর্তৃক | দিগের দিয়া/ দের দিয়া/দিগ কর্তৃক/গুলির দ্বারা/ গুলি কর্তক/ গুলো দিয়ে |
চতুর্থী | দ্বিতীয়ার মতো এবং তরে, জন্যে | দ্বিতীয়ার মত এবং দের তরে, দের জন্য |
পঞ্চমী | হইতে/ থেকে/ চেয়ে | দিগ হইতে/ দের হইতে/ গুলির চেয়ে |
ষষ্ঠী | র/ এর/ কার/ কের | দিগের/দের/গুলির/ গণের/ বৃন্দের |
সপ্তমী | তে/ এ/ য়/ এতে/ কাছে/ মধ্যে | দিগে/ দিগেতে/ গুলিতে/ গণে/ গুলোতে |
কারকের বিভক্তি ব্যবহার:
কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
ক) প্রথমবা বা শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তির ব্যবহার – মাসুদ বই পড়ে।
খ) দ্বিতীয়া বা ‘কে’ বিভক্তির ব্যবহার- মামুনকে যেতে হবে।
গ) তৃতীয়া বা ‘দ্বারা’ বিভক্তির ব্যবহার- রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক গীতাঞ্জলি রচিত হয়েছে।
ঘ) ষষ্ঠী বিভক্তি বা ‘র’ বিভক্তির ব্যবহার- আমার যাওয়া হয়নি।
ঙ) সপ্তমী বিভক্তি বা ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার- গায়ে মানে না আপনি মোড়ল।
‘য়’ বিভক্তির ব্যবহার- ঘোড়ায় গাড়ি টানে।
‘তে’ বিভক্তির ব্যবহার- বুলবুলিতে ধান খেয়েছে।
কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার:
ক) প্রথমা / শূন্য / অ বিভক্তির ব্যবহার- আমাকে একটি কলম দাও।
খ) দ্বিতীয় বা ‘কে’ বিভক্তির ব্যবহার- তাকে যেতে বল।
‘রে’ বিভক্তির ব্যবহার- আমারে ভূতে পেয়েছে।
গ) ষষ্ঠী বা ‘র’ বিভক্তির ব্যবহার- তোমার দেখা পেলাম না।
ঘ) সপ্তমী বা ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার- বলিও কথা জনে জনে।
করণকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার:
ক) প্রথমা বা শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তির ব্যবহার- ছেলেরা বল খেলে।
খ) তৃতীয় বা ‘দ্বারা’ বিভক্তির ব্যবহার- কলম দ্বারা লেখা হয়।
‘দিয়া’ বিভক্তির ব্যবহার- মন দিয়ে পড়।
গ) সপ্তমী বা ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার- ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে।
‘তে’ বিভক্তির ব্যবহার- লোকটা জাতিতে বৈষ্ণব।
‘য়’ বিভক্তির ব্যবহার- এ সুতায় কাপড় হয় না।
সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার:
ক) চতুর্থী বা ‘কে’ বিভক্তির ব্যবহার- বস্ত্রহীনকে কাপড় দাও।
খ) সপ্তমী বা ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার- সমিতিতে চাঁদা দাও।
অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার:
ক) প্রথমা বা শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তির ব্যবহার- বোঁটা আলগা ফল গাছে থাকে না।
খ) দ্বিতীয়া বা ‘কে’ বিভক্তির ব্যবহার- ভাইয়াকে বড্ড ভয় পাই।
গ) ষষ্ঠী বা ‘এর’ বিভক্তির ব্যবহার- যেখানে বাঘের বয়, সেখানে রাত হয়।
ঘ) সপ্তমি বা ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার- লোকমুখে শুনেছি সে কথা।
‘য়’ বিভক্তির ব্যবহার- টাকায় টাকা হয়।
অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার:
ক) প্রথমা বা শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তির ব্যবহার- বাবা বাড়ি নেই।
খ) তৃতীয়া ‘বা’ দিয়ে বিভক্তির ব্যবহার- খিলিপান দিয়ে ঔষধ খাবে।
(এখানে খিলিপানের ভিতর ঔষধ দিয়ে খাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।)
গ) পঞ্চমী বা ‘থেকে’ বিভক্তির ব্যবহার- বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়।
ঘ) সপ্তমী বা ‘তে’ বিভক্তির ব্যবহার- এ বাড়িতে কেউ থাকে না।