March 22, 2023, 6:08 pm
উজানপুর গ্রামের নম্র, ভদ্র, শান্ত, শিষ্ট, বিনয়ী ছেলে রুমী। পড়াশোনাটা তার একমাত্র নেশা।পাশাপাশি ফুটবল ও। বাবা মায়ের খুব বাধ্য ছেলেও বটে।গ্রামের বড় ছোট মুরুব্বিরাসহ, স্কুলের শিক্ষকরা অবদি সবাই খুব ভালোবাসে রুমীকে।স্কুল বন্ধু-বান্ধব সহ সবার কাছে যে ফাস্টবয় হিসেবে পরিচিত মুখ।
সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষার্থী। বড়বোন সিমি, ছোট বোন মিমির আদরের একমাত্র ভাই রুমী। তিনভাই বোনের খুব মিষ্টি সম্পর্কে কাঁটছে তাদের দিন গুলো।
ফুটবল যখন তার নেশা সেই ফুটবলই জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। একদিন বিকেলে, বন্ধুদের সাথে স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে,মারাত্মক ভাবে পাঁয়ে চোট লেগে আহত হয়। পরে অনেক ডাক্তার ও দেখিয়েছেন। হাকিম বদ্যি বান যাইনি কোন কিছুই। তবে দুরন্ত হওয়ায় ওসব ও অনুভব করেনি।
ছয়মাস পর আবারও সেই ব্যাথাটা জেগে ওঠে,অসহ্য যন্ত্রনা তার পায়ে। ঢাকা মেডিকেল থেকে শেষ পর্যন্ত মাদ্রাজ নিয়ে যায়। তবে মেডিকেল বোর্ড বসানো ডাক্তারদের একটাই পরামর্শ, রুমীর পায়ে ইনজুরি থেকে ইনফেকশন হয়েছে। ওর পাঁ কেটে বাদ দিতে হবে। পা না কাটলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি,তাই দেরি হলে রুমীকে বাঁচানো যাবেনা।ওর অপারেশনে নাকি দশ লাখ টাকা মতো খরচ হবে।
পরিবারের উপর বিরাট বড় ঝড় নেমে আসে।বাবা মা ভেঙ্গে পড়ে খুব। একমাত্র ছেলে তাদের কি বা বয়স রুমীর, এইটুকু বয়সে এতো বড় ধাক্কা সামলাতে পারবে ওর,সারাজীবনের পথ ই তো পাঁড়ি দেওয়ার বাকি।
বাবা কৃষক হওয়ায় তার শেষ সম্বল একখন্ড জমি ও মায়ের গহনা বিক্রি করে রুমীর অপরেশনের ব্যবস্হা করলেন। ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। যে করে হোক,রুমীকে বাঁচাতেই হবে। সিমি মিসি নামাযে বসে মোনাজাতে চোখের পানি ছেঁড়ে ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চাইছে সৃষ্টিার্তার কাছে। বাবা মা নেমে পড়লেন জীবন যুদ্ধে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
রুমীও সবটা বুঝতে পারেন,ওর আর দু’পায়ে হাঁটা হবেনা।খেলা হবেনা তার প্রিয় খেলা ফুটবল। এস এস সি পরীক্ষা ও দেওয়া হবেনা আর। দৌড়ে দৌড়ে সারাবাড়ি সারাটাগ্রাম আর ঘোরা হবেনা। এক মাত্র ভাগ্নির কনিষ্ঠা ছুঁয়ে আর ঘুরতে যাওয়া হবেনা দুপায়ে হেঁটে। হয়তো বাকিটা জীবন এভাবেই কাটবে ওর। একমাত্র সঙ্গী হবে ক্রেস। হয়তো সৃষ্টিকর্তা এভাবেই আমার জীবনে সাজাতে চান,কিন্তু এ কেমন পরীক্ষা?
আজ রুমীর অপরেশন। রুমীর মা অনবরত চোখের পানি ফেলছেন। আজ একটা মাস তিনি ঠিকমতো খাননি,বাবাও তাই। নির্ঘুম কাটছে তাদের যাপিত দিন গুলো। ওরা মেনেই নিয়েছে এটা হয়তো বিধাতারই পরীক্ষা। রুমীকে O.T তে নিয়ে যাচ্ছে ডাক্তাররা। পরিবারের লোকজন আত্মীয় স্বজন কাঁদছে খুব। ওর মাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন। রুমীকে O.T তে নেবার আগে ওর মা কপালে চুমু দিয়ে ঝাপসা চোখে রুমীকে বিদায় দিচ্ছেন। রুমীও বেডে শুয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন,
কেঁদোনা না মা,
❝তোমার দোয়াই আমাকে তোমার কোলে ফিরিদে দিবে,তুমি দেখে নিও ❞