1. mahfujpanjeree@gmail.com : Mahfuzur-Rahman :
  2. admin@samagrabangla.com : main-admin :
  3. mahmudursir@gmail.com : samagra :

নিজ নামের পদবির ইতিহাস কতটুকু জানেন?

  • Update Time : বুধবার, মে ১৩, ২০২০

আমার “পদবি”,

যতটুকু জানি, আমার পূর্বপুরুষরা, বাংলাদেশের “শ্রীহট্টের” বাসিন্দা। এই “পদবি”র উৎপত্তি “শ্রীহট্ট” থেকে। আমি “কায়স্থ” (ব্রাম্মন নয়)। ভারতে, “মেঘালয়” রাজ্যের “শিলংয়ে”, আসাম রাজ্যের “করিমগঞ্জ”, “শিলচর”, “হাইলাকান্দি” এসব জায়গায়, এই পদবিধারী, অনেকেই আছেন।

এর বেশী কিছু ইতিহাস জানার চেষ্টা করিনি, কারণ, এই পদবি নিয়ে, আমাকে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয়, বারবারই। যখন, “শিলং” “করিমগঞ্জ” “হাইলাকান্দি”র দিকে ছিলাম, খুব ভালো ছিলাম।

This image has an empty alt attribute; its file name is main-qimg-2c83d168de7ed38f52fe6e15a3b3e43e

পেশাগত কারণে, যখন বদলী হয়ে, “কোলকাতা”য় আসলাম, শুরু হলো “উৎপাত ”। অফিসে, নানা প্রশ্ন। “কি জানি বললেন, টাইটেলটা ? পুরকায়স্থ ? ও: তাইলে মানে, আপনারা, “ফুল” ? এক্কেবারে “পুরোপুরিই কায়স্থ”, “হাফ” নয় ? “একদম ফুল”, কি ঠিক বললাম তো ?” উত্তর দিই, “ঠিক মানে, হানড্রেডে, থাউজ্যান্ড, পেয়ে গেলেন”। এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন, “আচ্ছা আপনারা কি কায়স্থ না ব্রাম্মন ? কেন বলছি, কারণ, অমুক ছিলো এক “পুরকায়স্থ”, ও বলছিলো, এই “পুরকায়স্থ”দের মাঝে নাকি, দু’রকম হয়, “কায়স্থ” এবং “ব্রাম্মন”। তো আপনি কোনটা ?” বলি, “ফুল, একদম পুরোই “কায়স্থ”। যাক, ট্রান্সফার হয়ে গেলাম, হিন্দীভাষী রাজ্যে। মন একটু খারাপ, তাও শান্তি, এই “হাফ” আর “ফুল” কায়স্হ নিয়ে “প্রশ্নবান” থেকে তো, বেঁচে গেলাম।

নতুন জায়গায় জয়েন করলাম। ওখানে আরো “মহাবিপদ”। জয়েন করেই, প্রথমেই, “হিন্দীভাষী” বড় কর্তার ঘরে। “সৌজন্য সাক্ষাত”। বললাম, “নাম” আর “পদবি”। প্রশ্ন, “ক্যায়া বাতায়া ? টাইটেল ক্যায়া বাতায়া ?” বলি, “স্যার, পুরকায়স্থ”। “থোড়া আসান করকে বাতাও”। বললাম, পু র কা য় স্থ। “স্পেলআউট করকে, বাতাও”। করলাম। “ফির সে বাতাও”। আবার ও বললাম। “এক কাম করো, জরা পর্চি মে লিখো তো”। টেবিলে রাখা, স্টাঙ স্লিপে, লিখে দিলাম। পড়ে, টেনে, টেনে উচ্চারণ করে, তারপরে বললেন, “মে তুমে “পরকাস” বাতাউঙ্গা”। কোই দীক্ষত” ? বলি, “না স্যার, কোনো অসুবিধে নেই”। ভাবি, আপনার হাতে পড়ে, আমার পদবির হাল যে এমন হবে, এ আর এমন কি ? যাঁরা ঠিকঠাক বলতে পারতেন, তাঁরাই আমাকে, “হাফ আর “ফুল” থেকে রেহাই দেন নি। সে তুলনায়, আপনি অনেক ভালো”।

ট্রান্সফার হয়ে এবার “দক্ষিণ ভারত”। “পদবি” নিয়েই তো যতো টেনশন আমার। না, ওরা খুব ভালো। ওই আসান করো, স্পেলিঙ করো, লেখালেখি করো, এসব করতেই হয়নি। একবার শুনেই, তাঁরা একটা “নিদান” দিয়ে দিলেন। পুরকায়স্থ হয়ে গেলো, “পুরুক্কা”।

যাক, এতোসব ধাক্কা খাওয়ার পরে ও, আমি আমার “পদবি”কে ভীষণই ভালোবাসি, কৃতজ্ঞতা জানাই, আমার পূর্বপুরুষদের। কেন ? কারণ, এই “পদবি”, অনেক সময়ই, আমাকে আর্থিকভাবে বাঁচিয়ে দেয়। কেমন করে ? ওই যখন, ক্লাবের ছেলেরা, দুর্গাপুজার চাঁদা চাইতে আসে, বলি, “যা চাইবে, তাই দেবো, কিনতু শর্ত আছে”। “কি শর্ত” ? “চাঁদার রসিদে, আমার পদবি, বাংলা বা ইংরেজী হোক, একদমই ঠিকঠাক লিখতে হবে। বানান ভুল হলে, চাঁদা পাওয়া যাবে, “ডিমান্ড” এর “টেন পারসেন্ট “। ” রাজী ?” “হ্যা, রাজী”। শুরু হলো, “শুদ্ধ” বানান লেখার “যুদ্ধ”। উঠে আসতে থাকে, “পুরোকাস্থ”, “পুরুকাইস্ত” , “purkasta”, porakastha (পরাকাষ্ঠা) এসবই। “তিন হাজার” টাকার রসিদ কেটে, হাত পেতে নিতে হয়, “তিনশো” টাকা, দু’হাজারে, দু’শো। আমি প্রণাম জানাই “পিতৃপুরুষদের”, উত্তরাধিকার সূত্রে, এই “আশ্চর্য প্রদীপ” আমাকে দিয়ে যাওয়ার জন্য।

তবে, ছন্দপতনও ঘটে। একবার কতোগুলো একদমই “বাচ্চা”, ক্লাস ফোর, ফাইভে পড়ে, এসে হাজির। “কাকু, আমরা বালক সংঘের”। কি চাই ? “না, ওই সরস্বতী পুজোর চাঁদা টা”। আমার সেই একই শর্ত, “পদবি” ঠিকঠাক লেখা চাই, না হলে, নাইনটি পার্সেন্ট, বাদ যাবে”। একসাথেই দু’তিনজনের উত্তর, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, কোনো ব্যাপার না, লিখে দিচ্ছি”। রসিদ লিখে, আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। “তিনশো” টাকা। “সেন্ট পারসেন্ট” টাকাই দিয়ে দিই। কারণ, একদমই নির্ভুল লিখেছে। জিজ্ঞেস করি, “কি করে ঠিকঠাক লিখে ফেললি ?” উত্তর, “ওই বাড়ীতে ঢোকার সময়, তোমার “নেমপ্লেট” দেখে, আগেই রসিদ বইয়ে লিখে রেখেছি। তোমার সামনে, একটু লেখালেখির “ভান” করলাম শুধু। কাকু, তুমি যেয়ো কিন্তু আমাদের পুজোয়, প্রসাদ খেয়ে এসো, বাই, কাক্কু”।

ধন্যবাদ ।

লিখছেন: শুভেন্দু পুরকায়স্থ

তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন

More News Of This Category