March 23, 2023, 5:45 pm
আত্নীয়দের মধ্যে বিয়ে না করাই সবচেয়ে উত্তম হবে আমার মতে। এর উদাহরণ রয়েছে আমার নিজের পরিবারের মধ্যেই। যেমন আমার নিজের চাচা তার মামাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন।তাদের একটা ছেলে রয়েছে,সে একটু এব নরমাল টাইপের।এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে দিতে পারি। তবে সবার বেলায় যে সমস্যা হবেই হবে সেটাও ঠিক না। এটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।
আত্নীয়দের মধ্যে বিবাহের ফলে শিশুদের জন্মের ত্রুটিযুক্ত শিশুদের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।শিশুদের সমস্ত জন্মগত ত্রুটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ (৩১%) থাকে।সাধারণত জন্মগত ত্রুটিযুক্ত বাচ্চাদের জন্মের ঝুঁকি – সাধারণত হার্ট বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা যা কখনও কখনও মারাত্মক হতে পারে।
বিস্তারিত ব্যাখ্যার আগে স্কুল পর্যায়ের বিজ্ঞান শিক্ষা একটু ঝালাই করে নেয়া যাক। আমাদের শরীরের মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম (আপাতত না হয় ট্রাইসোমি আর মনোসোমির কেইস তোলা থাক)। এই ক্রোমোজোমের অর্ধেক আসে মা আর বাকি অর্ধেক বাবার কাছ থেকে। যার ফলে আমাদের ডিএনএতে থাকা প্রতিটা জিনের দুইটা কপি রয়েছে- একটি এসেছে মা অপরটি বাবার থেকে।
এবার একটু জিনের ব্যাপারে বলে নেই। এ কোনো আলিফ-লায়লার জিন নয় বরং আমাদের ডিএনএতে থাকা জিন। আমাদের ডিএনএতে প্রায় ২০ হাজার জিন হচ্ছে প্রোটিন কোডিং জিন। আর এই সংখ্যাটি হচ্ছে মোট জিন সংখ্যার মাত্র এক কী দুই শতাংশ! যাই হোক, জিন মূলতঃ সবকিছুর নির্ধারক। কারো চুল কোঁকড়া হবে নাকি সোজা, কালো নাকি বাদামী রঙ- এরকম একদম সূক্ষ্ম বিষয়ও জিনের উপর নির্ভর করে। আবার সিরিয়াস ব্যাপার-স্যাপারও জিনের উপর নির্ভরশীল। এমনকি কিছু জিন মারাত্মক রোগের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। থ্যালাসেমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হিমোফিলিয়া ইত্যাদি এরকম জিনগত রোগ।
এই পর্যায় থেকে রোগের কারণ হতে পারে এমন জিনকে সহজ করে খারাপ জিন বলা হবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কাজিনদের মধ্যে বিয়ে আর জিনগত রোগের ঝুঁকির মধ্যকার একটি সম্পর্ক আছে। সেদিকে যাওয়ার আগে চলুন জানা যাক কীভাবে খারাপ জিনের কারণে জিনগত রোগ হয়।
কোনো ব্যক্তির দুই কপি জিনের মাঝে একটি যদি খারাপ জিন হয়েও থাকে তাহলেও অন্য ভালো জিনটির উপস্থিতিতে খারাপ জিনের প্রভাব তার উপর পড়ে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি শুধুমাত্র খারাপ জিনের বাহক হয়। অবশ্য যদি ব্যক্তির খারাপ জিন ভালো জিনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, তাহলে আলাদা কথা।
যাই হোক, এই খারাপ জিন বাহক খারাপ জিন নেই এমন যে কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের সন্তানরা কেউ খারাপ জিনের কারণে কোনো রোগে ভুগবে না। শুধুমাত্র খারাপ জিনের বাহক হবে। কিন্তু যদি দুইজন খারাপ জিনের বাহক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের সন্তানরা খারাপ জিনের বাহক হবে তো হবেই, এমনকি খারাপ জিনের কারণে রোগেও ভুগতে পারে।
তাই যখন কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হয়, তখন তাদের সন্তানদের মাঝে খারাপ জিনের উপস্থিতির হার অনেকাংশে বেড়ে যায়। কারণ আমরা যে জিন আমাদের বাবা-মা থেকে পেয়েছি তা কিন্তু এক পর্যায়ে আমাদের দাদা-দাদী আর নানা-নানীর হাত ধরেই এসেছে। একটি ডায়াগ্রামে খারাপ জিন কীভাবে দাদা-দাদী/নানা-নানী থেকে কাজিনদের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে তা দেখানো হল।
কাজিনদের মধ্যে বিয়ে হলে তাদের সন্তানদের জিনগত রোগের হার আপাত দৃষ্টিতে কম (১-২%) হলেও, তা অন্য যেকোন দম্পতির সন্তানের জিনগত রোগ হওয়ার সম্ভাবনার দ্বিগুণ। আরেকটি ব্যাপার মনে রাখা দরকার – এই সামাজিক প্রথা কিন্তু আজকে নতুন না। অর্থাৎ, খারাপ জিন আরো অনেক আগে থেকেই কিন্তু নীরবে বংশসূত্রে সূত্রে প্রবাহিত হয়ে আসছে আর নিজের আসল রূপ প্রকাশে অপেক্ষা শুধুমাত্র আরেকটি কপির উপস্থিতি। তাই সমস্যা যে শুধু জিনগত রোগেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়।
২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বধিরতা, দৃষ্টি ক্ষমতার ত্রুটি, মানসিক বিকারগ্রস্থতার মতো সমস্যাও বিবাহিত কাজিনদের সন্তানের মাঝে প্রকট। এক্ষেত্রে ব্রিটেনে জন্মত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের উপর করা এক গবেষণা উল্লেখ্য। দেখা গেছে, জন্মত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে ৬.১ শতাংশ শিশুর পিতামাতা কাজিন। আরো চমকপ্রদ তথ্য হলো, এই ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের মাঝে ৯৮ শতাংশই হচ্ছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।
ব্রিটেনের পাকিস্তানি অভিবাসীদের মধ্যে নিজেদের মধ্যে বিবাহপ্রথা চলে আসছে লম্বা সময় ধরে। কাজিনদের মধ্যকার বিয়ের ঝুঁকি নিয়ে কথা উঠলেই এক দল নিজেদের “জীবন থেকে নেয়া” গল্প তুলে ধরে। কারো নিজের বাবা-মা কাজিন কিন্তু দিব্যি সুস্থ জীবন যাপন করছে, কেউ হয়তো নিজের কাজিনকে বিয়ে করেই সুখের সংসার করছে- এরকম অসংখ্য উদাহরণ! আপাতদৃষ্টিতে গাণিতিক হিসেবে ঝুঁকি হয়তো বা সামান্য, কিন্তু জেনেশুনে এতটুকু ঝুঁকিই বা কেন নেবেন? বিশেষ করে যখন প্রশ্নটা আরেকটি জীবনের, অন্তত তখন জীবনসঙ্গী নিয়ে এমন একগুঁয়েমি বড়ই বেমানান। অবশ্য যদি জীবনসঙ্গীই প্রাধান্যতা পায়, সেক্ষেত্রে সন্তান না নেয়ার সিদ্ধান্তকে নির্দ্বিধায় স্বাগত জানানো যায়।